সংক্ষিপ্ত

  • অল্প ছুটি হাতে পেলে ঘুরে আসুন বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্য
  • প্রকৃতি, হরিণ, পাখি, প্রজাপতি স্বাগত জানাবে আপনাকে
  • কম খরচে, মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টার পথ পেরিয়ে পৌঁছে যান নদীয়া জেলার এই জঙ্গলে

কলকাতার কাছেই কোথায় যাওয়া যায় অল্প কয়েকদিনের ছুটিতে? এই প্রশ্ন নিরন্তর তাড়িয়ে বেড়ায় আমাদের যদি হাতে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো দু-একদিনের ছুটির সম্ভাবনা উঁকি দেয়। কম খরচে, কম দিনের ছুটিতে যাওয়া যায় এমন জায়গা আছে হাতের কাছে অনেকগুলোই, কেবল খবরটুকু রাখতে হবে।

এমন ছুটির খবর পেলে চলে যান নদীয়া জেলার বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্য। ১৬৭ একরের এই বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণ ও গাছেদের সঙ্গে কাটিয়ে আসুন নিরিবিলি একমুঠো অবসর। শাল সেগুন, মেহগনি, অর্জুন, নাগকেশর, পিয়াশাল গাছেরা মিলেমিশে সবুজ করে দেবে আপনার অবসর যাপন। কতরকমের জানা, অজানা পাখির ডাক ভুলিয়ে দেবে শহরের একমাত্রিক জীবন। 

 এখানে এলে হরিণের দেখা পাওয়া যাবে নিশ্চিতভাবে। চিতল হরিণ এই জঙ্গলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এছাড়াও বনবিড়াল, খরগোশ, ময়ূর, ঘড়িয়াল, পাইথন, শুয়োর প্রভৃতি বন্যপ্রাণ এই জঙ্গলে আছে।

বেথুয়া একটি শাকের নাম, আর ডহরী মানে জলাশয়। এই শাকের জলাভূমি ছিল বেথুয়াডহরী। নামকরণ সেখান থেকেই।  এই জঙ্গলের মধ্যে আছে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নামাংকিত মিউজিয়াম। প্রাণী সংরক্ষণ সম্বন্ধিত অনেক তথ্য পাওয়া যাবে এখানে।

বিকেল পাঁচটা ও সকাল সাতটার সময় এই জঙ্গলে হরিণদের খেতে দেওয়া হয় এবং সাধারণ পর্যটকদের তখন জঙ্গলের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয় না। ওইসময়ই হল হরিণ দেখতে পাওয়ার আদর্শ সময়। যদি জঙ্গলের মধ্যে বনবাংলোয় থাকা যায় তাহলে হরিণ দেখতে পাওয়া যাবেই। জঙ্গলের নিয়ম মেনে চললে অনেক অপরূপ দৃশ্যের সাক্ষী হওয়া যায়।  সন্ধেবেলায় বনবাংলোর আসেপাশে চলে আসে হরিণের দল। সে হবে উপরি পাওনা। 

সেলিম আলি সাহেবের নামে যে পথ আছে সেই পথের সামনেই বিরাট খাঁচার মধ্যে আছে  ময়ূর, খরগোশ, নীলগাই ও নানা পাখি। এদের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, তবে জঙ্গলে এসে অনেকেরই খাঁচার ভেতর আটকে থাকা প্রাণী দেখতে মন সায় দেয় না।

জঙ্গলের পথে নিশ্চুপে ঘুরতে ঘুরতে, মনের ক্যামেরায় আঁকা হতে থাকে ছবি, এবং হাতে থাকা ক্যামেরায় ছবি তুলতে তুলতে দেখে নিতে পারেন ঘড়িয়াল পুকুর। তাদের অখন্ড অবসর যাপনে বিন্দুমাত্র হেলদোল দেখা দেয় না পর্যটকদের আগমনে। রোদ পোহায় তারা যতক্ষণ ইচ্ছে। এখানেই কচ্ছপের দেখা মিলবে। তারাও কুমিরদের মতোই অনন্তকাল বসে থাকে নিশ্চল হয়ে।
আধা রোদ, অর্ধেক ছায়া বনপথের ওপর লুটিয়ে পড়ে। জঙ্গলের গন্ধ বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে গাছের ফাঁকে, ধূসর -সবুজ পথে। প্রজাপতি রঙ নিয়ে আসে পাখায় পাখায়, ঘিরে ধরে আচমকাই। ঠিক তখনই মনে হয় ফিরে না যাওয়াই ছিল ভালো। তবুও ফিরে যেতে হয়...।


কীভাবে যাবেন- শিয়ালদহ থেকে লালগোলাগামী ট্রেনে করে পৌঁছে যান বেথুয়াডহরী। সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘন্টা। এস্প্ল্যানেড থেকে বাসে করেও যাওয়া যায়। আর গাড়ি করে যেতে হলে এনএইচ ৩৪ হয়ে কৃষ্ণনগর হয়ে পৌঁছে যান বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্য। 

কোথায় থাকবেন- ডব্লিউএসএফডি-এর কটেজ আছে জঙ্গলের মধ্যে। বেদু-ইন যাত্রীনিবাস আছে। যাওয়ার আগে বুক করে নিন থাকার জায়গা।