সংক্ষিপ্ত
২০১৯ সালের শেষদিকে চিনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনাভাইরাস। যা পরে অতিমারীতে পরিণত হয়। পাঁচ বছর পর সেই চিনেই ছড়িয়ে পড়েছে নতুন রোগ। যা সারা বিশ্বে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
২০১৯ সালে চিনের কুখ্যাত উহান ল্যাবরেটরি থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল কি না এখনও জানা যায়নি। অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করলেও, প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। পাঁচ বছর পর সেই চিনেই ছড়িয়ে পড়েছে নতুন রোগ। এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। এই রোগের ধরন করোনাভাইরাসের মতোই। এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, জ্বর, ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যাওয়া, গলা ব্যথার মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ঠিক করোনাভাইরাসে যে লক্ষণগুলি দেখা যাচ্ছিল, এইচএমপিভি-তেও ঠিক সেই লক্ষণগুলি দেখা যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে অনেকেরই সন্দেহ, উহান ল্যাব বা উহানের মাংসের বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনাভাইরাস। এবার নতুন রোগের উৎসস্থল চিনের অন্য এক শহর। ২০২৪ সালের এপ্রিলে ভাইরোলজি জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, করোনাভাইরাস অতিমারীর পর চিনের হেনান প্রদেশে বেড়ে গিয়েছে এইচএমপিভি। ২০২৩ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ৫ জুনের মধ্যে প্রতিদিন নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এবারের শীতকালেও চিনে একই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
এইচএমপিভি কী?
সাধারণভাবে ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি হলে যে ধরনের সমস্যা দেখা যায়, এইচএমপিভি-র ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সেটাই হচ্ছে। শুরুতে সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, নাক থেকে জল পড়া, কোনও গন্ধ না পাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তিদের শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করলে তা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস গুরুতর রোগ ডেকে আনতে পারে। শুরুতে শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিলেও, পরে রোগ বাড়তে পারে। নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর রোগ হতে পারে। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০০১ সালে প্রথমবার এইচএমপিভি-র কথা জানা যায়। নিউমোভিরিডে ধরনের রোগের অন্তর্গত এই ভাইরাস। যে ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট হয়, এটাই একই শ্রেণিভুক্ত। সাধারণত ৩ থেকে ৬ দিন এই রোগের প্রভাব থাকে। তবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে বা অন্য কোনও উপসর্গ দেখা দিলে রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে।
কীভাবে এইচএমপিভি প্রতিরোধ করা যায়?
চিকিৎসকদের মতে, এইচএমপিভি প্রতিরোধ করতে হলে সবার আগে ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে হবে। সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। হাত না ধুয়ে চোখ, নাক, মুখে হাত দেওয়া চলবে না। কোনও অসুস্থ ব্যক্তির কাছাকাছি যাওয়া চলবে না। জ্বর-সর্দি-কাশি হলে বাড়ির বাইরে যেতে হলে সবসময় মাস্ক পরে থাকতে হবে। বাড়িতে থাকলেও পরিবারের সদস্যদের ভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে কাশি বা হাঁচির সময় মাস্ক পরে থাকতে হবে। মাঝেমধ্যেই ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। এখনও পর্যন্ত এইচএমপিভি-র কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। কোনও টিকা না থাকায় নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। রোগের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা অন্য কোনও লক্ষণ দেখে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা হচ্ছে।
বারবার চিনেই কেন ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক রোগ?
গত কয়েক বছর ধরে চিন যেন অতিমারীর উৎপত্তিস্থলে পরিণত হয়েছে। গত মাসে চিনের স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে শীতকালে ছড়িয়ে পড়ে এমন কিছু রোগের উপর নজরদারি শুরু হয়। এরপরেই জানা যায়, অজানা উৎস থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে নিউমোনিয়া। এই অজানা উৎস নিয়েই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। করোনাভাইরাসেরও উৎস জানা যায়নি। নতুন রোগ ঠিক সেরকমভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে। চিন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই রোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে উদ্বেগ দূর হচ্ছে না।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন-
Coronavirus: হালকা সর্দি, কাশি, জ্বরে ভুগছেন? ফিরছে করোনা ভাইরাস! প্রত্যেকটা দেশকে সতর্ক করল হু
করোনা টিকার সার্টিফিকেট থেকে সরিয়ে দেওয়া হল মোদীর মুখ! কোভিশিল্ড বিতর্কে অস্বস্তিতে বিজেপি