সংক্ষিপ্ত
রুপোজয়ী মীরাবাই চানু যখন থাকেন কুঁড়েঘরে তখন আইপিএল জেতা পান্ডিয়া ভাইরা কেনেন ৩০ কোটির ফ্ল্যাট। পদকের আশা ছেড়ে ভারতীয় ক্রীড়াজগতের এই বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে।
টোকিও অলিম্পিকের প্রায় অর্ধেক সমাপ্ত। ভারতের হয়ে পদক জিতেছেন সাইখোম মীরাবাই চানু আর পিভি সিন্ধু। লাভলিনা বোর্গেহাইনও পদক জেতা নিশ্চিত করেছেন, তার পদকের রঙটা এখনও নিশ্চিত নয়। অথচ এবার ১২৮ জন ক্রীড়াবিদের বিশাল দল পাঠিয়েছিল ভারত। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, কী লাভ এত ক্রীড়াবিদদের পাঠিয়ে? আর সেইসময়ই কী আশ্চর্য সমাপতন! পর পর এল দুটি খবর। ২৯ জুলাই অভিনেতা আর মাধবন টুইট করলেন সাইখোম মীরাবাই চানুর বাড়ির ছবি, বললেন বিশ্বাসই করা যায় না। আর তার দুদিন পরই, অর্থাৎ ৩১ জুলাই সামনে আসল হার্দিক ও ক্রুণাল পাণ্ডিয়ার ৩৮৩৮ স্কোয়ারফিটের নয়া বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের ছবি।
টোকিও অলিম্পিক্সে রুপোজয়ী ভারোত্তোলক নিজেই বাড়ি ফিরে ছবিটি পোস্ট করেছিলেন। সেই ছবিটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছিল। অনেকেই ছবিটি দেখে বিস্মিত হয়েছেন। একেবারে হতদরীদ্র অবস্থা তাঁদের। রান্নাঘরের মাটিতে বসেই খবার খান পরিবারের সকলে। নেটিজেনরা অনেকেই বলেছেন, সুযোগ সুবিধার অভাব দারিদ্র চানুকে তাঁর স্বপ্ন সফল করা থেকে আটকাতে পারেনি। তিনি সত্যিই সকলের কাছে অনুপ্রেরণা। অভিনেতা আর মাধবন সেই ছবিটিই টুইট করে লেখেন, 'এটা সত্যি হতে পারে না। আমার কিছু বলার ভাষা নেই'।
শুধু তাই নয়, সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের পতাকাকে তুলে ধরা ক্রীড়াবিদের প্রশিক্ষণ নিতে গ্রামের বাড়ি থেকে শহরের প্রশিক্ষণ শিবিরে যাওয়ারও আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না। ট্রাকওয়ালাদের কাছ থেকে লিফট নিতেন। তাঁর যখন এই অবস্থা, তখন দেশের অপর দুই ক্রীড়াবিদ হার্দিক ও ক্রুণাল, মুম্বইয়ের খার এলাকার অভিজাত রুস্তমজী প্যারামাউন্টে ৮ বেডরুম বিশিষ্ট ফ্ল্যাট কিনলেন। যার দাম মনে করা হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ কোটি টাকা! চানুর সঙ্গে তাঁদের তফাৎ, চানু ভারোত্তলন করেন, আর তাঁরা ক্রিকেটার।
কেমন ক্রিকেটার? হার্দিক তাও ভারতের জাতীয় দলে নিয়মিত খেলেন। এখনও অবধি যদিও বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ হয়নি। আর ক্রুনাল সীমিত ওভারের ক্রিকেটে, ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলে মাঝে মাঝে খেলার সুযোগ পান। তবে তাঁরা দুজন আইপিএল-এর অন্যতম বড় দুই নাম। আর তার জোরেই তাঁরা কয়েক যোজন পিছনে ফেলে দিয়েছেন সাইখোম মিরাবাই চানু বা তাঁর মতো অন্য অলিম্পিক ক্রীড়াবিদদের।
আর এই বৈষম্যই পরিষ্কার করে দিচ্ছে, কেন অলিম্পিকে ভারত পদক জিততে পারে না। ১২৫ কোটি মানুষের দেশে পদক আসে হাতে গোনা। পর পর দুদিন যদি কেউ দেখেন অলিম্পিকে রুপোজয়ী ভারোত্তোলককে কুঁড়ে ঘরে থাকতে হয়, আর আইপিএল-এর মতো ঘরোয়া টুর্নামেন্ট জয়ী ক্রিকেটাররা ৩০ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কেনে, তবে কেই বা যেচে ভারোত্তোলন, তীরন্দাজি, বক্সিং বা সাঁতারের দিকে ঝুঁকবে? অলিম্পিক পদক জিতেই বা লাভটা কী হবে? আর এটাই ভারতীয় ক্রীড়াজগতের বাস্তবচিত্র।
আরও পড়ুন - ৯ বক্সার পাঠিয়ে মাত্র ১টি পদক - কেন এই হাল ভারতীয় বক্সিং-এর, কী বললেন বিএফআই সভাপতি
আরও পড়ুন - Tokyo Olympics 2020 - গোপীচাঁদের সঙ্গে কেন ছাড়াছাড়ি হল সিন্ধুর, জানুন নেপথ্যের কাহিনি
একজন গোপীচাঁদের হাত ধরে সাইনা নেহওয়াল বা পিভি সিন্ধুরা উঠে আসবেন। হরিয়ানার কুস্তির আখড়া থেকে বজরং পুনিয়াদের মতো কুস্তিগীররা উঠে আসবেন। আর নিজেদের মনের জোরে এগিয়ে আসবেন চানুদের মতো কয়েকজন। কিন্তু, দেশে যতদিন না কোনও সুনির্দিষ্ট ক্রীড়ানীতি তৈরি হচ্ছে, অর্থনৈতিক সমতা না আসছে, ততদিন অলিম্পিক থেকে নিয়মিত পদক জয়ের আশা দূরে রাখাই ভালো। কাজেই আমরা কি আদৌ, অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্ন করতে পারি? তাদের ব্যর্থ বলতে পারি? বরং, বাবা-মারা ছোটবেলায় মন ভোলানোর জন্য যা বলতেন, সেই অংশগ্রহণ করাটাই বড় বিষয়, সেই বলেই মনকে স্বান্ত্বনা দিতে হবে। বরং সামনেই থমকে থাকা আইপিএল আসছে। আমরা সেইদিকে মন দিই।