Relationships Tips: সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘনঘন ছবি পোস্ট বা ভিডিও পোস্ট জরুরী নয়। বাস্তব জীবনে সুখী থাকাটাই মূল উদ্দেশ্য।
Relationships Tips: আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়া মানেই প্রতিদিনের খুঁটিনাটি জীবনের খতিয়ান। সকালের কফি থেকে রাতের ভ্রমণ—সবই চলে আসে টাইমলাইনে। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যায়, অনেক দম্পতি আছেন যাঁদের সম্পর্কে শান্তি ও গভীরতা থাকলেও তাঁরা নেটদুনিয়ায় প্রায় অদৃশ্য। তাঁদের একসঙ্গে কাটানো সময়ের খুব কম ছবি প্রকাশ্যে আসে। প্রশ্ন উঠতেই পারে—তাঁরা কি কম সুখী? নাকি এটাই সুখের আসল পরিচয়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তরটা দ্বিতীয়টাই।
সম্পর্কের টানাপোড়েন বা অস্থিরতা ঢাকতে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেন
যাঁরা সম্পর্কে নিরাপদ, তাঁদের আলাদা করে প্রমাণ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তাঁরা একান্ত মুহূর্তে এতটাই ডুবে থাকেন যে ছবি তোলা বা লাইক–কমেন্টের হিসেব রাখার দরকারই হয় না। অন্যদিকে, সম্পর্কের টানাপোড়েন বা অস্থিরতা ঢাকতে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেন ‘হ্যাপি মোমেন্ট’ প্রচারের জন্য। কিন্তু এই অতিরিক্ত প্রকাশ অনিচ্ছাকৃতভাবে চাপ তৈরি করে, যা সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

মনোবিদদের মতে, বারবার ছবি শেয়ার করার অভ্যাস প্রায়শই বাহ্যিক স্বীকৃতির তৃষ্ণা থেকে আসে। সম্পর্কের ভেতরে যদি নিরাপত্তাহীনতা থাকে, তখন মানুষ বাইরের দুনিয়াকে প্রমাণ দিতে চায়—‘আমরা ভালো আছি’। অথচ যারা ভেতরে ভরসা খুঁজে পেয়েছেন, তাঁদের কোনও স্বীকৃতি দরকার হয় না। তাঁরা রেস্তরাঁয় খাওয়ার সময় ফোন ক্যামেরার বদলে সঙ্গীর চোখের দিকেই তাকান। এছাড়া লাইক–কমেন্টের সংস্কৃতি সম্পর্কের অজান্তে চাপও বাড়ায়। ছবিতে প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া না পেলে মন খারাপ হয়, যা সঙ্গীর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এই চাপ সম্পর্কে বিরোধও ডেকে আনে।
নিজেদের ব্যক্তিগত মুহূর্তকে প্রায় সর্বজনীন করে তুলেছে
একটি আন্তর্জাতিক ডেটিং প্ল্যাটফর্মের প্রধানের মতে, বর্তমান প্রজন্ম নিজেদের ব্যক্তিগত মুহূর্তকে প্রায় সর্বজনীন করে তুলেছে। দশজনের মধ্যে অন্তত আটজন তাঁদের প্রতিদিনের জীবন যাত্রা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করতে অভ্যস্ত। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ বলছে—এমন প্রবণতা সম্পর্কের স্থায়িত্বকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। তাই যাঁরা সত্যিই দীর্ঘমেয়াদি সুখ চান, তাঁদের উচিত অন্তরঙ্গ সময়কে প্রকাশ্যে আনার প্রয়োজন বোধ না করা।
মনোবিদরাও একই মত পোষণ করেন। তাঁদের মতে, যখন দাম্পত্যে বা সম্পর্কে প্রকৃত আনন্দ বিরাজ করে, তখন যুগলরা মুহূর্তে ডুবে থাকেন— সেই সময় ক্যামেরা ধরা বা পোস্ট করার চিন্তাই থাকে না। অপরদিকে, যারা প্রতিটি ছবি নেটদুনিয়ায় শেয়ার করেন, তাঁরা প্রায়শই প্রতিক্রিয়া ও লাইক গোনার চাপে ভোগেন। সেই চাপ ধীরে ধীরে মানসিক অস্বস্তি তৈরি করে, যা সম্পর্কে দূরত্ব ডেকে আনে।

অতএব, বিশেষজ্ঞদের বার্তা স্পষ্ট—ভালোবাসা প্রমাণ করতে গেলে তা প্রকাশ্যে আনার দরকার নেই। বরং নীরবতাই অনেক সময় সম্পর্কে সুখের আসল চিহ্ন।
তবে এর মানে এই নয় যে ছবি শেয়ার করলেই সম্পর্ক নষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমিত মাত্রায় মুহূর্ত ভাগ করে নেওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সেটি যেন আনন্দ প্রকাশের জন্য হয়, সুখ প্রমাণের জন্য নয়। আর কোনও পোস্ট করার আগে অবশ্যই সঙ্গীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
অতএব, আসল সুখের মাপকাঠি নেটদুনিয়ার টাইমলাইন নয়। সম্পর্ক টেকে পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান ও নীরব বোঝাপড়ার ওপর। ছবির অ্যালবাম নয়, স্মৃতির ভাণ্ডারই বলবে কোন সম্পর্ক সত্যিই সুখী।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।


