সংক্ষিপ্ত

  • স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে
  • সেখানে বন্দি ছিলেন সাড়ে চার বছর
  •  জামিন পেয়েছেন ১ এপ্রিল তাও লকডাউনে জেলবন্দি দশা
  •  জেল জীবন থেকে বেরিয়ে আটকা পড়লেন লকডাউন এর লক-এ


শাহজাহান আলি, পশ্চিম মেদিনীপুর : স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিলেন সাড়ে চার বছর। জামিন পেয়েছেন ১ এপ্রিল। জেল জীবন থেকে বেরিয়ে আটকা পড়লেন লকডাউন এর লক-এ। যানবাহন বন্ধ থাকায় এক মাসের বেশি সময় ধরে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডেই বসে রয়েছেন পুরুলিয়ার যুবক ভোলানাথ সিং। অনাহারে , অপেক্ষায় বসে থেকে সেই যুবক জানালেন- বাইরের থেকে জেলজীবন অনেক বেশি ভালো, অন্তত খেতে পেতাম ৷

গত ৫ বছর আগে পুরুলিয়ার পুলিশ লাইন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ভোলানাথ সিং একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পারিবারিক গণ্ডগোলের জেরে তার স্ত্রীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। পুরুলিয়ার একটি মিলের শ্রমিক ভোলানাথ সিং-কে শ্বশুরবাড়ির অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর বিচারাধীন বন্দি হিসেবে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে ছিলেন সাড়ে চার বছর। 

সম্প্রতি ১ এপ্রিল সরকারি আইনজীবীর বদান্যতায় জামিন পেয়ে জেল থেকে বের হন। বন্দি জীবন থেকে বেরিয়ে পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে গিয়ে আটকে পড়েন লকডাউন এর লক-এ। জেল থেকে হাফ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বুঝতে পারেন বাইরে লকডাউন চলছে ,তাই সমস্ত যানবাহন বন্ধ। এরপর বাসস্ট্যান্ডে বসে অপেক্ষা শুরু হয় তার। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বাড়িতে থাকা মা ও দুই ভাই কেউই যোগাযোগ করেনি। একমাত্র কিশোরী মেয়ের খোঁজ পাননি। 

ফোনে যোগাযোগও করতে পারেননি বাড়ির সঙ্গে । দীর্ঘ এক মাস ধরেই এই পরিস্থিতিতে মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডে বসে রয়েছেন ওই যুবক। বিভিন্ন জায়গায় খাবার চেয়ে এক আধ বেলা খেতে পাচ্ছেন। নয়তো বাসস্ট্যান্ডের ট্যাপ থেকে জল সংগ্রহ করে খেয়ে থাকছেন স্যান্ড শেডে ৷  ভোলানাথ বলেন- " জেল থেকে বেরিয়ে দেখি বাইরে লকডাউন চলছে ৷ বাস বা কোনো গাড়ি পাচ্ছিনা পুরুলিয়া যেতে ৷ থানায় গিয়েছিলাম , পুলিশ জানিয়েছে-একজনের জন্য কোনো গাড়ির ব্যাবস্থা করতে পারব না ৷ তাই একমাসের বেশি সময় ধরে আটকে বসে রয়েছি এখানে ৷ যেকোনও ভাবে বাড়ি ফিরতে চাই ৷ খেতেও পাচ্ছিনা ঠিক মতো ৷কারও খোঁজ পাইনি সাড়ে চারবছরে ৷"

ভোলানাথের দাবি লকডাউনের পরিস্থিতির থেকে জেল জীবন অনেক ভালো ছিল । আর যাই হোক ভেতরে খেতে পাওয়া যেত। এত কষ্ট জেলের ভেতর নেই। তাই এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার হওয়ার জন্য পুলিশের দ্বারস্থ পর্যন্ত হয়েছিলেন। কেউই কোনও রাস্তা বের করে দিতে পারেনি। কখনও খেতে পান, কখনও মেদিনীপুর হাসপাতালের সামনে গিয়ে কেউ খাবার বিলি করলে সেখান থেকে খাবার সংগ্রহ করে খেতে পাই ৷  কখনও আবার বাসস্ট্যান্ডের জল পুরনো প্লাস্টিকের বোতলের সংগ্রহ করে তা খেয়ে পড়ে থাকতে হয় অভুক্ত অবস্থায়।