সংক্ষিপ্ত

বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পুজোতে এই ফুল ব্যবহার করা হয়। সেই কারণে বেশিরভাগ বাঙালি বাড়ির ছাদে, বারান্দায় বা বাগানে এই ফুলের একটি গাছ চোখে পড়বেই। আর এখন এই ফুলের চাষে আগ্রহী হয়েছেন চাষীরাও। 

শীতকালে (Winter Season) গাঁদা ফুলের (Marigold) জুরি মেলা ভার। বাগানে থোকা থোকা হয়ে ফুটে থাকে এই ফুল। গোটা বাগানের (Garden) চেহারাই যেন তখন বদলে যায়। একসঙ্গে অনেক ফুল ফোটে গাছে। এই ফুল সাধারণত উজ্জল হলুদ ও গাঢ় খয়েরী রঙের হয়ে থাকে। তবে এই ফুল শীতকালীন হলেও এখন গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালেও ফুলটি দেখতে পাওয়া যায়। আসলে দেশের প্রায় সব প্রান্তেই বাজারে সারা বছর এই ফুল দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান (Festival) ও পুজোতে (Puja) এই ফুল ব্যবহার করা হয়। সেই কারণে বেশিরভাগ বাঙালি বাড়ির ছাদে, বারান্দায় বা বাগানে এই ফুলের একটি গাছ চোখে পড়বেই। আর এখন এই ফুলের চাষে আগ্রহী হয়েছেন চাষীরাও (Farmer)। 

গাঁদা চাষের পদ্ধতি
যে কোনও চাষই খুবই ধৈর্যের বিষয়। ধৈর্য না থাকলে কোনও চাষই সম্ভব হয় না। ধৈর্যের পাশাপাশি যে বিষয়টি সব থেকে বেশি প্রয়োজন তা হল চাষের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানা। কারণ সঠিক পদ্ধতি না জানলে কোনওভাবেই এই চাষ সম্ভব হয় না। চাষের প্রথম ধাপ হিসেবে ভালো জমি বেছে নিতে হবে। সাধারণত এঁটেল দো-আঁশ মাটি ফুল চাষের জন্য বেশি উপযোগী। যে জমিতে ফুল চাষ করা হবে, খেয়াল রাখতে হবে তা যেন নিচু না হয়। এর মানে হল খেয়াল রাখতে হবে যে জমিতে যেন কোনওভাবেই জল জমে না থাকে। 

আরও পড়ুন- গরমের আগেই বাড়ির এক কোনে সহজেই করতে পারেন পটলের চাষ, জেনে নিন এর পদ্ধতি

জমি নির্বাচন করার পর জমিতে ৩থেকে ৪টে চাষ দিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। মাটি যেন ঝুরঝুরে ও ছোট টুকরো হয়। শেষ চাষের আগে জমিতে গোবর সার দিতে পারলে ভালো হয়। মাটির নিচে প্রচুর কেঁচো থাকে যা গাছ কেটে নষ্ট করে দেয়। তাই শেষ চাষের আগে মাটিতে কেঁচোনাশক যে কোনও ওষুধ দিতে হবে। তারপর মই দিয়ে মাটি সমান করে দিতে হবে। জমি গাঁদা চাষের উপযোগী হিসেবে তৈরি করার পর চারা সংগ্রহ করতে হবে। 

চারা রোপণ করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যেদিন হাতে চারা পাবেন সেইদিনই জমিকে একেবারে চাষের উপযোগী করে তৈরি রাখতে হবে। তবে যখন খুশি এই চারা পুঁতে দিলে একেবারেই হবে না। চারা রোপণ করার সঠিক সময় রয়েছে। বিকালের দিকে যখন রোদের তাপ কমে যায় তখন চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণ করার সময় দুটি দড়ি ধরে থাকতে হবে। তার ফলে সঠিক সারিতে গাছগুলিতে পোঁতা সহজ হবে। না হলে একটি চারা একদিকে তো আরেকটি অন্যদিকে হয়ে যাবে। সঠিক লাইন থাকবে না। চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দুরত্ব হবে দু হাত। আর পাশাপাশি একটি চারা থেকে আরও একটি চারার দূরত্ব থাকবে ৬ ইঞ্চি। কিন্তু, চারা লাগানোর পর যে সব গাছই বাঁচবে তার কোনও মানে নেই। তাই গাছগুলিকে বাঁচাতে রোপণ করার আগে পাত্রে জল নিয়ে দু চা চামচ "ডাইথেন এম-৪৫" ওষুধ মিশিয়ে চারাগুলো ওই জলে ভিজিয়ে ৫/৬ মিনিট পর তুলে নিন। এর ফলে চারার মৃত্যুর হার কমবে।

