সংক্ষিপ্ত
বিকল্প চাষের উপরে এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি দফতর। চাষিদের বিকল্প চাষে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কৃষি দফতর পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন ফসল, ফুলের চাষে জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে ধানচাষ লাভজনক নয়।
'ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো...'। রজনীগন্ধা (Tuberose Cultivation) ফুলের গন্ধ পছন্দ করেন না এমন মানুষের সংখ্যা হয়তো খুঁজে পাওয়াই যাবে না। বাগানে ফুটলে অনেক দূর থেকেই এই ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়। আর সেই কারণেই যে কোনও অনুষ্ঠানের (Festival) সময় বাড়িতে এই ফুল নিয়ে আসা হয়। বাঙালির বিয়েবাড়িতে (Marriage) রজনীগন্ধা থাকবে না এটা কখনও হয় না। মণ্ডপ সাজানো থেকে শুরু করে কনের মাথায় লাগানো ফুল, এমনকী মালাতেও এই ফুল দেখতে পাওয়া যায়। গন্ধে ম-ম করে গোটা বাড়ি। আর অনুষ্ঠান বাড়ি যেন এই ফুলের গন্ধ ছাড়া ঠিক মানায় না। বিয়ের মরশুমে এই ফুলের চাহিদা থাকে একেবারে তুঙ্গে। ফলে সেই সময় এই ফুলের দামও অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই সেই সময় লক্ষ্মীলাভের আশায় ফল-সবজিতকে দূরে সরিয়ে এই ফুলের চাষকে বেছে নেন অনেক চাষি (Farmer)।
বিকল্প চাষের উপরে এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি দফতর। চাষিদের বিকল্প চাষে উৎসাহ দেওয়ার জন্য কৃষি দফতর পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন ফসল, ফুলের চাষে জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে ধানচাষ লাভজনক নয়। সেখানে বিকল্প হিসেবে অন্য ফসল চাষের কথাই বলা হচ্ছে চাষিদের। সেই বিকল্প চাষ হিসেবেই এখন অনেক চাষিই বিয়ের মরশুমগুলিতে এই ফুলের চাষ করে থাকেন।
আরও পড়ুন- বাড়ির বাগানে সহজেই লাগাতে পারেন গাঁদা ফুলের গাছ, কীভাবে চাষ করবেন জেনে নিন
রজনীগন্ধা চাষের মাটি
দোআঁশ ও বেলে মাটি রজনীগন্ধা চাষের জন্য উপযুক্ত। মাটির পিএইচ ৬.৫ থেকে ৭.৫ থাকলে সবথেকে ভালো হবে। তার পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে এই ফুলগাছের গোড়ায় যেন কোনওভাবেই জল না জমে। জল দিলেও তা যেন সঠিক পদ্ধতিতে বেরিয়ে যায়। জুন মাসের মাঝে এবং জুলাইয়ের শুরুর দিকে রজনীগন্ধার গাছ লাগানোর সঠিক সময়। রজনীগন্ধা গাছের বাল্ব কিনতে পাওয়া যায় সেগুলি জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে লাগাতে হবে আর তা নাহলে নার্সারি তে চারাগাছ কিনতে পাওয়া যায় তা কিনলেও হবে। অগাস্ট মাস থেকে অর্থাৎ মোটামুটি শীতের শুরুর দিকেই গাছটিতে ফুল ফুটতে শুরু করবে। এই কয়েকটা মাস গাছটির খুব ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে তাহলেই প্রচুর ফুল হবে।
আরও পড়ুন- গরমের আগেই বাড়ির এক কোনে সহজেই করতে পারেন পটলের চাষ, জেনে নিন এর পদ্ধতি
রজনীগন্ধা ফুল চাষের জমি
লাঙল ও মই দিয়ে চাষ করে মাটি গুঁড়ো করে দৈর্ঘ্যে ৪ মিটার ও প্রস্থে ৩ মিটার জমি কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে নিতে হবে। কারণ যাতে দুটি সারির মধ্যে জল নিকাশের নালা রাখা সম্ভব হয়। জমিতে প্রথমে ২-৩ সেঃ মিঃ পুরু করে গোবর সার দিয়ে তা কোদাল দিয়ে ভালো করে মাটির সঙ্গে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এবার কাঠা প্রতি ১ কেজি ইউরিয়া ও ১ কেজি মিউরেট অফ পটাশ সার দিয়ে উপরের ১৫ সেঃ মিঃ মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে ফেলতে হবে। তবে এই কাজগুলি গাছ লাগানোর অন্তত ১৫ দিন আগেই সম্পন্ন করতে হবে।
রোপণ পদ্ধতি
জমি চাষের জন্য প্রস্তুত করার পর সেখানে ৫ ফুট প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হবে। বেড তৈরির ৭ থেকে ১০ দিন পর কন্দ রোপণ করা উচিত। ০.৬ থেকে ১.১৮ ইঞ্চি ব্যাসের কন্দ লাগাতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং কন্দ হতে কন্দের দূরত্ব ৮ ইঞ্চি। কন্দকে ৬ ইঞ্চি গভীরে লাগাতে হবে। কন্দ রোপণের আগে কন্দের সুপ্তাবস্থা কাটানোর জন্য সেগুলিকে ৪ শতাংশ থায়ো ইউরিয়ায় প্রায় ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে।
রজনীগন্ধার জমির মাটি সবসময় জলজল রাখতে হবে। গ্রীষ্মকালে ৭ দিন পরপর এবং শীতকালে ১০ দিন পরপর জল দিতে হবে গাছে। এছাড়া জমি যাতে সব সময় আগাছা মুক্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। না হলে গাছের উপর আগাছা চলে গিয়ে গাছ মরে যেতে পারে। আগাছা যাতে না হয় তার জন্য অনুমোদিত আগাছানাশক ১.৮ কেজি/একর প্রতি স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন- কীভাবে করবেন মিল্ক ফিশের চাষ, জেনে নিন দুধ সাদা রঙের এই মাছের চাষের পদ্ধতি
ধ্বসা রোগ দমন
এ রোগের ফলে গাছের শিঁকড়ে পচন ধরে। শেষে গাছের পাতা খসে যায় এবং ফুলের মঞ্জরীগুলো মাটিতে ঢলে পড়ে। আক্রান্ত গাছগুলো তুলে ফেলে দিতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় ওষুধ দিতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছে ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম হারে কুপ্রাভিট/বেনডাজিম/ব্যাভিস্টিন/সেভিন মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এই ফুলের পাতায় অনেক সময় দাগ দেখতে পাওয়া যায়। এ রোগের ফলে রজনীগন্ধার গাছের পাতার অগ্রভাগ থেকে প্রথমে দাগ পড়ে। পরে তা শুকিয়ে বাদামী হয়ে যায় ও ধীরে ধীরে নীচের দিকে পাতার কিনারা বরাবর ঢেউ খেলানো দাগের মত নামতে থাকে। এর ফলে গাছ ধীরে ধীরে মরে যায়। এই রোগের জন্য কৃষি দফতরের পরামর্শ মতো ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।
একই জমিতে পরপর দু’তিন বছর এক নাগাড়ে রজনীগন্ধার চাষ না করাই ভালো। দু’সারি রজনীগন্ধা গাছের মধ্যে এক সারি গাঁদা গাছ লাগিয়ে গাঁদা-রজনীগন্ধার মিশ্র চাষ করলে শিকড়ে গিঁট কৃমির উপদ্রব কম হয়। জমিতে নিমের খোল দিতে পারেন। এতে পোকা কম হবে। প্রাথমিকভাবে অল্প গাছ আক্রান্ত হলে সেসব গাছ তুলে জমি থেকে দূরে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গাছ তুলে দেওয়ার পর সেখানেই সঙ্গে সঙ্গে অন্য গাছ লাগাবেন না। তাহলে সেই গাছও মরে যেতে পারে। তাই ওই স্থানে মাটি কিছুটা গর্ত করে খড় জ্বালিয়ে মাটি পুড়িয়ে দিন।
ফুল কাটার নিয়ম
ফুলের স্টিক কাটার সময় ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হবে। রজনীগন্ধার স্টিকের প্রথম ফুল ফুটলেই ডাঁটিসহ ফুল কাটতে হবে। তবে যে কোনও সময় তা কাটলে হবে না। ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় অথবা পড়ন্ত বিকেলে ফুল কাটতে হবে। স্টিক কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি মাটি থেকে ১.৫ থেকে ২.৫ ইঞ্চি উপরে থাকে। কাটার সঙ্গে সঙ্গে স্টিকগুলির নীচের কাটা অংশ জলে ডুবিয়ে রাখুন। এর ফলে ফুলের সতেজ ভাব বজায় থাকবে।