সংক্ষিপ্ত
কমনওয়েলথ গেমসে (Commonwealth Games 2022) লন বলে (Lawn Bowl) সোনা জিতেছে ভারতীয় মহিলা দল। প্রথমবার এই পদক জিতে ইতিহাস তৈরি করেছে ভারতীয় মেয়েরা। জেনে নিন এই চার নারীর জীবন সংগ্রাম।
কমনওয়েলথ গেমস ২০২২-এ লন বোলে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে ভারতীয় মহিলা দল। ফাইনালে ৭-১০ ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সোনা জিতেছেন লাভলি চৌবে, রূপা রানী তিরকে, পিঙ্কি কৌশিক সিং, নয়ন মনি সাইকিয়ারা। যে খেলা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না, সেই খেলাতেই আজ ভারতেপ নাম বিশ্ব দরবারে পৌছে দিয়েছেন এই চার নারী। সোনা জয়ের পর থেকেই রাতারাতি তারকা হয়ে উঠেছেন রূপা, পিঙ্কি, নয়নমণি, লাভলিরা। তাই তাদের বিষয়ে জানার কৌতুহলও কম নয় সকলের। অন্যান্য খেলার খেলোয়ারদের থেকে তাদেরও জীবন সংগ্রাম কম কিছু নয়।
লাভলি চৌবে-
ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে ১৯৮০ সালের ৩ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন লাভলি চৌবে। বাবা কোল ইন্ডিয়ার একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। মা গৃহবধূ। লাভলি ঝাড়খণ্ডেই তার পড়াশোনা ও বড় হয়ে ওঠা। ঝাড়খণ্ডের লাভলি তার ক্যারিয়ারে লং জাম্প করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। কিন্তু কঠোর প্রশিক্ষণের কারণে আঘাত পেয়ে নিজের সেই ইচ্ছা ভেঙে যায়। ঝাড়খণ্ড পুলিশে, কনস্টেবল লাভলি একজন ক্রিকেট আম্পায়ারের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছিলেন, যিনি কয়েক বছর আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে স্টিভ ওয়াকে প্রথমবার লন বল খেলতে দেখেছিলেন এবং তারপরে এই খেলায় কোচিংকে তার ক্যারিয়ার তৈরি করেছিলেন। মধুকান্ত পাঠক লাভলীকে এই খেলার জন্য ডাকেন এবং ধীরে ধীরে এটি লাভলীকে আকৃষ্ট করে।লন বাউলে তিনি ২০০৮ সালে জাতীয় স্তরে প্রথম অংশ নেন সেখানেই তিনি সোনা জেতেন। ২০১৩ সালে এশিয়া প্যাসিফিক লন বাউলে মিক্সড ইভেন্টে প্রথম হয়েছিলেন। ২০১৪ কমনওয়েলথে মহিলাদের ট্রিপল এবং মহিলাদের চার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে তিনি যথাক্রমে তৃতীয় এবং চতুর্থ পুলে শেষ করেছিলেন। তিনি একই বছর মহিলাদের ডাবল, এবং একক ইভেন্টে এশিয়ান লন বোলস চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি রৌপ্য পদক জিতেছিলেন। ২০১৮ সালে কমনওয়েলথে তিনি পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন। এবার ২০২২ এসে অবশেষে সোনা প্রাপ্তি।
রূপা রানী তিরকে-
রূপা রানী তিরকে ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ সালে ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলে বেলায় বাবাকে হারান তিনি। রূপার মা পোস্ট অফিসে বাবার চাকরিটি পান। রিমা রানী তিরকে নামে এক বোন রয়েছে রূপার। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্সে পড়াশোনা করেছেন। ২০২২ সালে রূপ রানী অমৃত মিঞ্জ নামে এক ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করেন। রূপা রানী লন বোলে খেলার আগে কাবাডি খেলতেন। তার পর তিনি ধীরে ধীরে লন বলের প্রতি আকর্ষিত হন। ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক বোলস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন এবং ট্রিপল এবং চার বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৯ এশিয়া প্যাসিফিক বোলস চ্যাম্পিয়নশিপে ট্রিপলে একটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছিলেন। ২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং চতুর্থ স্থানে শেষ করেছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে আরও একবার কমনওয়েলথ গেমসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সেবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে, যেখানে তিনি ট্রিপলে নবম এবং চার জনে চতুর্দশ স্থানে ছিলেন। গত কমনওয়েলথে আশানরূপ পারফর্ম করতে পারেননি তিনি। তবে ২০২২ -এ ইতিহাস তৈরি করে স্বপ্নপূরণ হওয়ায় খুশি তিনি।
পিঙ্কি কৌশিক সিং-
১৯৮০ সালে ১৪ অগাস্ট জন্ম পিঙ্কি কৌশিক সিংয়ের। বর্তমানে ৪১ বছর বয়সী পিঙ্কি দিল্লির একটি স্কুলের শারীর শিক্ষার শিক্ষিকা।সিং, দিল্লির একজন 41 বছর বয়সী স্থানীয় যিনি দিল্লির একটি স্কুলে শারীরিক শিক্ষা শেখান, ২০০৯ সালে এশিয়া প্যাসিফিক বোলস চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জিতে তার প্রথম আন্তর্জাতিক গৌরবের স্বাদ দেখেছিলেন। পিঙ্কি কৌশিক সিং এই নিয়ে চতুর্থবার কমনওয়েলথ গেমসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০১০ কমনওয়লেথ গেমসে তিনি ট্রিপল ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন এবং চতুর্থ স্থানে শেষ করেছিলেন। ২০১৪ ও ২০১৮ কমনওয়েসলথ গেমসেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আশানরুপ ফল আসেনি। ২০২২-এ স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুশি পিঙ্কি কৌশিক সিং।
নয়ন মনি সাইকিয়া-
নয়ন মনি সাইকিয়া আসামের গোলাঘাটে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা একজন কৃষক, এবং মা একজন গৃহবধূ। ছোটবেলা থেকেই তিনি খেলাধুলার প্রতি অনুরাগী ছিলেন। নয়ন মণি ২০০৮ সালে ভারোত্তোলনের মাধ্যমে খেলাধুলায় তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু পায়ে আঘাতের কারণে ভারোত্তলন বেশি দিন চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে তিনি লন বাউল খেলাকে বেছে নেন। সময়ের সাথে সাথে লন বাউলে তিনি দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং তিনি জাতীয় দলের মূল খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। ২০২২ কমনওয়েলথে সোনা জিতে খুশি নয়ন মনি সাইকিয়া।
আরও পড়ুনঃকমনওয়েলথে সোনা জিতে তৈরি করেছে নতুন ইতিহাস, সেই লন বলের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমএস ধোনিরও