সংক্ষিপ্ত

অভিনব বিন্দ্রা বলেছেন, তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস হল অলিম্পিয়ান হওয়ার জন্য তাঁর যে মূল্যবোধ আর প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা তৈরি হয়েছে তা দেশের আগামী প্রজন্মকে দিতে হবে।

 

উন্নয়ন ও শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস পালন করা হয় ৬ এপ্রিল। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ক্রীড়াবিদদের উদ্যোগে খেলাধূলার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। গোটা বছরই এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অলিম্পিক কমিটি। তবে বিশেষ দিনে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ী অভিনব বিন্দ্রা নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে নেন। তিনি বলেন, একজন স্পোর্টস শ্যুটার হিসেবে তাঁর কেরিয়ার তাঁকে অলিম্পিক মূল্যবোধের প্রতি আজীবন প্রতিশ্রুতি বদ্ধ রাখতে সাহায্য করেছিল। আর সেই মূল্যবোধগুলি তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারতীয় স্কুল পডুয়াদের সঙ্গে ভাগ করে নেন।

অভিনব বিন্দ্রা জানিয়েছেন, ২০১৬র রিও অলিম্পিকে তিনি ব্রোঞ্জ জয় করেছিলেন। সেই সময়ই তাঁর দুই দশকের দীর্ঘ ক্রীড়া জীবন শেষ করেছিলেন। কিন্তু তখন তিনি রীতিমত হতাশ ছিলেন। আর সেই সময়ই তাঁকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, সতীর্থ, কোচ-সব বিশ্বের অনেক মানুষই তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। স্বর্ণ পদক জয় করতে না পরার হতাশা কাটিয়ে দিয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন অলিম্পিক মূল্যবোধ তাঁকে শিখিয়েছিল, শ্যুটারের প্রতিযোগিতায় অংশ না নিলেও তাঁর মধ্যে যে মূল্যবোধ তৈরি হয়েছে তা তাঁকে ছেড়ে কোনও দিনও যাবে না। সততা আর সততার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা তাঁকে সারাজীবনে একটি জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখবে। তিনি আরও বলেছেন, খেলাধূলা এমনই একটা জিনিস যা বিশ্বকে সবার জন্য একটি ভাল জায়গা করতে তুলতে পারে।

অভিনব বিন্দ্রা বলেছেন, তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস হল অলিম্পিয়ান হওয়ার জন্য তাঁর যে মূল্যবোধ আর প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা তৈরি হয়েছে তা দেশের আগামী প্রজন্মকে দিতে হবে। আর সেই মিশনের কথা মাথায় রেখেই এক বছর আগে অভিনব বিন্দ্রা ফাউন্ডেশন চালু করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ও ওড়িশা সরকারের স্কুল ও গণশিক্ষা বিভাগের সঙ্গে অংশীদারিত্বে এটি ভারতে চালু হয়েছে। যার নাম অলিম্পিক ভ্যালুস এডুকেশন প্রোগ্রাম। এই সংস্থা ওড়িশার ৯০টি স্কুলের প্রায় ৫০ হাজার শিশুকে নিয়ে জ কাজ করছে। সেখানেই তিনি শিশুদের সাফল্যের মধ্যে নিজের সাফল্য দেখতে পান।

অলিম্পিক ভ্যালুস এডুকেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্কুলগুলিতে শারীরিক কার্যকলাপ ৫০ শতাংশ বাড়ান হয়েছে। মাত্র তিন মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১২ শতাংশ বেড়েছে। ভারতে আলিম্পিক ভ্যালুস এডুকেশন প্রোগ্রাম চালু করার মূল লক্ষ্যই হল ছাত্র-ছাত্রী নির্বিশেষে সকলের মধ্যে একটি সঠিক মূল্যবোধ তৈরি করা। তারই ফলশ্রুতি ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মেয়েরা অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিল। শারীরিকভাবে বিশেষ সক্ষমদের মাঠে নিয়ে আসা ছেকে শুরু করে জেলার প্রতিনিধিত্ব- সর্বক্ষেত্রে ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছিল মেয়েরা।

