সংক্ষিপ্ত

ফিফা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে ইরান। ম্যাচের আগেই ইরানের অধিনায়ক জানিয়েছিলেন জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে কি না তা দলের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করা হবে।

মাহসা মৃত্যুর পর থেকেই হিজাব বিরোধী আন্দোলনে ফুঁসছে ইরান। এবার সেই প্রতিবাদের আঁচ উঠে এল বিশ্বকাপের মঞ্চেও। ফুটবলের আসরে কার্যত মৌনতাকেই প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নিলেন ইরানি ফুটবলাররা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারলেও কাতারের বুকে প্রতিবাদের এক অনন্য ভাষা তৈরি করে গেলেন হোসেনি, করিমি, হজশফি, তারেমিরা। ফুটবলের ইতিহাসে এই প্রথমবার উদ্বোধনী ম্যাচে জাতীয় সংগীত গাইলেন না খেলোয়াড়রা। ইরানের সরকার বিরোধী আন্দোলনকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরে মানবতার লড়াইয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল হাজারো মাহসা আমিনিকে।

ফিফা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে ইরান। ম্যাচের আগেই ইরানের অধিনায়ক জানিয়েছিলেন জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে কি না তা দলের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করা হবে। জানা যায় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই জাতীয় সংগীত না গাওয়ার পক্ষেই মত দেন। ফলে এই প্রথম বিশ্বকাপের মঞ্চে কোনও দেশের ফুটবলাররা জাতীয় সংগীতে গলা মেলালেন না। নীরবতা দিয়েই আরও জোড়ালো হল হিজাব বিরোধী আন্দোল ইরানের প্রতিবাদের কণ্ঠ। এক অভিনব প্রতিবাদের সাক্ষী থাকল কাতার-সহ গোটা বিশ্ব।

প্রসঙ্গত, ঠিকভাবে হিজাব না পরার 'অপরাধে' ইরানের ২২ বছরের তরুণীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ইরানি পুলিশের বিরুদ্ধে। পরিবারের সঙ্গে তেহরানে বেড়াতে এসেছিলেন ২২ বছরের মাহসা আমিনি। যথাযথ ভাবে হিজাব না পরার 'অপরাধে' নীতি পুলিশের হাতে আক্রান্ত হন আমিনি। কয়েকজন স্থানীয় মহিলা আমিনির পথ আটকে হিজাব পরার জন্য বারবারই চাপ দিতে থাকে। রাজী না হওয়ায় বাড়তে থাকে বাগবিতন্ডা। ধীরে ধীরে তর্কাতর্কি ধস্তাধস্তির রূপ নেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ইরানি পুলিশ। হিসাব নেই দেখে তরুণীকে 'উচিত শিক্ষা' দিতে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমিনিকে টানতে টানতে গাড়িতে তোলার পর পুলিশের গাড়িতেই তাঁকে বেধরক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। থানায় নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমিনির পরিবার জানতে পারে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তরুণীকে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কোমায় চলে যান তরুণী। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে ২২ বছরের আমিনি। পরিবারের অভিযোগ থানায় নিয়ে গিইয়ে বেধরক মারধর করা হয় আমিনিকে। হিজাব পরা শেখানোর নামে মেরে ভেঙে দেওয়া হয় মাথার খুলি। যদিও পুলিশের তরফ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে যাবতীয় অভিযোগ। তাঁদের দাবি আগে থেকেই অসুস্থ ছিল তরুণী এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশের এই যুক্তি কোনওভাবেই মানতে রাজী নন আমিনির পরিবার।

এরপরই, রানের রাস্তায় রাস্তায় জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আগুন। 'অত্যাচার'-এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছে কাতারে কাতারে ইরানি মহিলা। প্রশাসনের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে গণবিক্ষোভের আগুন দেখা গিয়েছে ইরানের রাস্তায়। সেই আগুনের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। আমিনি হত্যার প্রতিবাদে প্রকাশ্য রাস্তায় হিজাব পুড়িয়ে, চুল কেটে বিক্ষোভ উত্তেজিত জনতা। মুহুর্মুহু উঠছে সরকার বিরোধী স্লোগান। তেহেরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জমায়েত করেছেন শয় শয় ইরানি তরুণী। ইরানের ১৫টি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদের আঁচ। সমবেত জনতার ওপর চাঠিচার্জ করে ইরানি পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়া এমনকী চলছে গুলিও। আমিনি মৃত্যুর প্রতিবাদে পথে নেমে ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন। যদিও গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন -

কঠিন গ্রুপে লড়াই শুরু বৃহস্পতিবার, প্রথম ম্যাচে রোনাল্ডোদের সামনে ঘানা

'আমরা মারা গিয়েছি', সৌদি আরবের কাছে হারের পর থমথমে পরিবেশ আর্জেন্টিনা শিবিরে

লক্ষ্য ষষ্ঠ বিশ্বকাপ, বৃহস্পতিবার সার্বিয়া ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু ব্রাজিলের