আমিষ বনাম নিরামিষের যুদ্ধ অনেকদিনের কলকাতায়  আমিষাশীর সংখ্য়া সবচেয়ে বেশি কারণ বোধহয় এখানে এতরকম মাছ পাওয়া যায় শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে আমিষ এখনও সস্তা

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য় সমীক্ষার এক পরিসংখ্য়ান চোখে পড়ল কিছুদিন আগেসেখানে দেখছিলাম, দেশের কোন শহরের কত মানুষ নিরামিষাশীতালিকায় প্রথমেই দেখলাম ইনদোরের নামমধ্য়েপ্রদেশের এই শহরে প্রায় অর্ধেক মানুষই, মানে ৪৯ শতাংশই নিরামিষ আহার করেন এরপরেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশের মেরঠের নাম সেখানে ৩৬ শতাংশ মানুষ নিরামিষ খান এরপর রয়েছে দেশের রাজধানী দিল্লি সেখানে ২২ শতাংশ মানুষ নিরামিষ খানতালিকার একেবারে তলায় রয়েছে আমাদের কলকাতা সেখানে মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ নিরামিষ আহার করেন

তাহলে তো বলতে হয় বাঙালিদের মধ্য়ে এই ভেগানিজমের বাজারেও নিরামিষাশীর সংখ্য়া কমআর তা হবে না-ই বা কেনআসলে বাংলায় যে রুপোলি শস্য় ইলিশ পাওয়া যায় একবার ভাবুন তো সেই ইলিশের স্বাদ আস্বাদন না-করে কোন দুঃখে বাঙালি নিরমিষাশী হতে যাবেআর শুধু ইলিশই তো নয়, মৌরলা, পুঁটি থেকে শুরু করে ট্য়াংরা, তোপসে, ত্য়ালাপিয়া, কত মাছশুধু তাই নয়আমাদের এখানে আগে বিধবা মহিলারা মাছ খেতেন না কিন্তু গত দশ-বিশ বছর ধরে সেই রেওয়াজ ভাঙতে শুরু করেছে কারণ মাছ হল সহজপাচ্য় প্রোটিন তাই সংস্কারের বেড়া ভেঙে অনেকেই এখন মাছ খাচ্ছেন এছাড়াও আর একটা কারণ রয়েছে বলা হয়, যাঁরা নিরামিষ আহার করেন, তাঁদের শরীরে আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে হয় নানাভাবেযেমন একরকম ডালের বদলে পাঁচরকম ডালযা হজম করা সহজ হয় না অনেক ক্ষেত্রেই সেইসঙ্গে নিরামিষাশীরা দুধ-ঘি বা দুগ্ধজাত খাবার একটু বেশি খেয়ে শরীরে আমিষের ঘাটতি পূরণ করেনকিন্তু অনেকের পেটেই কিন্তু এই দুধ-ঘি সহ্য় হয় না(বেশি ফলমূল খেলেও আবার অম্বল হয়)। আজকাল তাই ডাক্তাররা অনেকক্ষেত্রে অবাঙালিদের দুধের খাবার বাদ দিয়ে মাছ-ভাত খেতে বলেন তাতে করে গ্য়াস্ট্রিকের সমস্য়াও হয় নাঅন্য়দিকে শরীরে ঠিকমতো প্রোটিনও যায়

আর একটা জিনিস লক্ষ করা যায়অগ্নিমূল্য়ের বাজারে অনেক সময়েই তরিতরকারি ডাল-সবজি বেশি করে জোটানো সম্ভব হয় নাপেঁয়াজ থেকে বেগুন, মাঝেমধ্য়েই একশোটাকা কেজি ছাড়িয়ে যায় সেক্ষেত্রে দেড়শো টাকা কেজি দিয়ে মুরগির মাংস কিনে আনলে মধ্য়বিত্ত পরিবারে আয় দেয়মধ্য়বিত্ত শহর কলকাতার বাঙালিদের আমিষাশী হওয়ার পিছনে এটাও একটা বড় কারণ বলেই মনে হয়

আসল কথা হল, আমিষ ছেড়ে নিরামিষ কেউ ধরতেই পারেন কিন্তু তাতে করে যে ধরনের খাবারদাবার খেতে হবে, তা না পেটে সয় বাঙালির, না পকেটে সয় তাই সেক্ষেত্রে শরীরে পুষ্টি জোগাতে আমিষ আহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হয়ে দাঁড়ায়