সংক্ষিপ্ত

মদ্যপান হৃদরোগের ঝুঁকি ভীষণ ভাবে বাড়িয়ে দেয়! কী বলছে গবেষণা? জেনে নিন

মদ্যপান আপনার হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। কোনও কারণেই ডাক্তার আপনাকে মদ্যপান করতে বলবেন না। মদ্যপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর, এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কিছু হতে পারে না। যারা মদ্যপান করেন, তাদের পরিমিত পরিমাণে পান করা উচিত। পুরুষদের ক্ষেত্রে দুই পেগের বেশি পান করা উচিত নয়। এক পেগ মানে ৩০ মিলিলিটার। মহিলাদের ক্ষেত্রে এক পেগেই থেমে যাওয়া উচিত। এই সীমা অতিক্রম করলে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি হতে পারে। 

যারা মদ্যপান করেন না, তারা হঠাৎ মদ্যপান করলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে?  

যারা মদ্যপানে অভ্যস্ত নন, তারা হঠাৎ করে মদ্যপান করলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। ২০০ জন মদ্যপায়ীর উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম পরিমাণে মদ্যপান করেছিলেন, তাদের হৃদস্পন্দন দুই দিনের বেশি সময় ধরে অনিয়মিত ছিল। হৃদস্পন্দনের এই অনিয়মিততার ফলে হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক তরঙ্গের ব্যঘাত ঘটতে পারে, যার ফলে হৃদযন্ত্র হঠাৎ করে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। একে বলা হয় হঠাৎ হৃদযন্ত্র বন্ধ হওয়া (SCA)। 

মদ্যপান এবং হৃদরোগ: 

  • আমরা যে অ্যালকোহল পান করি তা বিষাক্ত। মদ্যপান হৃৎপিণ্ডের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়। আমাদের শরীরের অপরিশোধিত রক্ত পরিশোধন করে বিশুদ্ধ রক্ত সরবরাহ করার ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মদ্যপান এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। 
  • হৃদযন্ত্রের ভেন্ট্রিকেল প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ টি সংকেত প্রেরণ করে। মদ্যপান করলে এই সংখ্যা প্রতি মিনিটে ১৪০ থেকে ১৬০ তে পরিণত হয়। এই ভারসাম্যহীনতা রক্ত জমাট বাঁধতে এবং থক্কা তৈরি করতে পারে। এই থক্কা যদি রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়, তাহলে স্ট্রোক হতে পারে। 
  • শরীরের চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনযুক্ত রক্তের প্রয়োজন। মদ্যপান করলে হৃদযন্ত্র সেই পরিমাণ রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিওর হতে পারে। একসাথে অনেক অ্যালকোহল পান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এটি এড়িয়ে চলুন।   

লক্ষণ: 

মাথাব্যথা, ক্লান্তি, শরীর ফুলে যাওয়া, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়, উদ্বেগ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই মদ্যপান কমানো উচিত। একদিনে অতিরিক্ত মদ্যপান না করে, পরিমিত পরিমাণে পান করলে শরীরের বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো যায়। 

কী করা উচিত? কী করা উচিত নয়?  

  • যাদের ইতিমধ্যেই হৃদরোগ আছে, তাদের মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে একদিনে অতিরিক্ত মদ্যপান করা উচিত নয়। 
  • সুস্থ ব্যক্তিরা পরিমিত পরিমাণে মদ্যপান করতে পারেন। মদ্যপানের সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারেন। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। খালি পেটে মদ্যপান করা উচিত নয়। ভাজা-পোড়া খাবারের পরিবর্তে সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। 
  • রাত জেগে মদ্যপান করে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে পরের দিন সকালে জিমে যাওয়া উচিত নয়। বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। 
  • রাত জেগে অতিরিক্ত মদ্যপান করলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। এরপর বিশ্রাম না নিয়ে ব্যায়াম করা বা কাজে যাওয়া হৃদযন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। এটি হার্ট ফেইলিওরের একটি কারণ। তাই অতিরিক্ত মদ্যপানের পর বিশ্রাম নিন। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য যথাসম্ভব মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।