২০২২ সালে এই প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছিল। সেই সময় ভারতীয় অলিম্পিক ফাউন্ডেশন ফর কালচার অ্যান্ড হেরিটেজের একটি দল ১৫০ জনেরও বেশি শারীর শিক্ষার শিক্ষককে নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। মূল উদ্দেশ্য ছিল এটি করা হয়েছিল ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য, এবং এটি নিশ্চিত করার জন্য যে প্রোগ্রামটি "বিশেষজ্ঞদের" দ্বারা বিতরণ করা হবে না যারা সংখ্যায় লগ ইন করে অদৃশ্য হয়ে যাবে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং শারীরিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করার পাশাপাশি, এই "মাস্টার প্রশিক্ষক" খেলাধুলা এমন একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে যার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি এবং সম্মানের পাঠগুলি শিশু এবং শিক্ষকদের জন্য বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়েছিল। সাপ্তাহিক পিই ক্লাসটি নতুন এবং মজার কিছু হয়ে উঠেছে।

অলিম্পিক ভ্যালুজ এডুকেশন প্রোগ্রাম-এর কিছু মৌলিক বিষয় রয়েছে। সেগুলি হল প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে – লিঙ্গ বা শারীরিক সক্ষমতা নির্বিশেষে – অবশ্যই প্রত্যেক বিষয়ে অংশ নিতে হবে। OVEP স্কুলগুলি ফুটবল এবং হকির মতো প্রধান দলগত খেলায় এবং কাবাডি, খো-খো, পিঠু, লাঘোরি এবং এমনকি ক্রিকেটের মতো দেশীয় খেলাগুলিতেও অংশ নেয়। মৌলিক নীতিগুলি হল অন্তর্ভুক্তি, কার্যকলাপ এবং সহযোগিতা, স্কোরিং, জেতা এবং পরাজয় গৌণ। উদাহরণস্বরূপ, সহ-শিক্ষা বিদ্যালয়ে, মেয়েদের অবশ্যই প্রতিটি দলের অংশ হতে হবে। OVEP খেলোয়াড়দের মধ্যে একটি সমঝতা তৈরি করে। সেখানে একক গোলদাতা তেমন কোনও গুরুত্ব পায় না। যে শিক্ষার্থী বেশি বল এগিয়ে দেবে তাকেই জয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্যই হল ধারাবাহিকতা তৈরি করা। জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তনগুলি মেনে নেওয়া। এই কর্মসূচির মাধ্যমে হাজার স্কুল ছাত্রীর মধ্যে উৎসহ তৈরি করা হয়। আশা করা হচ্ছে ১৫০০০০ এর বেশি স্কুল ছাত্রীকে এই কর্মসূচি প্রভাবিত করবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভারত অলিম্পিক আন্দোলন থেকে কিছু লাভ করবে বলেও আশা করা হচ্ছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভবিষ্যতের অলিম্পিয়ান তৈরির আশাও রয়েছে।

এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে অলিম্পিজিমের সারাংশ পৌঁছে দেওয়াই এই কর্মসূচির দায়িত্ব। পাশাপাশি খেলাধূলার দক্ষতা পরিচয় , সংস্কৃতি পটভূমি তৈরি করারও উদ্যোগ নেওয়া হবে এই কর্মসূচির মাধ্যমে। খেলাধুলার মাধ্যমে সাধারণ স্থল খোঁজা - শারীরিক এবং মানসিক দলগত কাজ, বন্ধুত্ব, অংশীদারিত্ব, এবং একসাথে উচ্চ এবং নিম্ন অভিজ্ঞতা সহ - চূড়ান্ত লক্ষ্য। অভিনব বিন্দ্রা জানিয়েছেন অলিম্পিক এমন একটা বিষয় যা আমাদের দেখায় বিশ্বে যা হবে তা আমরাই তৈরি করি। অলিম্পিক মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে শেখায়।