সংক্ষিপ্ত
'ডক্টর কুল'-এর আসল নাম ডঃ সৌদ ঘানি। তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক। কাতার ন্যাশনাল রিসার্চ ফান্ড (QNRF) গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। যার ফলে আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়ামগুলিতে শীতল প্রযুক্তি সম্ভব হয়েছে।
কোনও স্টেডিয়াম (Stadium) যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (Cooling Technologies) হবে তা প্রায় ভাবাই যায় না। আর এবার তাই করে দেখালেন 'ডক্টর কুল' (Doctor Cool)। ফিফা বিশ্বকাপ কাতার ২০২২ (FIFA World Cup Qatar 2022) স্টেডিয়ামগুলি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার পিছনে রয়েছেন তিনিই। যদিও সেই কাজ একেবারেই সহজ ছিল তাঁর কাছে। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। অবশেষে অনেক চেষ্টার পর তা করে দেখিয়েছেন তিনি। কীভাবে তিনি একটি মাঠকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করেছেন তা বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন।
'ডক্টর কুল'-এর আসল নাম ডঃ সৌদ ঘানি (Saud Ghani)। তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের (Qatar University) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক। কাতার ন্যাশনাল রিসার্চ ফান্ড (Qatar National Research Fund) গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। যার ফলে আসন্ন বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়ামগুলিতে শীতল প্রযুক্তি সম্ভব হয়েছে। ঘানি জানিয়েছেন, "একটি খোলা স্টেডিয়ামের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ডিজাইন করা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজাইনের বাড়িগুলি আগে কখনও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম ডিজাইন করেনি, তাই সত্যিই, এটা ছিল আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জের। আর অনেক ধৈর্য ধরে, বহু চেষ্টার পর আমরা এটা কের দেখিয়েছি।"
আরও পড়ুন- মাটি রক্ষা আন্দোলন নিয়ে ক্রিকেট মাঠে সদগুরু, সঙ্গে বথাম ও ভিভ রিচার্ডস
ঘানির পরিকল্পনা ছিল স্টেডিয়ামের মধ্যে একটি মাইক্রোক্লাইমেট বাবল তৈরি করা এবং সেটিকে সেখানে বজায় রাখা। যেটা খোলা আকাশের নিচে করাটা খুবই কঠিন বিষয়। তিনি বলেন, "চারপাশ খোলা একটি স্টেডিয়ামকে শীতল করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হল বাইরের উষ্ণ বাতাস যাতে এই স্টেডিয়ামের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। ভিতরের মাইক্রো বাবল এবং বাইরের ম্যাক্রো জলবায়ুর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সীমানা নির্ধারণ করা। আসলে সবার আগে আমাদের স্টেডিয়ামটিকে ভালো করে বোঝা দরকার ছিল। যার ফলে গরম বাতাসকে সেখানে প্রবেশের হাত থেকে রক্ষা করা যায়।"
পরিকল্পনা মতোই কাজ শুরু করে দিয়েছিল ঘানির দল। বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তাবিত স্টেডিয়ামের 3D-প্রিন্টিং স্কেল মডেলের মাধ্যমে শুরু হয় কাজ। এই মডেলগুলি বায়ুর গতি পরীক্ষার জন্য একটি বায়ু সুড়ঙ্গে রাখা হয়েছিল। যার মাধ্যনে দেখা হয় যে বাহ্যিক বাতাসের সঙ্গে এটি কীভাবে কাজ করছে। আর কীভাবে এটির আরও উন্নতি সম্ভব। ঘানি বলেন, "3D প্রিন্টেড মডেলটি বায়ু সুড়ঙ্গে রাখার পরে দেখা যায় সেটি বিভিন্ন দিক থেকে চাপ দিয়ে বাতাস বাইরের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। তারপর আমরা লেজারের শিট এবং ক্যামেরা ব্যবহার করেছি ডিজাইনের উপর দিয়ে বাতাসের প্রবাহ বিশ্লেষণ করার জন্য। এমনকী, স্টেডিয়াম থেকে বায়ু প্রবেশের এবং বেরিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিও দেখা হয়েছে।"
আরও পড়ুন- দিন-রাতের পিঙ্ক বল টেস্টের আগে কতটা তৈরি ভারত, ছবিতে দেখুন টিম ইন্ডিয়ার অনুশীলন
প্রতিটি স্তরে তাপমাত্রা কী হবে তা দেখতে একটি কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিক্স সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এরপর দর্শকদের সংখ্যা এবং ঘাম হবে এমন জিনিসও মাঠের মধ্যে রাখা হয়। বিভিন্ন ভাবেই বিষয়গুলিকে দেখা হয়। স্টেডিয়ামগুলির অভিযোজিত অ্যারোডাইনামিক ডিজাইন স্টেডিয়ামের মধ্যে শীতলকরণ প্রক্রিয়াটিকে সমর্থন করবে তা নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এর বিরুদ্ধে কাজ করার পরিবর্তে। এই পদক্ষেপের সাহায্যে অ-প্রযুক্তিগত দিকগুলিও সংশোধন করা হয়েছিল। ঘানি বলেন, "আল বাইত স্টেডিয়ামে, প্রাথমিক নকশায় গাঢ় রং করা হয়েছিল। কিন্তু, পরে হালকা ছায়ায় পরিবর্তন করা হয়। আর এই সাধারণ পরিবর্তনটি ভিতরের তাপমাত্রাকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে এনেছে। যা এক কথায় আমাদের কাছে জয় ছিল।"
আরও পড়ুন- রাশিয়ায় বন্ধ হতে পারে ইনস্টাগ্রাম, রাশিয়ানদের হত্যার হুমকির অভিযোগে মেটার বিরুদ্ধে মামলা
এর পরবর্তী পদক্ষেপটি ছিল প্রকৃত কুলিং সিস্টেমে কাজ শুরু করা। যা স্টেডিয়ামগুলির অভ্যন্তরে একটি মাইক্রোক্লিমেট তৈরি করবে। ঘানি জানিয়েছেন, “আমাদের খেলার মাঠ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দর্শক বসার স্তর থেকে দুই মিটার উচ্চতায় যেতে হবে। পুরো খোলা জায়গা ঠান্ডা করার জন্য প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা বাতাস পাম্প করা সর্বোত্তমভাবে অক্ষত। আমরা সঠিক জায়গায় সঠিক পরিমাণে ঠান্ডা বাতাস পাম্প করি, এটি বজায় রাখি তারপরে এটি পুনর্ব্যবহারও করি।" তিনি একটি স্পট কুলিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করেছিলেন - যেটি শুধুমাত্র কয়েকটি এলাকাকে ঠান্ডা করে। ব্যাপক গবেষণা ও পরীক্ষার পর, দলটি একটি অত্যাধুনিক কুলিং প্রযুক্তি নিয়ে আসে যা পিচের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের উপরও ঠান্ডা বাতাস ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। প্রতিটি দর্শকের আসনের নিচে ছোট এয়ার ডিফিউজার দিয়ে ঠান্ডা বাতাসকে বাইরে ঠেলে দেয়।" ঘানির পদ্ধতি শুধু উদ্ভাবনীই নয়, টেকসইও। বায়ু সঞ্চালন কৌশল ব্যবহার করে, বাতাসকে ধাক্কা দেওয়ার আগে আবার ফিরিয়ে আনা হয় এবং পুনরায় ঠান্ডা করা হয়। আর এভাবেই খোলা আকাশের নিচে একটা স্টেডিয়ামকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করেন তিনি।