বাংলার সবচেয়ে রহস্যময় রেলওয়ে স্টেশন, ভাইরাল হওয়ার কারণ জানলে অবাক হবেন
বাংলার নামহীন রেলওয়ে স্টেশন: আপনি কি বিশ্বাস করবেন যে বাংলায় এমন একটি রেল স্টেশনও আছে যার কোনো নামই নেই? হ্যাঁ, এমন একটি স্টেশন আছে, যেখানে প্ল্যাটফর্মের সামনে লাগানো হলুদ বোর্ডটি আজও খালি।

ভারতের প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনের নিজস্ব ইতিহাস এবং বিশেষত্ব রয়েছে। কিন্তু আপনি কি বিশ্বাস করবেন যে দেশে এমন একটি রেলওয়ে স্টেশনও আছে যার কোনো নামই নেই? হ্যাঁ, ভারতে এমন একটি স্টেশন আছে, যেখানে প্ল্যাটফর্মের সামনের হলুদ বোর্ডটি আজও খালি।
এই রেলওয়ে স্টেশনটি বর্ধমান জেলায় অবস্থিত। স্টেশনটি বাঁকুড়া-মশাগ্রাম রেল লাইনে রায়না এবং রায়নাগড় গ্রামের মধ্যে পড়ে। এখানে ট্রেন থামে এবং যাত্রীরা ওঠানামাও করে, কিন্তু আজ পর্যন্ত এই স্টেশনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নাম দেওয়া হয়নি।
এই আকর্ষণীয় গল্পটি ২০০৮ সালে শুরু হয়েছিল, যখন বাঁকুড়া-মশাগ্রাম রেললাইনে একটি নতুন স্টেশন তৈরি হয়। স্টেশনটি রায়না এবং রায়নাগড় নামক দুটি গ্রামের মধ্যে ছিল। প্রাথমিক কাগজপত্র এবং নির্মাণের পর, রেলওয়ে স্টেশনটির নাম 'রায়নাগড়' রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সাইনবোর্ডে এই নামটি লেখা হয়েছিল। রায়নাগড়ের মানুষ খুশি হয়েছিল যে স্টেশনটি তাদের পরিচয় পেয়েছে। কিন্তু এই আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
বোর্ডে 'রায়নাগড়' নামটি লেখার সাথে সাথেই পাশের রায়না গ্রামের লোকেরা প্রতিবাদ শুরু করে। গ্রামবাসীদের দাবি ছিল, যে জমিতে স্টেশন এবং প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে, তা তাদের। তারা যুক্তি দেখায় যে জমি যদি তাদের হয়, তবে স্টেশনের নাম রায়নাগড় কেন রাখা হল। তারা দাবি করে যে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে 'রায়না' রাখা হোক। ধীরে ধীরে এই বিরোধ বাড়তে থাকে এবং দুই গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়, এবং বিষয়টি রেলওয়ে বোর্ড পর্যন্ত পৌঁছায়।
রেল প্রশাসন দুই পক্ষকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোনো গ্রামই পিছু হটতে রাজি হয়নি। সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং অবশেষে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। প্রতিদিনের ঝগড়া এবং বাধায় বিরক্ত হয়ে রেলওয়ে একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নেয়। কর্মকর্তারা স্টেশনের হলুদ বোর্ড থেকে 'রায়নাগড়' নামটি পুরোপুরি মুছে ফেলেন। আজও এখানে ট্রেন থামে, যাত্রীরা ওঠানামা করে, কিন্তু সেই হলুদ বোর্ডটি আগের মতোই খালি পড়ে আছে।
সোশ্যাল মিডিয়া এবং ট্র্যাভেল ব্লগে এই স্টেশনের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর এই নামহীন স্টেশনটি একটি ছোটখাটো পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। হলুদ বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা আজ অনেকের কাছে একটি মজার অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে।

