সংক্ষিপ্ত
কেমন ছিল কলঙ্ক সফর, পরিচালক কতটা নিজস্বতা বজায় রাখতে পারলেন সিনেমার চিত্রনাট্যে আর কতটা সিনেমার আনাচে-কানাচে নজরে পরল সঞ্জয়লীলা বনশালী ও করণ জহর ঘরানার ছাপ!
পরিচালকঃ অভিষেক বর্মন
তারকাঃ আলিয়া ভাট, মাধুরী দীক্ষিত, বরুণ ধওয়ান, আদিত্য রয়-কাপুর, সোনাক্ষি সিনহা, সঞ্জয় দত্ত, হিতেন তেজওয়ানি, কুণাল খেমু, কৃতি শ্যানন
গল্পঃ দেশ ভাগের সময়কালে একদিকে উত্তাল ভারত। মানুষ হারাতে বসেছে নিজের পরিচিতি পরিজন, ভিটে-মাটি। আর সেই সময়ে পাশাপাশি অবক্ষয় ঘটেছিল মানুষের পারষ্পরিক সম্পর্কের। এমনই এক সামাজিক চিত্রপটকে অবলম্বণ করে এগিয়েছে ‘কলঙ্ক’' ছবির কাহিনি। বলতে গেলে অতীত ও বাস্তবের মুখোমুখি সংঘর্ষের এক গল্প ‘কলঙ্ক’। এই গল্পের মূল তিন চরিত্র। যার একদিকে রয়েছেন, আদিত্য রয়-কাপুর অপরদিকে রয়েছেন আলিয়া ভাট। আর এই ত্রিকোণ সম্পর্কের আর একটি বিন্দু হলেন বরুণ ধওয়ান। এই তিন চরিত্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং তাদের পারিবারিক সম্পর্কের ইতিহাস ‘কলঙ্ক’ ছবির মূল উপজিব্য।
অভিনয়ঃ ‘কলঙ্ক’ ছবির অন্যতম প্রাপ্তি তারকাদের নজরকাড়া অভিনয়। গৃহবধুর ভূমিকায় আলিয়া ও তাঁর স্বামীর ভুমিকায় আদিত্য অনবদ্য। উচ্চ শ্রেনীর অবৈধ-প্রেমের কলঙ্কের দাগ মাথায় নিয়ে জফর-এর ভূমিকায় বরুণ ধওয়ান এই ছবিতে ভিন্ন লুকে ধরা দিয়েছেন। পর্দায় তার অভিনয় যথেষ্ঠ পরিণত। তেমনই আবার স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সোনাক্ষির অভিনয় দর্শকের অপর এক পাওনা। তবে বারবনিতার বেশে মাধুরী দীক্ষিত নাচে-অভিনয়ে ছাপিয়ে গিয়েছেন সকলকেই। সঞ্জয় দত্ত-ও নিজের চরিত্রে যথেষ্ট সংবেদনশীল।
সঞ্জয়-মাধুরী রসায়নঃ নয়ের দশকের এই জনপ্রিয় জুটিকে ২৫ বছর পর পর্দার সমানে দেখার আশা করেছিলেন সিনেমাপ্রেমীরা। কিন্তু পুরো ছবিতে বাস্তবে একবারের জন্যও মুখোমুখি হননি সঞ্জয় ও মাধুরী। সুতরাং এই জুটির রসায়ন দর্শককুলকে কতটা তৃপ্ত করবে তা নিয়ে সন্দেহ থাকবে।
চিত্রনাট্যঃ ‘কলঙ্ক’'-এর বিশাল জাকজমকপূর্ণ সেট নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। মাধুরী দীক্ষিত, সঞ্জয় দত্ত-রা এই মেগা সেটের প্রসংশায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। এমন কি সেটের মধ্যে যেভাবে একটি লেক তৈরি করা হয়েছিল তাতে বিষ্ময় প্রকাশ করেছিলেন খোদ বরুন ধওয়ান, আলিয়া ভাট, আদিত্য রায়কাপুর ও সোনাক্ষি সিনহারা। কিন্তু সেট সজ্জার ক্ষেত্রে যতটা মুনশিয়ানার পরিচয় ঘটেছে ঠিক তেমনটা হয়নি চিত্রনাট্যর ক্ষেত্রে। চিত্রনাট্যে বুনটের অভাব কলঙ্ক-এর গল্পের গতিকে কোনও বাড়তি মাইলেজ দিতে পারেনি। দুর্দান্ত স্টারকাস্ট, চোখ ধাঁধাঁনো সেট নিয়ে কলঙ্ক একটা আশা জাগালেও ছবির শেষে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর পিছনে চিত্রনাট্যের দুর্বলতাগুলো প্রকট হয়ে ওঠে।
সিনেমাটোগ্রাফিঃ ‘কলঙ্ক’' ছবির সিনেমাটোগ্রাফির ভার বিনোদ প্রধানের হাতে থাকলেও তার পর্দায় কোনও বিশেষ ভুমিকা নজরে পড়ল না দর্শকের। বরং চেনা ফ্রেম-বন্দি শটেই ছবির সিনেমাটোগ্রাফি সামনে এল। যার পড়তে-পড়তে করণ জহর ও সঞ্জয়লীলা বনশালীর প্রভাব প্রকট। অভাব মিলল নিজস্বতার। বলিউডে এই ধরনের অনুকরণীয় চিত্রগ্রহণ কতটা দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে সে প্রশ্ন থেকেই যার। অন্যদিকে ছবির অপর এক ব্যর্থতা হল অনুন্নত গ্রিনস্ক্রিন শ্যুটিং।
পরিচালনাঃ এ যেন দু'য়ের মাঝে আটকে গেছেন অভিষেক বর্মন। বলিউডে এই বাঙালি চিত্রপরিচালককে নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ সকলের। কিন্তু, অভিষেক যেভাবে সঞ্জয়লীলা বনশালি ও করণ জহর-এর ম্যাজিকে নিজেকে আবদ্ধ করতে চেয়েছেন তাতে 'কলঙ্ক' ছবির স্বার্থকতাই বহুলাংশে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ছবির গল্প বিন্যাসে তিনি করণ জহরের ঘরানাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন। আর সিনেমা সেট, কস্টিউম এবং তার দৃশ্যায়ণে তিনি সঞ্জয়লীলা বনশালী-কে অনুকরণ করেছেন। যার নিট ফল 'কলঙ্ক' ছবিটি একটা জগাখিচুরি আকার নিয়েছে। একজন পরিচালক যখন অন্ধভাবে এই রাস্তায় হাঁটেন, তাতে ছবির সাফল্য লটারি কেটে ভাগ্য বদলানোর মতো হয়ে দাঁড়ায়। এই ছবিতে অভিষেক, সঞ্জয়লীলা বনশালী ও করণ জহর-এর নামে দু'টো লটারি কেটেছেন, আর সেই লটারি আদৌ কার্যকর হয়েছে কিনা, তা হলে গেলেই টের পাবেন দর্শকেরা।
ছবির রেটিং- ২.৫/৫