আরও পড়ুন- কীভাবে করবেন মিল্ক ফিশের চাষ, জেনে নিন দুধ সাদা রঙের এই মাছের চাষের পদ্ধতি

গাঁদা গাছের পরিচর্যা
আসলে যে কোনও চাষের মূলেই রয়েছে ধৈর্য আর পরিশ্রম। নিজের সন্তানের নতো করেই গাছকে ছোট থেকে বড় করে তুলতে হয়। যে কোনও ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিচর্যাটাই হচ্ছে প্রধান। চারা লাগানোর পর ৮ থেকে ১০ দিন কোনও কিছু করতে হয় না। এরপর যদি জমি শুকিয়ে যায় তাহলে জল দিতে হবে। তবে যখন তখন গাছে জল না দেওয়াই ভালো। সাধারণত খুব ভোরে অথবা সন্ধার আগে জল দিতে হবে। কারণ এসময় প্রচন্ড রোদে জমির মাটি গরম থাকে। ওই অবস্থায় জমিতে জল দিলে চারার খুব ক্ষতি হয়। গাছ মরেও যেতে পারে। এইজন্য জমির মাটি ঠান্ডা থাকা অবস্থায় জল দিতে হবে। ১৫ থেকে ২০ দিন পর গাছ কিছুটা মাটির সঙ্গে লেগে যায়। তারপর একটু একটু করে বড় হতে থাকে। তখন থেকে গাছে ওষুধ এবং সার দিতে পারেন।

আরও পড়ুন- বিদেশের বাজারে ক্রমে চাহিদা বাড়ছে কাঁকড়ার, জেনে নিন কাঁকড়া চাষের পদ্ধতি

শুধু "ডায়াথেন এম-৪৫" এবং "রোভরাল" এই দুই প্রকার ওষুধ দিলেই চলে। গাছকে তাড়াতাড়ি বৃদ্ধির জন্য "থিওভিট " ওষুধ দিতে হয়। ১০ লিটার জলে প্রতিটি ওষুধ ২ চা-চামচ করে মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে হবে। এই পরিমাণ বেশি দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। আর এই সময় মাটিতে যদি আগাছা হয় তাহলে তা পরিষ্কার করতে হবে। না হলে গাঁদা গাছের উপর সেই আগাছাগুলি চলে যেতে পারে। তারপর প্রতি বিঘা জমিতে ২০ কেজি হারে ডিএমপি সার শুধু গাছের সারির মধ্য দিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে জল দিতে হবে। দেখতে হবে গাছ বড় হওয়ার পর একটির সঙ্গে আর একটির মাঝে যেন দূরত্ব থাকে। যদি না থাকে তাহলে গাছ তুলে নিয়ে সেটিকে অন্যত্র ফাঁকা জায়গাতে লাগাতে হবে। তবে এই কাজ করতে হবে বিকেলে। না হলেই গাছ মরে যেতে পারে।  

কয়দিন পর চারা যখন একটু বড় হবে তখন গাছের গোড়ায় মাটি টেনে দিতে হবে। এ সময় অনেক গাছে কুঁড়ি আসবে। কুঁড়িগুলো ভেঙে দিতে হবে। বৃষ্টি না হলে মাটি বেশি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই জল দিন। মাটি প্রতিদিন দেখতে হবে। কারণ জল বেশি হয়ে গেলেও খারাপ আবার কম থাকলেও খারাপ। গাছ যত বড় হবে গাছে ওষুধ এবং সার দেওয়ার পরিমাণও বাড়াতে হবে। এছাড়া গাছের গোড়ায় মাটি বেশি দিতে হবে। পোকার উপদ্রব কমাতে কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। তবে ভালো মানের কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।