- Home
- Lifestyle
- Relationship
- বিবাহে পুরুষের বয়স কেন মেয়েদের থেকে বেশি হওয়া উচিত? জানুন উল্টো হলে কী হয়
বিবাহে পুরুষের বয়স কেন মেয়েদের থেকে বেশি হওয়া উচিত? জানুন উল্টো হলে কী হয়
- FB
- TW
- Linkdin
বিবাহে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বয়স বেশি হওয়া উচিত?
বিবাহে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বয়স বেশি হওয়া উচিত - এই অলিখিত নিয়মটি রয়েছে। ভারতে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার বয়স একই। কিন্তু কেন বিবাহে ছেলেদের এবং মেয়েদের বয়সের পার্থক্য রয়েছে? বিবাহে এই বয়সের পার্থক্য কেন সবসময় বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে?
ফুলমণি দাসির মৃত্যু
বিশেষ করে বাল্য বিবাহ প্রথা বন্ধ করার জন্য, আইনত বিবাহের বয়স ঘোষণা করা উচিত কিনা তা নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। ফুলমণি দাসীর মৃত্যুর পর তা আরও জোরাল হয়েছিল। ১১ বছর বয়সী ফুলমণি দাসীকে তার ৩৫ বছর বয়সী স্বামী ধর্ষণ করলে তার মৃত্যু হয়। হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলেও, ফুলমণি দাসীর স্বামী ধর্ষণের মামলা থেকে মুক্তি পান।
বাল্য বিবাহ আইন
শিশু বিবাহের ফলে মেয়েদের মৃত্যু রোধ করার জন্য, ১৮৯১ সালে ব্রিটিশ সরকার বিবাহের বয়স সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন করে। এর ফলে, শারীরিক সম্পর্কের জন্য ন্যূনতম বয়স ১২ বছর নির্ধারণ করা হয়। তখন এই আইনকে কিছু সমাজ সংস্কারক সমর্থন করেছিলেন।
আইন সংশোধন
তবুও শিশু বিবাহ বন্ধ হয়নি। ১৯২৭ সালে ছেলেদের কমপক্ষে ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর বিয়ে করার এবং মেয়েদের বিবাহের বয়স ১৪ বছর করার প্রস্তাব করা হয়। ১৯২৯ সালে এই আইনটি শারদা আইন নামে পরিচিতি পায়। ১৯৭৮ সালে এই শারদা আইন সংশোধন করা হয়।
১৮৯৪ সালের আইন
১৮৯৪ সালে মহীশূর রাজ্যে ৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯১৪ সালে ছেলেদের বিবাহের বয়স ১৪ বছর এবং মেয়েদের বিবাহের বয়স ১২ বছর নির্ধারণ করা হয়।
নতুন আইন
এরপর ছেলেদের বিবাহের বয়স ২১ বছর এবং মেয়েদের বিবাহের বয়স ১৮ বছর করা হয়। কিন্তু এই বয়সের আগে বিয়ে করা চলতেই থাকে। ২০০৬ সালে নতুন করে শিশু বিবাহ প্রতিরোধ আইন আনা হয়, যা শিশু বিবাহকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক তহবিলের মতে, বিশ্বব্যাপী যত শিশু বিবাহ হয় তার এক তৃতীয়াংশই ভারতে হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ সহ বেশ কিছু রাজ্যে শিশু বিবাহ বেশি হয়ে থাকে।
ঠিক আছে, ছেলে, মেয়ের বিবাহের বয়সে কেন পার্থক্য?
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ছেলে এবং মেয়ের বিবাহের বয়সে পার্থক্য রাখার বিষয়টি স্থান পায়। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বয়স বেশি হওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করা হয়। শিশু বিবাহ প্রতিরোধ আইন, পারসি বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, হিন্দু বিবাহ আইন, মুসলিম বিবাহ আইন - সব আইনেই বিয়ের ন্যূনতম বয়স ছেলেদের জন্য ২১ বছর এবং মেয়েদের জন্য ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
আইনি বাধা নেই
তবে স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য নিয়ে আইনগতভাবে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ দম্পতি সবক্ষেত্রেই সমান। কিছু মানুষের মধ্যে এই মানসিকতা তৈরি হলেও, বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই তা এখনও তৈরি হয়নি। বিবাহের বয়সের পার্থক্য হলো বৈষম্য। আইন করে এর অবসান ঘটাতে হবে।
ভারতে ২০২৩ সালে বিবাহের আইনগত বয়স সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। মেয়েদের বিবাহের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার সুপারিশ করা হয়। তবে, এখনও পর্যন্ত সংসদে এই সংশোধনী পাস হয়নি।
বাধ্য স্ত্রী চাই!
বিবাহের বয়স নির্ধারণে ধর্ম যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বয়স কম হওয়া উচিত - এর পিছনেও কিছু কারণ রয়েছে। নিজের থেকে বয়সে বড় মেয়েকে বিয়ে করলে, স্ত্রী হয়তো স্বামীর কথা শুনতে চাইবেন না।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিয়ম
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যতই সমতা নিয়ে কথা বলুক না কেন, মেয়েদের সমতার প্রশ্ন উঠলেই তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। নিজেদের থেকে বয়সে ছোট মেয়েদের বিয়ে করতে চান পুরুষরা। কারণ তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। মেয়েদেরকে তাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ভীতু এবং দুর্বল ব্যক্তিত্বের অধিকারী করে তোলা, পুরুষদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুযায়ী তাদের গড়ে তোলা - এটাই তাদের উদ্দেশ্য। এর ফলে মেয়েরা মনে করে যে, নিজেদের ইচ্ছা দমন করে অন্যের ইচ্ছা পূরণ করাই ভালো মেয়ের পরিচয়। সব মিলিয়ে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই ছেলেদের তুলনায় তাদের বিবাহের বয়স কম রাখা হয়।