তিরোল ক্ষ্যাপাকালী মন্দির প্রায় ৬০০ বছর পুরনো। এই মন্দিরে প্রাচীনকাল থেকে দূরদূরান্ত থেকে আসত ভক্তরা। 

পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক কালী মন্দির। স্থানীয়দের কাছে অধিকাংশ মন্দিরই জাগ্রত। মন্দির নিয়ে প্রচলিত রয়েছে অনেক কথা। কালের সময় ধরে কিছু গাথা মলিন হয়ে গেছে। কিছু আবার রয়ে গেছে । তেমনই একটি কালী মন্দির হল তিরোল ক্ষ্যাপাকালী মন্দির। যা প্রায় ৬০০ বছর ধরে ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে। এই মন্দিরটি জাগ্রত। অনেকে আবার বলেন এই মন্দিরে গেলে যে কোনও মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী নাকি সুস্থ হয়ে যায়।

তিরোল ক্ষ্যাপাকালী মন্দির রয়েছে হুগলিতে। আরামবাগ স্টেশন থেকে যাওয়া যায়। আরামবাগ স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে লেভেল ক্রসিং দিকে যেতে হবে। স্টেশন থেকে টোটোও পাওয়া যায়। মাত্র ১০০ টাকায় পৌঁছে দেয় মন্দিরে। লেভেল ক্রসিং থেকে টোটো নিলে ২০ টাকা ভাড়া নেয়। মাত্র ২০ মিনিট লাগে স্টেশন থেকে মন্দির যেতে। হাওড়া থেকে গোঘাট লোকালে আরামবাগ যেতে লাগে ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের মত। তারকেশ্বর থেকে বাসে করেও যাওয়া যায়। বাসস্ট্যান্ডের নাম তিরোল মন্দির বাসস্ট্যন্ড। তারকেশ্বর থেকে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট।

তিরোল ক্ষ্যাপাকালী মন্দির প্রায় ৬০০ বছর পুরনো। এই মন্দিরে প্রাচীনকাল থেকে দূরদূরান্ত থেকে আসত ভক্তরা। প্রাচীনকাল থেকেই বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল মন্দিরের নাম। অনেকেই দাবি করেন এই মন্দিরে এলে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী সুস্থ হয়ে যায়। অনেকেই একাখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। মন্দিরের কাছেই রয়েছে দশকর্মা ভাণ্ডার। সেখানে পাওয়া যায় পুজোর সমাগ্রী। এখনও এই মন্দিরে চাগবলি দেওয়া হয়।

এক সাধু তিরোল দেবীর পুজো করতেন জঙ্গলের মধ্যে। মৃত্যুপথযাত্রী সাধু স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিরোলের তৎকালীন জমিদার চক্রবর্তীদের হাতে দেবীর আরাধনার ভার দিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে গত ৬০০ বছর ধরে এই মন্দিরে দেবী ক্ষ্যাপাকালীর আরাধনা চলছে। মূল গর্ভগৃহের পিছনে রয়েছে মন্দিরের নিজস্ব পুকুর। সেই পুকুরের জলেই মন্দিরের যাবতীয় কাজকর্ম চলে। মন্দিরে আসা রোগীরা এই পুকুরের জলে স্নান করে পবিত্র হয়ে গর্ভগৃহে দেবীর কাছে যান।

কিছু খাওয়ার আগে রোগীকে দেবীর পুজোর বেলপাতা যা মন্দির থেকেই দেওয়া হয়, সেটা খেতে হয়। আর, এখান থেকে বালাও রোগীর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দেবী পরিধান করেন লোহার বালা। তেমনই আলাদা অনেকগুলো বালা পুজো করে রোগীদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রোগীরা সুস্থ হয়ে গেলে, নিজের হাতের সেই বালা খুলে মন্দিরের নির্দিষ্ট জায়গায় ঝুলিয়ে রাখেন। এই মন্দিরের দেবী মূর্তি মাটির তৈরি। প্রাচীন কাল থেকেই ২৫ বছর অন্তর মূর্তি বদল করা হয়।