সংক্ষিপ্ত
মদের দোকানে 'একটা কিনলে একটা ফ্রি' অফার! এই খবরে দোকানে ক্রেতাদের বিশাল ভিড় দেখা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। মার্চের শেষ হওয়ার আগেই স্টক শেষ করতে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে।
উত্তর প্রদেশে বছর শেষের স্টক ক্লিয়ারেন্সের জন্য মদের দোকানগুলোতে 'একটা কিনলে একটা ফ্রি' অফার দেওয়ায় অপ্রত্যাশিত ভিড় দেখা যায়।
মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে, মদের দোকানের বাইরে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উৎসুক ক্রেতারা তাদের ভাগ পেতে এতটাই মরিয়া হয়ে ওঠে যে, অনেকে এই সুযোগ হাতছাড়া না করার জন্য কাজ থেকেও ছুটি নেয়।
এই সীমিত সময়ের অফারটি, যা মূলত দোকান মালিকদের আর্থিক বছর শেষ হওয়ার আগে অবিক্রিত স্টক ক্লিয়ার করার একটি কৌশল ছিল, তা রাজ্য জুড়ে এক উৎসবে পরিণত হয়। ৩১ মার্চ মদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, বিক্রেতাদের কাছে পুরনো স্টক বিক্রি করে দেওয়ার এটাই ছিল শেষ সুযোগ। উত্তর প্রদেশ সরকার আগের নিয়ম পরিবর্তন করে লাইসেন্স নবায়নের জন্য অনলাইন লটারি সিস্টেম চালু করেছে।
মুজাফফরনগরের আবগারি পরিদর্শক অনিল কুমার জানান, ৩১ মার্চের পর নতুন লাইসেন্স না পেলে পুরনো স্টক বিক্রি করা যাবে না। টাইমস অফ ইন্ডিয়া (TOI)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, “আগের বছরগুলোতে লাইসেন্স অটোমেটিকভাবে নবায়ন হয়ে যেত। কিন্তু এবার উত্তর প্রদেশ সরকার মদ, দেশি মদ ও ভাং বিক্রির জন্য অনলাইন লটারি চালু করেছে। এখনও পর্যন্ত ১৫,৬০৯টি দেশি মদের দোকান, ৯,৩৪১টি ইংরেজি মদ ও বিয়ারের দোকান, ১,৩১৭টি ভাং-এর দোকান এবং ৪৩০টি মডেল শপ অনুমোদন পেয়েছে,” তিনি জানান।
মুজাফফরনগরে 'একটা কিনলে একটা ফ্রি' অফারের কথা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেতারা দোকানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল যেন ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেল চলছে। সকলে স্টক করার জন্য এবং নতুন লাইসেন্সে দাম বেড়ে যাওয়ার আগেই সুযোগটি নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
স্থানীয় এক ক্রেতা হরি শঙ্কর, যিনি ভিড় ঠেলে নিজের মদের বোতল কিনতে পেরেছেন, তিনি বলেন, “আগে দোকানের লাইসেন্স অটোমেটিকভাবে নবায়ন হয়ে যেত, কিন্তু এবার লটারি সিস্টেম চালু হয়েছে। তাই দোকানদাররা এই অফার দিচ্ছে। আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন মানুষ কিভাবে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি দুধ বিক্রেতারাও আজ কিছু বিক্রি করতে পারছে না, কিন্তু মদের বিক্রি বেড়ে গেছে।”
নয়ডার সেক্টর ১৩৭-এর বাসিন্দা রবীন্দ্র কুমার জানান, মানুষজন কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বা তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে মদের দোকানে ভিড় করছে। “সবার মনে একটাই চিন্তা, এই দামে আর এক বছর মদ পাওয়া যাবে না। নতুন লাইসেন্স চালু হলে দাম আবার বেড়ে যাবে। আমিও কয়েকটা বোতল কিনেছি,” তিনি দ্বিধা ছাড়াই বলেন।
আরেক ক্রেতা রাহুল কুমার জানান, প্রথমে ২৫ মার্চ পর্যন্ত এই অফার দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরে তা আরও পাঁচ দিন বাড়ানো হয়েছে। “এখন আরও কম দামে বিক্রি হচ্ছে। দোকান সকাল ১১টায় খুললেও, মানুষ সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে। যারা সাধারণত দেশি মদ কেনে, তারাও আজ স্কচ কিনছে,” তিনি আরও বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা জানান, মদের বিক্রি আকাশ ছুঁয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় কোনো কোনো দোকানে পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি বিক্রি হয়েছে। “আমরা রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখছি, কালকে হিসাব মেলানোর পর আসল সংখ্যাটা জানা যাবে,” তিনি জানান।
এত ভিড় হওয়া সত্ত্বেও, পুলিশ জানিয়েছে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ সুপার সত্যনারায়ণ প্রজাপতি জানান, “এখনো পর্যন্ত কোনো ঘটনা ঘটেনি, তবে আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মদের দোকানের আশেপাশে অফিসার মোতায়েন করেছি।” ৩১ মার্চ যত এগিয়ে আসছে, ছাড়ের আশায় মদের দোকানে ভিড় ততই বাড়ছে। উত্তর প্রদেশের আবগারি ব্যবস্থায় মদের দোকানগুলো অর্থনীতির অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠছে।