UPI ব্যবহার করার জন্য চার্জ লাগবে বলেও সম্প্রতি খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। রইল ইউপিআই-এর মাধ্যমে লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য 

UPI- আধুনিক ভারতের লেনদেনের সবথেকে জনপ্রিয় মাধ্যম। এর পুরো কথা হল ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস। নগদবিহীন অর্থনীতি চালু করার জন্য এই ব্যবস্থার সূচনা। মোদী সরকারে আমলেই চালু হয়েছে ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস। আপনার হাতের স্মার্ট ফোনটিকেই ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আসুন জেনেনি কি এই UPI? কী ভাবেই আর্থিক লেনদেন হয় ?

UPI লেনদেন - ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস হল একটি পেমেন্ট সিস্টেম যা ব্যবহারকারীদের একটি স্মার্টফোন অ্যাপে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করতে হবে। IFSC বা অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রদান না করেই টাকা এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠান যায়। এটি একটি রিয়েল টাইম পেমেন্ট সিস্টেম।

এগিয়ে ভারত-

২০২২ সালে গোটা বিশ্বে রিয়েলট টাইম পেমেন্ট ট্রান্সফার হয়েছিল ১৯৫০০ কোটি টাকা। যারমধ্যে শুধুমাত্র ভারতে রিয়েসটাইম পেমেন্ট ট্রান্সপার হয়েছিল ৮৯৫০ কোটি টাকা। যার অর্থ মোট লেনদেনের ৪৮ শতাংশ ভারতে হয়েছিল।

কী করে রিয়েল টাইম ট্রান্সফার হয়-

UPI ভারতে তৈরি হওয়া বিশ্বের সঙ্গে তালমেলান একটি আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা। এটি ডিজিটাল ভারত স্লোগানকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই ব্যবস্থা চারটি ক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যিনি টাকা দেবেন তিনি, তাঁর ব্যাঙ্ক আর যাকে টাকা দেবেন বা যে সংস্থাকে টাকা দেবেন ও তাঁর ব্যাঙ্ক।

যিনি টাকা দেবেন- তিনি পেয়ার- যাঁকে টাকা দেবেন অর্থাৎ পেই। আর রয়েছে বেনমিফিসারি ব্যাঙ্ক যে ব্যাঙ্কে টাকা পাঠান হবে। ও রেমিটার আর্থাৎ যিনি টাকা দিচ্ছেন তাঁর ব্যাঙ্ক।

কোনো লেনদেন করার জন্য ব্যবহারকারীকে শুধুমাত্র একটি ভার্চুয়াল ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে, যা ভার্চুয়াল পেমেন্ট অ্যাড্রেস (VPA) নামে পরিচিত। UPI ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI) দ্বারা তৈরি করা হয়েছে এবং এটি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। UPI ধীরে ধীরে ডিজিটাল পেমেন্টের সবচেয়ে পছন্দের ফর্ম হয়ে উঠছে।

গুগল পে , ফোন পে - এজাতীয় অ্যাপের মাধ্যমে টাকা এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্যত্র পাঠান যায়।

একটি সক্রিয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মোবাইল নম্বরটি অবশ্যই সক্রিয় এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে

ইন্টারনেট সংযোগ। যে টাকা পাঠাচ্ছে আর যাকে টাকা পাঠান হচ্ছে দুজনেই এই ব্যবস্থাগুলি থাকতে হবে। যাকে টাকা দেবেন তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, বা কিউআরএল কোড বা মোবাইল ফোন নম্বর- তিনটি যে কোনও একটি থাকতে হবে আপনার কাছে।

আপনি যদি টাকা পাঠান তাহলে প্রথমে আপনি টাকার অঙ্ক লিখবেন তারপর টাকা পাঠানোর অনুরোধ করবেন। তারপর সেই অনুরোধ প্রথমে যাবে আপনার ব্যাঙ্কেয তারপর এনপিসিআই হয়ে যাবে যাকে টাকা দিচ্ছেন তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। তবে এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল এনপিসিআই এর কাছে আপনার ও যাকে টাকা দিচ্ছেন দুজনেরই ফোন নম্বর আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য রয়েছে। তারপর UPIএর মাধ্যমে দুটি ব্যাঙ্কার তথ্য খতিয়ে দেখেই আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হবে।দুটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই ও মোবাইল ফোনেও সেই তথ্য আদান প্রদান হবে। এই পুরো ঘটনাটি ঘটতে মাত্র ৬ সেকেন্ড সময় লাগে।

Scroll to load tweet…

UPIতে জোর মোদী সরকারের

UPIকে জনপ্রিয় করতে মোদী সরকার একাধিক পদক্ষেপ করেছিল। নরেন্দ্র মোদী প্রথম এই লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন।প্রধানমন্ত্রী নিজি ধন মেলা চালু করেছিলেন। এর অধীনে ১০০ দিনে ১০০ জেলায় ১০০টি মেলা হয়েছিল। মোদী তাঁর মন্ত্রীদের এই বিষয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর মন্ত্রীরা কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী তাঁর লক্ষ্য়ে অবিচল ছিলেন। এর জন্য গ্রামীণ এলাকায় কাজ করা হয়েছিল। মেট্রো সিটি থেকে ছোট গ্রামগুলিতেও UPI ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দোকানদার ও সাধারণ মানুষকেও UPI সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।

ভুল খবর

UPI ব্যবহার করার জন্য চার্জ লাগবে বলেও সম্প্রতি খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। বলা হয়েছিল একসঙ্গে ২০০০ টাকার টাকা বেশি ট্রান্সফারের জন্য চার্জ দিতে হবে। কিন্তু এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। এখন থেকে পিপিআই ওয়ালেট থেকেই এই ব্যবস্থা ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে মার্চেন্টদের ট্যাক্স দিতে হবে।

২০২২-২৩ সালে UPIআর মাধ্যমে ২০৫০ লক্ষ কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন হয়েছে।

২০২১ সালে ৩৮০০ কোটি আর্থিক লেনদেন হয়েছে।

২০২২ সালে ৭৪০৪ কোটি আর্থিক লেনদেন হয়েছে।

২০২৫ সালে ২৫ হাজার কোটি আর্থিক লেনদেন হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।