সংক্ষিপ্ত
- বাচ্চা কি খুব ছটফটে, দুরন্ত আর অমনোযোগী
- এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না
- হতে পারে ওর হয়েছে এডিএইচডি হয়েছে
- সন্দেহ থাকলে একজন মনোবিদের পরামর্শ নিন
'বাপরে কি ডানপিটে ছেলে' ? সারাক্ষণ অমনোযোগী আর ছটফটে? ভয়ানক চঞ্চল? স্কুল থেকে নিত্য়দিন আসতে থাকছে ভুড়ি-ভুড়ি অভিযোগ? পরীক্ষার খাতা সাদা রেখে দিয়ে পেন-পেনসিল মুখে গুঁজে করিকাঠ গুনে যাচ্ছে কেবল? হতে পারে আপনার বাচ্চার এডিএইচডি হয়েছে। মনোবিজ্ঞানে যার পুরো নাম অ্য়াটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্য়াকটিভিটি ডিসঅর্ডার।
ছোটদের এই রোগ এখন খুবই দেখা যায়। এই সমস্য়া যাদের থাকে, তারা একটু বিচিত্ররকমের হয়। ধরুন ক্লাসরুমে শিক্ষক বা শিক্ষিকা কোনও প্রশ্ন করলেন সবার জন্য়, কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই ধরনের কোনও পড়ুয়া আগেই হাত তুলে দেবে। হয়তো-বা উত্তরও দিয়ে দেবে। কিন্তু তা ঠিক হবে না। অথচ, একটু শুনে নিয়ে ভেবে বলবে যারা, তারা কিন্তু অনেকেই সঠিক উত্তর দিতে পারবে। এরা পড়াশোনায় শুধু নয়, সব কিছুতেই দারুণ অমনোযোগী হয়। সর্বক্ষণ আকাশকুসুম ভাবতে থাকে আব দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকে। এরা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অনেক সময়ে খুব দুরন্ত হয়। এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না এরা। আর সেই সঙ্গে ভীষণ ছটফটে হয়। স্কুল থেকে প্রায়ই অভিযোগ আসে এদের নামে। প্রায়ই গার্জেন কল হয় এদের সৌজন্যে। এরা কেউ কেউ অনর্গল কথা বলে যেতে থাকে। আবার কেউ কেউ একটু লাজুক হয়। কোনও কথা বললে তা না শোনাই এদের দস্তুর। পরীক্ষা-হলে সারাক্ষণ পেন-পেনসিল ঠোঁটে গুঁজে সাদা খাতা রেখে আসা এদের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। মার্কশিটে লালদাগ কোনও নতুন বিষয়ে নয় এদের কাছে।
তবে মনে রাখবেন, যাদের এডিএইচডি হয়েছে, তাদের উপসর্গগুলোর প্রত্য়েকটাই থাকতে হবে তার যেমন কোনও মানে নেই, আবার ঠিক তেমনই এই ধরনের কয়েকটা লক্ষণ থাকলেই কাউর এডিএইচডি হয়েছে, এমনটা মনে করারও কোনও কারণ নেই।
আপনার বাচ্চার মধ্য়ে এই সমস্য়াগুলো দেখলে হতাশ না-হয়ে মনোবিদের কাছে যান। তিনিই আপনাকে বলে দিকে পারবেন এগুলো এডিএইচডি-র জন্য় হচ্ছে কিনা। বলে রাখা ভাল, খুব ছোট বয়সে কিন্তু এডিএইচডি হয়েছে কিনা তা বলা সম্ভব নয়। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর তা নির্ণয় করা যায়। যদি এডিএইচডি ধরা পড়ে, তাহলে সায়কিয়াট্রিস্ট কিছু ওষুধ দেবেন। সেক্ষেত্রে অনেক মা-বাবাই খুব ভয় পেয়ে যান। এত ছোট বয়সে ওষুধ খাওয়াতে হবে? কিন্তু জেনে রাখবেন, প্রয়োজন হবে ওষুধ খাওয়াতেই হবে। নইলে সমস্য়া থেকেই যাবে। আর ওষুধের সঙ্গে চলবে কাউনসেলিং। বেশ কয়েকবছর টানা চালিয়ে যেতে পারলে তবেই ফল পাওয়া যাবে।
মাঝপথে অনেকেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন। ভাবেন, কী আর হবে? এত ডাক্তার-কাউনসেলিং, কই ফল তো কিছু পাচ্ছি না তো। কিন্তু এই কাজটি ভুলেও করবেন না। কোনও জাদুকাঠি দিয়ে এর দ্রুত সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই সময় একটু লাগবেই। মনে রাখবেন, ঠিক সময়ে ট্রিটমেন্ট না-করালে এডিএইচডি পরবর্তীকালে কনডাক্ট ডিসঅর্ডারের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, তখন আর স্কুল থেকে নালিশ নয়। একেবারে মারপিট, মাদকাসক্ত হয়ে পড়া, কোনও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটবে। তাই ছোটবেলাতেই এডিএইচডিকে নিয়ন্ত্রণে আনুন। ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যান। যদি একান্তই দেখেন, চিকিৎসায় সেরকম কাজ হচ্ছে না বেশ কিছুদিন হয়ে যাওয়ার পরেও, তাহলে অন্য় কোনও সায়কিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে পারেন। সেকেন্ড ওপিনিয়ন নিতে পারেন। কিন্তু ট্রিটমেন্ট বন্ধ করে দেবেন না ভুলেও।