সংক্ষিপ্ত

  • ইতিহাসে যেমন পরিবর্তন ঘটে তেমনই আসে পুনরাবৃত্তি 
  • ৫০ বছর আগের ক্যালেন্ডারে ১ জানুয়ারি ছিল শুক্রবার 
  • অন্যদিকে নতুন বছরের প্রথম দিনটিও পড়েছে শুক্রবার  
  • ১০০ বছরে হুবহু এক ক্যালেন্ডারের মিলপাওয়া যাচ্ছে ১১ বার 
     

তপন মল্লিকঃ- ইতিহাসে যেমন পরিবর্তন ঘটে তেমনই আসে পুনরাবৃত্তি। ইতিহাসে এমন দুইয়ের একাধিক উদহারণ আছে। কিন্তু পঞ্চাশ বছর আগে পরের দুটি ক্যালেন্ডারে হুবহু মিলের ঘটনা বড় একটা ইতিপূর্বে ঘটেছে বলে স্মরণে আসে না। আর আটচল্লিশ ঘন্টা পরেই শেষ হয়ে যাবে ২০২০-র ক্যালেন্ডার, তার জায়গা দখল করে নেবে ২০২১। কিন্তু তার আগেই হাতে এসে গিয়েছে নতুন বছর ২০২১ সালের ক্যালেন্ডার। সেখানে দেখা যাচ্ছে নতুন বছরের ক্যালেন্ডারের সঙ্গে ১৯৭১ সালের ক্যালেন্ডারের আশ্চর্য মিল। যে মিল প্রতিটি বারে, প্রতিটি তারিখে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, হুবহু এক। সামাজিক মাধ্যমে এই নিয়ে অনেকেই ঝড় তুলেছেন। অনেকেই সেই আশ্চর্য মিলের ছবি দিয়েছেন ও লিখেছেন।


৫০ বছর আগের ক্যালেন্ডারে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি ছিল শুক্রবার। অন্যদিকে নতুন বছরের প্রথম দিনটিও পড়েছে শুক্রবার। শুধু কই তাই, দুটি বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর ছিল শুক্রবার আর যে বছরটি শুরু হতে চলেছে সেই ২০২১ সালের শেষের দিনিটিও পড়েছে শুক্রবার। এখানেই শেষ নয়, দুটি বছরের প্রতিটি দিনের তারিখ ও বারের মধ্যেও রয়েছে মিল।

দেখা যাচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যে বার ছিল,  নতুন বছরের ২৬ মার্চও সেই একই বার। স্বভাবতই এই প্রশ্ন এসে যায়, তবে কি প্রতি ৫০ বছরে একবার করে ক্যালেন্ডারে বার-তারিখ এরকম হুবুহু মিলে যায়? না  তা একেবারেই নয়,  কেননা ১৯৭১ ও ২০২১ সালের মধ্যে অর্থাৎ ৫০ বছরে ১৯৮২, ১৯৯৩, ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে- মোট চার বছরে তারিখ মিলতে দেখা গিয়েছে। কেবল তাই নয় ১৯৭১ সালের আগে ১৯০৯, ১৯১৫, ১৯২৬, ১৯৩৭, ১৯৪৩, ১৯৫৪, ১৯৬৫ সালেও এই ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ২০২৭ সালের ক্যালেন্ডারেও এই ঘটনার দেখা মিলবে। ২০২৭-এ গিয়ে থেমে থাকবে না। চলবে ২০৭১ পর্যন্ত,  এই সময়ের মধ্যে ঘটবে আরও পাঁচবার। ২০২৭, ২০৩৮, ২০৪৯, ২০৫৫ ও ২০৬৬ সালের বছরগুলিতে। অর্থাৎ ১৯৭১ থেকে ২০৭১—এই ১০০ বছরে হুবহু এক ক্যালেন্ডার মিলের পাওয়া যাচ্ছে মোট ১১ বার।

