সংক্ষিপ্ত

ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা ক্রিকেট দলের হয়ে যাঁরা বিশ্বকাপ জিতেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ভারতীয় ক্রিকেট তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসেও জায়গা করে নিয়েছেন। তবে এই ইতিহাস তৈরি করতে তাঁদের কম কষ্ট করতে হয়নি।

জন্ম দলিত পরিবারে। বয়স যখন মাত্র ৪ বছর, তখন মৃত্যু হয় বাবার। মা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহকারীর কাজ শুরু করেন। বেতন মাত্র আড়াই হাজার টাকা। সেই যৎসামান্য অর্থে ৪ সন্তানকে বড় করে তোলা কতটা কঠিন, সেটা শুধু যিনি সংসার চালান তিনিই জানেন। এই অবস্থায় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা বামন হয়ে চাঁদ ধরার মতোই স্পর্ধার। কিন্তু সোনিয়া মেন্ধিয়া সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন। ছোটবেলা থেকে লড়াই করে বড় হয়ে উঠে তিনি স্বপ্নপূরণও করেছেন। ছোটবেলায় মায়ের প্রবল আপত্তি ছিল। অভাবে সংসারে স্বামীহারা মহিলা মেয়ের স্বপ্নের কথা শুনে স্বাভাবিকভাবেই ভয় পেয়েছিলেন। ক্রিকেট যে ধনীদের খেলা। কিন্তু এক্ষেত্রে মায়ের অবাধ্য হন সোনিয়া। এই অবাধ্য মেয়েই ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলকে প্রথমবার বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেছেন। এই ক্রিকেটারকে নিয়ে এখন তাঁর মা গর্বিত। তাঁর আশা, মেয়ে ভারতের হয়ে খেলে আরও সাফল্য পাবে।

হরিয়ানার রোহতক থেকে মহিলাদের অনূর্ধ্ব-১৯ টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে ২ জন ক্রিকেটার ছিলেন। একজন অধিনায়ক শেফালি ভার্মা এবং অপরজন সোনিয়া। ২০০৪ সালের ২০ মে রোহতক জেলার ব্রাহ্মণবাস জেলায় জন্ম সোনিয়ার। মা সরোজ পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি।ফলে তাঁর পক্ষে ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব হয়নি। এখন তাঁর বেতন সাড়ে ৫ হাজার টাকা। এখনও পরিবারের সবাইকে দিন কাটাতে একটিমাত্র ঘরে। এই পরিবারের মেয়েই দেশের গর্ব। 

১৩ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলা শুরু সোনিয়ার। দারিদ্র্য বোধহয় মন থেকে ভয় মুছে দেয়। সেই কারণে একা অটোরিকশা করে ক্রিকেট খেলার জন্য রোজ বাড়ি থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার যাতায়াত করতে ভয় পাননি। এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেলেন সোনিয়া। দেশকে মহিলা ক্রিকেটে প্রথমবার বিশ্বের সেরা করতে অবদান রইল তাঁর।

সোনিয়ার মা জানিয়েছেন, ‘আমি যখন অঙ্গনওয়াড়িতে কাজ শুরু করি, তখন সোনিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যেতাম। সেখানে ও অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে প্লাস্টিকের বলে খেলত। তারপর বাড়ি ফিরে এসে রাস্তায় জামাকাপড় কাচার জন্য ব্যবহৃত কাঠের দণ্ড দিয়ে খেলত। এভাবেই ও ক্রিকেট খেলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আার আপত্তি ছিল কিন্তু ওর জেদের কাছে হার মানতে হয়। আমার মেয়ের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। আমরা ওকে নিয়ে গর্বিত। আমাদের আশা, ও ভারতের হয়ে আরও অনেকদিন খেলতে পারবে।’

আরও পড়ুন-

চুঁচুড়ার রাজেন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘ থেকে ভারতীয় দল, স্বপ্নের উত্থান তিতাসের

অনূর্ধ্ব ১৯ মহিলাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিন বাঙালি কন্যার সাফল্যে খুশির জোয়ার পরিবারে

ঝুলন গোস্বামীর পরামর্শ কাজে লেগেছে, জানালেন বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা তিতাস