সংক্ষিপ্ত

কিন্তু পেটপুজো করার আগে ভেবেছেন কখনও কেন এর নাম নলেন গুড় রাখা হল? নলেন গুড় আসলে খেজুর গুড় বা খেজুরের রস। 

গুড়ের কথা এলেই তো মনে পড়ে যায় সুকুমার রায়ের বলে যাওয়া সেই কবিতার লাইনগুলো—

শিমুল তুলো ধুন্‌‌তে ভাল,
ঠাণ্ডা জলে নাইতে ভাল,
কিন্তু সবার চাইতে ভাল
পাউরুটি আর ঝোলা গুড়

আর বাঙালি (Bengali) মাত্রেই জানে যে ঝোলা গুড় মানেই জিভে জল আনা (Tasty) নলেন গুড় (nalen Gur)। শীতকালের (Winter Season) জন্য বাঙালি সারা বছর ধরে কেন এত মুখিয়ে থাকে কেন জানেন? আপনি কী উত্তর দেবেন আমি জানি না। তবে অনেকেই আছেন যারা সারা বছর অপেক্ষা করেন নলেন গুড়ের জন্য। হাসছেন? তবে কথাটা সত্যি। সোনালি রঙের পাতলা গুড়, আহা তার যা স্বাদ আর গন্ধ যে এর জন্য বাঙালি শহিদ হতেও রাজি। এঁকে শীতের ঘুম ঘুম আমেজ, তার মধ্যে এরকম দারুণ সুস্বাদু একটা ব্যাপার, এ ছাড়া যায় না।

কিন্তু পেটপুজো করার আগে ভেবেছেন কখনও কেন এর নাম নলেন গুড় রাখা হল? নলেন গুড় আসলে খেজুর গুড় বা খেজুরের রস। জানুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে অর্থাৎ বছরের শুরুতে এই গুড় পাওয়া যায় বলে একে অনেকে পয়লা গুড়ও বলে। তবে নলেন শব্দটি কোথা থেকে এসেছে এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। বেশিরভাগ মানুষই বলেন নতুন গুড়ের ‘নতুন’ শব্দটি অপভ্রংশ হয়ে নলেন শব্দটির জন্ম হয়েছে। খেজুর গাছের গায়ে নলি কেটে এই গুড় সংগ্রহ করা হয় বলে একে নলেন গুড় বলা হয় বলে দাবী করেছেন কেউ কেউ। এটা ঠিক হলেও হতে পারে, কারণ দক্ষিণ ভারতে ‘নরকু’ বলে একটি শব্দ প্রচলিত আছে। যার আক্ষরিক অর্থ হল কাটা বা ছেদন করা। 

খেজুর গাছের গা কেটেই নলি তৈরি হয় বলে এরকম নাম হলেও হতে পারে। আমাদের এই রাজ্যে এক সময় নলেন গুড়ের বড় হাট বসত। এখন আর সেসব কিছু হয়না। নলেন গুড় থেকে তৈরি হত লালচে বাদামি রঙের চিনি। তাই একে লালি গুড়ও বলা হত। সেই যাই হোক না কেন, সময়ের সাথে সাথে নলেন গুড়ের মহিমায় এতটুকু ভাঁটা পড়েনি। এখন টিউবেও পাওয়া যায় এই গুড়।

সাধারণত বিকেলের পর বিভিন্ন খেজুর গাছের গা চেঁছে ফেলে ফুটো করে রাখা হয়৷ তারপর ফাঁকা হাঁড়িগুলো ঝুলিয়ে দিয়ে আসা হয়।  সারারাত ধরে টুপ টুপ করে রস পড়ে হাঁড়িতে৷ আর পরদিন সকালে রস ভর্তি হাঁড়িগুলো নিয়ে আসা হয়।  সেই রস নামিয়ে এনে বিভিন্ন হাঁড়ি থেকে ঢালা হয়।  একটা বড় পাত্রে তারপর সেটাকে ফোটানো হয়।  ফুটিয়ে ফুটিয়ে সেই রস থেকে প্রস্তুত করা হয় গুড়৷ গরম গুড় এরপর ঠান্ডা করে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে তৈরি করে ফেলা হয় পাটালি গুড়।  নলেন গুড়ের দুটি রকমফের৷ ঝোলা তরল জাতীয় এবং শক্ত পাটালি। সে যে কী স্বাদ, তা একমাত্র বাঙালিরাই জানেন, কী বলেন মশাই?