Kolkata Derby Supporters: গ্যালারির চোখ যেমন ফুটবল মাঠে, তেমনই আবার আশেপাশে। কলকাতা ফুটবলে এখন গ্যালারি জুড়েও রাজনীতির ভাষ্য।

Kolkata Derby Supporters: ফুটবল মাঠ বরাবরই সংহতির বার্তা দেয়। আর যদি সেটা কলকাতা ডার্বি হয়ম তবে তো কথাই নেই। ভরা গ্যালারিও যেন তাহলে তৈরি। দিকে দিকে নানারকমের টিফো, ব্যানার এবং ফ্লেক্স। যেন গ্যালারির মধ্যেও একাধিক মতাদর্শ। 

গ্যালারির চোখ যেমন ফুটবল মাঠে, তেমনই আবার আশেপাশে। কলকাতা ফুটবলে এখন গ্যালারি জুড়েও রাজনীতির ভাষ্য। ঠিক কয়েক বছর আগে, যখন এনআরসি ইস্যুতে উত্তাল দেশ। তখন যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে পড়ল টিফো। সেখানে লেখা ছিল, “রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে না।" 

তবে রবিবার কিন্তু অন্যরকম ছবি দেখা গেল ডার্বিতে। এদিন সিএএ-র সমর্থন চোখে পড়ল লাল হলুদ গ্যালারিতে। কার্যত, সিএএ-এর পক্ষে পোস্টার দেখা গেল এই ম্যাচে। বুঝিয়ে দেওয়া হল, ওপার বাংলা থেকে ঠিক কাদের জন্য উদ্বাস্তু হতে হয়েছিল এখনকার ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের পূর্বপুরুষদের।

রবিবার ডার্বির দিন, ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে লাল হলুদ একটি ব্যানারে লেখা ছিল, “যাদের জন্য ছাড়লাম দেশ, তারাই পরেছে বাঙালির বেশ।" ঠিক তার নীচেই ইংরেজিতে লেখা ছিল, “সেভ হিন্দু রিফিউজিস, উই সাপোর্ট সিএএ।" 

অপরদিকে আবার মোহনবাগান গ্যালারিতেও ব্যানার চোখে পড়ে। সেখানে লেখা ছিল, "প্রতিটি হিন্দু শরণার্থী আমার ভাই, অনুপ্রবশকারীর এদেশে ঠাঁই নাই’। সবুজ-মেরুন রঙের উপর সাদা দিয়ে লেখা হয় এই স্লোগান। ঠিক স্টেডিয়ামের কাছেই বিধাননগরের একটি আইল্যান্ডেও সেই ব্যানার লাগানো হয়।

এই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারে মুখ খুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে সুকান্ত লিখেছেন, “গতকাল হয়ত খেলার ময়দানে ইস্টবেঙ্গল জিতেছে। কিন্তু আসল জয় এসেছে দুই দলের সমর্থকদের একতার মধ্য দিয়ে। তারা একসঙ্গে জিতেছেন লাখো হিন্দুর বিশ্বাস, অশ্রু আর ভালোবাসা। সেই মুহূর্তে ফুটবল শুধু আর খেলা ছিল না। বরং সেটি তখন পরিণত হয়েছিল একতাবদ্ধ মানুষের হৃদস্পন্দনে” 

অন্যদিকে, শুভেন্দুর কথায়, “হিন্দু শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা। তবে এই আবেগের প্রকাশকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে পুলিশ-প্রশাসন। সকাল থেকে টাঙানো সমর্থকদের বড় বড় টিফো এবং ব্যানার কেড়ে নিয়েছে মমতার পুলিশ। এটা স্পষ্ট কণ্ঠরোধ করার প্রয়াস। কিন্তু বাঙালিদের ঐক্য ও আবেগ কেউ দমাতে পারবে না। কোনওদিন পারেওনি।"

প্রসঙ্গত, বাংলাভাষী এবং বাঙালিদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে গ্যালারিতে পোস্টার-ব্যানারের নেপথ্যে ফ্যানক্লাবগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে মূলত উদ্যোগী হয়েছিলেন দুই প্রধানের বাম মনোভাবাপন্ন সমর্থকরাই। সূত্রের খবর, তৃণমূলেরও কেউ কেউ জুড়ে গেছিলেন সেই পরিকল্পনায়। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, রবিবারের ম্যাচে ব্যানার এবং পোস্টারের নেপথ্যে ভূমিকা নিলেন উত্তর কলকাতার এক বিজেপি নেতা।

তাহলে ফুটবল মাঠের গ্যালারিও প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠতে শুরু করল? যদিও সেটা নতুন কোনও বিষয় নয়। যেমন ২০২৪ সালের ১৮ অগাস্ট, এই ডুরান্ড কাপের ডার্বি বাতিল ঘিরেই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা কলকাতা। আর ঠিক তার আগেই আরজি করের সেই নক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে। দুই দলের সমর্থকরা রীতিমতো আরজি কর ইস্যুতে ব্যানার হাতে প্রতিবাদ শুরু করেন। 

সেখানে লেখা ছিল, “আমাদের বোনের বিচার চাই।" সমর্থকরা স্লোগান দেন, “এক হয়েছে বাঙাল-ঘটি, ভয় পেয়েছে হাওয়াই চটি।” এরপর কলকাতা লিগের বিভিন্ন ম্যাচে গোলপোস্টের পিছন দিকে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে প্রতিবাদী ব্যানারে লেখা ছিল, “তিলোত্তমার রক্তচোখ, আঁধার রাতে মশাল হোক।" কিন্তু এবার ছবিটা কিন্তু একটু হলেও বদলে গেল। একটি ইস্যুতে যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তির লড়াইতেও নাম লেখাল যুবভারতীর গ্যালারি। কারণ, এদিনই আবার আরেকটি ব্যানারে লেখা ছিল, “বাংলা ভাষা স্বাধীনতার শ্বাস, শহীদের ত্যাগের ধ্বনি, অস্বীকার করলে কাঁপবে দেশ, বাজবে প্রতিবাদের রণধ্বনি।" 

তবে শোনা যাচ্ছে, আগামী বুধবার সেমিফাইনালে পাল্টা ব্যানার-পোস্টার পড়তে পারে। ঐদিন যুবভারতীতে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ইস্টবেঙ্গল বনাম ডায়মন্ড হারবার এফসি। 

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।