মেদিনীপুরের লাছিপোদ্দার কালিবাড়ির মাহাত্ম্য দেবীর পায়ের নুপুরের শব্দ শোনা যায় মধ্যরাতে। ৪৫০ বছরের বেশি সময় ধরে পালিত হয়ে আসছে এই পূজা। দেবীর পায়ের নূপুরের শব্দ যেখানে থেমেছিল, সেখানেই এই কালীপ্রতিমা স্থাপন করা হয়েছিল।
মেদিনীপুর শহরের হবিবপুর এলাকায় পাঁচ শতাব্দীর ঐতিহ্য বয়ে চলেছে এক অলৌকিক বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু 'লচি পোদ্দার' পরিবারের কালীপুজো। রহস্য, ইতিহাস আর ভক্তির আবেশে মোড়া এই পুজো আজও অম্লান, আজও ভক্তদের মুগ্ধ করে। মেদিনীপুরের লছিপোদ্দার কালীবাড়ির কিংবদন্তি হল যে মাঝরাতে এখানে দেবীর পায়ের নূপুরের শব্দ শোনা যায়। এই রহস্যময় ঐতিহ্য ৪৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিত হয়ে আসছে এবং এটি আজও অনেককে আকর্ষণ করে। এই পুজোর বিশেষত্ব হল এর প্রাচীনত্ব এবং কিংবদন্তি, যা এটিকে অন্যান্য অনেক কালীপুজো থেকে আলাদা করে তোলে।
মেদিনীপুরের লছিপোদ্দার কালীবাড়ির পুজো-
* ঐতিহ্য এবং কিংবদন্তি: লছিপোদ্দার কালীবাড়ির উৎপত্তি নিয়ে অনেক কিংবদন্তি রয়েছে। শোনা যায় যে, দেবীর পায়ের নূপুরের শব্দ যেখানে থেমেছিল, সেখানেই এই কালীপ্রতিমা স্থাপন করা হয়েছিল।
* রহস্য: প্রতি বছর কালীপুজোর সময় মাঝরাতে দেবীর পায়ের নূপুরের শব্দ শোনা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়, যা এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি করে।
* প্রাচীনত্ব: এটি মেদিনীপুরের অন্যতম প্রাচীন কালীপুজো, যার ইতিহাস প্রায় ৪৫০ বছরেরও বেশি পুরনো।
* এখানকার পুজোর ধরন: একসময় এটি বারোয়ারি পুজো হলেও এখন এটি একটি বার্ষিক উৎসব।
পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা জানান, প্রায় পাঁচশো বছর আগে স্বপ্নাদেশে শুরু হয়েছিল এই কালীপুজো। সেই বিশ্বাস, সেই নিয়ম আজও ঠিক একইভাবে মেনে চলা হয়। পরিবারের এক বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য বলেন, 'মা এখানে অত্যন্ত জাগ্রত। আমরা নিজেরাই বহুবার শুনেছি মায়ের নূপুরের শব্দ। বিশ্বাস করি, মা আজও এই বাড়িতে বিরাজমান।'
তান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে আজও হয় এই পুজো। প্রাচীন রীতিনীতি এখনও অটুট। একসময় মা কালীকে বিসর্জনের জন্য গরুর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হতো, এখনও সেই ঐতিহ্য বজায় আছে শুধু গরুর গাড়ির জায়গায় এসেছে ঠেলা গাড়ি।
বিসর্জনের সময় অন্ধকার রাত আলোকিত হয়ে ওঠে জ্বলন্ত মশালের আলোয়, যা আজও এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। পরিবারের সদস্যদের কথায়, 'আমরা পুজোর সময় ২৪ ঘণ্টা নির্জলা উপবাস থাকি। সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত চলে মা'র আরাধনা।'
পুজোর প্রথম দিকের সময় পশুবলি ছিল প্রচলিত, কিন্তু ১৯৩৫ সাল থেকে শুরু হয় আখ ও কুমড়োর বলির প্রথা, যা আজও একইভাবে চলে আসছে।
ঐতিহ্য, রহস্য এবং কিংবদন্তি মিলে লছিপোদ্দার কালীবাড়ির কালীপুজোকে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে, যা আজও মেদিনীপুরবাসীর কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।