তবে এমন যে হয়েছে বা আগামীতে ও হবে তার জন্য গাণিতিক যুক্তি রয়েছে। দুটি পৃথক বছরের দিন বা বারের মধ্যে এ ধরণের মিল থাকলে তাকে বলা হয় আইডেন্টিক্যাল ক্যালেন্ডার ইয়ারস বা যমজ দিনপঞ্জির বছর। শুধু নির্দিষ্ট কোনো বছর নয়, যে কোনো বছরের জন্য এমন অনেক যমজ বছর সম্ভব। আর সেটা হয় স্রেফ গাণিতিক নিয়মেই।
আরেকভাবে বলা যায়,  গ্রেগরীয় বা খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জির যে কোনও বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জানুয়ারি সপ্তাহের নির্দিষ্ট সাতটি দিনের; রবি থেকে শনির একটি হবে, তেমনই বছরটি ৩৬৫ দিনের হলে হবে সাধারণ বছর আর ৩৬৬ দিনের হলে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ।

সাধারণ বছর সাতটি দিনের একেক দিনে শুরু হলেও সেখানে সাতটি সম্ভাব্য দিনপঞ্জি পাওয়া যাবে। আবার অধিবর্ষ হলে একইভাবে আরও সাতটি সম্ভাব্য দিনপঞ্জি পাওয়া যাবে। এই ভাবে দু’ধরনের বছরে মোট ১৪টি সম্ভাব্য দিনপঞ্জি আছে। যে কোনও বছরের দিনপঞ্জি এই ১৪টি দিনপঞ্জির যে কোনও একটির সঙ্গে হুবহু মিলে যাবে।
এবার প্রশ্ন কত বছর অন্তর যমজ বছর পাওয়া যাবে? উত্তর মোটেও সহজ নয়। কারণ, সাধারণ বছরে থাকে ৫২ সপ্তাহ ও ১ দিন আর অধিবর্ষে ৫২ সপ্তাহ ও ২ দিন মানে ৩৬৬ দিন। ফলে কোনও বছরের প্রথম দিনটি অন্য কোনও বছরের শুরুর দিনের সঙ্গে মিলে গেলে প্রথমে দেখতে হবে দুটি বছরের কোনওটি অধিবর্ষ কিনা। যদি দেখা যায় দুটি বছরের একটি সাধারণ ও অন্যটি অধিবর্ষ তাহলে তারা কখনও যমজ বছর হবে না। যদি দুটি বছরই সাধারণ বছর হয়,  তাহলে তারা যমজ বছর হবে। আবার দুটি বছরি যদি অধিবর্ষ হয়, তখনো তারা যমজ বছর হবে।

যেমন ১৯৭১ সাল ছিল সাধারণ বছর; ৩৬৫ দিনের। ১৯০৮, থেকে ২০০০ সাল এর মধ্যে ১৯০৮, ১৯৩৬, ১৯৬৪, ১৯৯২সাল ছিল যমজ বছর। এবং আগামী ২০৪৮ ও ২০৭৬ যমজ বছর। বিদায়ী বছর ২০২০ সাল অধিবর্ষ। গাণিতিক হিসাবে দেখা গেছে, দুটো যমজ বছর পেতে কম পক্ষে ৬ থেকে ৪০ বছর অপেক্ষা করতে হয়। কারণ, দুটি যমজ বছরের মধ্যে দিনের ফারাক হতে পারে ২ হাজার ১৯১ দিন বা ৬ বছর), ৪ হাজার ১৮ দিন বা ১১ বছর, ৪ হাজার ৩৮২ দিন বা ১২ বছর, ১০ হাজার ২২৭ দিন বা ২৮ বছর এবং ১৪ হাজার ৬০৯ দিন অর্থাৎ ৪০ বছর। যেমন ২০২১ সালের আগের যমজ বছরটি ছিল ১১ বছর আগে এবং পরের যমজ বছরটি আসবে ৬ বছর পরে, ২০২৭ সালে। এই গাণিতিক নিয়মেই ২০২১ সাল আর ১৯৭১ সালের ক্যালেন্ডারের হুবহু মিল।