সংক্ষিপ্ত
বিজনোরে তিন মাস ধরে নিখোঁজ কিশোরের হত্যার রহস্য উন্মোচন। খুড়তুতো ভাই সন্দেহ ও পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে খুন করেছে।
বিজনোর। ধামপুর থানার মটৌরা মান গ্রামে তিন মাস ধরে নিখোঁজ ১৭ বছর বয়সী অনমোলের হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, অন্য কেউ নয়, তারই খুড়তুতো ভাই অমিত তাকে খুন করেছে। কারণ, সন্দেহ এবং পারিবারিক সম্মান। অমিতের সন্দেহ ছিল অনমোলের সঙ্গে তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এই কারণেই সে এই জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করে।
নিখোঁজ থেকে হত্যা: তিন মাসের রহস্য
গত ১ নভেম্বর ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র অনমোল রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে, কিন্তু পরের দিন তার লাশ গাঙ্গন নদীতে ভেসে ওঠে। এরপর পরিবার ধামপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। যদিও পুলিশ কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পায়নি, ফলে তদন্ত দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে ছিল।
তিন মাসের তীব্র তদন্তের পর পুলিশের সন্দেহের তীর অনমোলের খুড়তুতো ভাই অমিতের দিকে যায়। অমিতকে কড়া জেরার মুখে সে সত্য কবুল করে এবং সমস্ত হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে।
অভিযুক্ত অমিত পুলিশকে কী বলেছে?
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে অমিত স্বীকার করেছে যে তার খুড়তুতো ভাই অনমোল এবং তার স্ত্রীর মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক আছে বলে তার সন্দেহ ছিল। সে জানিয়েছে, এর আগেও সে দুজনকে বেশ কয়েকবার আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছে। এ নিয়ে সে অনমোলকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু অনমোল এড়িয়ে গেছে।
হত্যার রাত: যখন সন্দেহ প্রাণ কেড়ে নিল
১ নভেম্বর রাতে অমিত আবারও অনমোলকে তার স্ত্রীর সঙ্গে সন্দেহজনক অবস্থায় দেখতে পায়। এটা দেখে সে বেরিয়ে হয়ে যায়। রাগের মাথায় সে অনমোলকে মারধর শুরু করে এবং তারপর লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করে।
হত্যার পর অমিত সারাদিন লাশ বাড়িতে লুকিয়ে রাখে। এই সময় অনমোলের পরিবার যখন তার খোঁজ করছিল, তখন অমিতও তাদের সঙ্গে নাটক করে। রাতে সে তার চাচা শ্রবণ এবং চাচাতো ভাই অঙ্কিতকে ‘পরিবারের ইজ্জত’র কথা বলে নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়। তারপর তিনজনে মিলে রাস্তা দিয়ে অনমোলের লাশ গঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়।
পুলিশ কীভাবে মামলাটির সমাধান করেছে?
মামলার তদন্তে পুলিশ সবচেয়ে বড় তথ্য পায় যখন কল রেকর্ড এবং লোকেশন ট্র্যাকিংয়ে অমিতের কার্যকলাপ সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়। এরপর তাকে কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে ভেঙে পড়ে এবং সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে। পুলিশ অমিত, তার চাচা শ্রবণ এবং খুড়তুতো ভাই অঙ্কিতকে গ্রেপ্তার করেছে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে গ্রামে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে এবং লোকজন এটিকে ‘ভাইয়ের হাতে ভাইয়ের নৃশংস হত্যা’ হিসেবে দেখছে। পুলিশ জানিয়েছে, মামলার গভীর তদন্ত চলছে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য চার্জশিট দাখিল করা হবে।