সংক্ষিপ্ত

  • লকডাউনে শহরের দূষণমাত্রা চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছে
  • লকডাউনে তা বদলে গিয়েছে বড় শহরের পরিবেশ
  • দিল্লীতে  নীল আকাশ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে
  • দেশের ৯২টি শহরের দূষণমাত্রা চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছে

করোনার সংক্রমণ রুখতে লকডাউন, তার জেরে দূষণের মাত্রা কি কমল। বন্ধ ছিল বাজার-হাট থেকে অফিস-আদালত,  বন্ধ ছিল কল-কারখানা এবং অধিকাংশ যানবাহন। এই সময় করোনায় আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়লেও এমন ভয়াবহ সময়ে দেশের প্রতিটি বড় শহরের দূষণমাত্রা চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছে। ফলে দেখা গিয়েছে নানা রকম পাখি এবং কীটপতঙ্গ। সাধারণ সময়ে শহরাঞ্চলে যার দেখা মেলে না। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, রাজধানী দিল্লির বাতাসের গুণগত মান ভাল বলা যায়। গত কয়েক বছরের মধ্যে যা কল্পনা করা যায়নি। পাঁচ মাস আগেও দিল্লির বাতাসের গুণগত মান ছিল ভয়াবহ। যে মানদণ্ডে ফেলে বায়ু দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তাতে বলা হয়েছিল, দিল্লির বাতাসের মান সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে ফেলতে পারে। শেষ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে রীতিমতো মাস্ক পড়ে রাস্তায় নামার কথা বলেছিলেন চিকিৎসকরা। লকডাউনে তা বদলে গিয়েছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, বায়ু দূষণের নিরিখে বিশ্বের সব চেয়ে দূষিত শহরগুলির অন্যতম দিল্লি। সেখানে এখন নীল আকাশ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রাতে চোখে পড়ছে রাশি রাশি তারা। যাঁরা আগে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য পাহাড়ে ছুটতেন, তাঁরা রাজধানীতে বসেই সেই আবহাওয়ার স্বাদ পাচ্ছেন। শুধু রাজধানী নয়, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হিসেব বলছে, দেশের ৯২টি শহরের দূষণমাত্রা চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি শহরের বাতাসের মান ভাল আর ৫১টি শহরের বায়ুর মান সন্তোষজনক।

"
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বক্তব্য অনুযায়ী, যে কারণে লকডাউন, তার ফলে জীবনযাত্রা ব্যাহত তী হয়েইছে, তা মোটেই সুখের কথা নয়। ফলে যে কারণে দূষণের মাত্রা কমেছে, তাকে মোটেই স্বাগত জানানো যায় না। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিল, চাইলে দূষণ রোধ করা যায়। পরিবেশবিদরা বলছেন, লকডাউনের ফলে অর্থনীতির ভরাডুবি চলছে। করোনা ভাইরাসে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে আমরা বুঝতে পারছি, চেষ্টা করলে দূষণের মাত্রা কমানো যায়। সারা বছর ধরে দূষণের কথা ভাবলে আজ হয়ত এই লকডাউনের মুখোমুখি হতে হত না। পরিবেশবিদদের একটি বড় অংশের দাবি,  দূষণ নিয়ে বহু আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত উন্নয়নের সামনে বহু প্রস্তাবই মুখ থুবরে পড়ে। কাজের কাজ হয় না। প্রকৃতি বুঝিয়ে দিল, এ বারেও ঘুম না ভাঙলে সামনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। 

এ বছর মুম্বইতে অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি পরিযায়ী ফ্লেমিঙ্গোর দেখা পাওয়া গেছে৷ প্রজননের জন্য হাজার হাজার ফ্লেমিঙ্গো আসায় ভারতের মুম্বইয়ের খাঁড়িগুলোতে এবার বিশ্বের অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল৷ ১৯৮০-র দশকে প্রথম মুম্বইতে ফ্লেমিঙ্গোরা আসা শুরু করে৷ এ বছরের শুরুতে তাদের সংখ্যা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি ছিল৷ থানের জলাভূমিতে ইচ্ছেমতো আনন্দ করতে পেরেছে ফ্লেমিঙ্গোরা৷ খাবার হিসেবে ক্রাস্টেইশন নামের কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী, জলজ উদ্ভিদ আর নীল-সবুজ অ্যালজির টানে প্রতিবছর দক্ষিণ ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্লেমিঙ্গোরা মুম্বইতে আসে৷

ভাবনা ছিল একটা সময় আসবে যখন দূষণই ফ্লেমিঙ্গোদের আবাস ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠবে৷ কিন্তু লকডাউনের কারণে মানুষের আনাগোনা না থাকায় পাখিরা তাদের আবাসে নিজের মতো করে থাকতে পেরেছে৷ তবে করোনাকালে দূষণের নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে প্লাস্টিক। এই সময়ে সুরক্ষা উপকরণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস, গগলস, গাউন- সবই প্লাস্টিকের তৈরি। বিপুল হারে ব্যবহারের পর এই প্লাস্টিকগুলির জায়গা হয়েছে  মাটিতে আর জলে। ক্ষতির মুখে পড়ছে মাছ, পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী। 

ভাইরাস ছড়ানো বন্ধে এই উপকরণগুলোর ব্যবহার কার্যকর হলেও মাস্ক, গ্লাভসের মতো হালকা উপকরণগুলো খুব সহজেই বাতাসে উড়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে পড়ে। আর এতে খুব সহজেই সেগুলো নদী বা সমুদ্রের জলে গিয়ে জমছে। পাখি বা সামুদ্রিক মাছ খাবারের সন্ধানে এগুলো মুখে নেওয়ার কারণে তাদের শারীরিক ক্ষতি এমনকি মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বিশ্বজুড়ে এই মুহূর্তে প্রতি মাসে ১২৯ বিলিয়ন ফেস মাস্ক এবং ৬৫ বিলিয়ন গ্লাভস ব্যবহার করা হচ্ছে। জলের নীচে এই সবের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। দিন দিন এগুলি সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ; একটা মাস্ক বা গ্লাভস একটি তিমি মাছকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে।