বার বার বলেছেন একটাই কথা, 'আমি শ্বাস নিতে পারছি না'শেষ পর্যন্ত এটাই হল তাঁর বলা শেষ কথাপ্রকাশ্য রাস্তায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের গলারয় পা চেপে হত্যা করল শ্বেতাঙ্গ পুলিশবিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা 

'আমি শ্বাস নিতে পারছি না', এটাই ছিল তাঁর বলা শেষ কথা। তারপরই আর কোনও কথা বলতে পারেনি সে। নরেন্দ্র মোদীর প্রাণের বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশে ঘটে গেল মানবতার মৃত্যু। প্রকাশ্য রাস্তায় জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গের গলা হাঁচু দিয়ে চেপে ধরে তাকে হত্যা করল শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। আর সেই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এখন তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। শুধু আমেরিকায় নয়, গোটা পৃথিবীর মানুষ এই ঘটনায় সমালোচনায় ফেটে পড়েছেন।

জানা গিয়েছে ঘটনাটি ঘঠেছে গত সোমবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা প্রদেশে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মাটিতে উল্টে হয়ে পড়ে রয়েছেন ফ্লয়েড। আর তাঁর গলা ও ঘাড়ের উপর পায়ের হাঁটু দিয়ে চেপে বসে রয়েছেন এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার। ওই অবস্থায় ফ্লয়েব বারবার একটাই কথা বলছেন, ' প্লিজ প্লিজ, আই কান্ট ব্রিথ', অর্থাৎ 'আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না'। তার গায়ে কোনও জামা ছিল না। ওই অবস্থায় তিনি জল চেয়েছিলেন। তার মুখ দিয়ে থুতু উঠে আসে, কাশি হয়। তিনি বলেন, পুলিশ অফিসারে হাঁটু দিয়ে তাঁর ঘাড়ে এবং পেটে লাগছে।

Scroll to load tweet…

সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তায় অনেকে সেই নক্করজনক দৃশ্য ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করছেন। সেই দিকে চোখও পড়ছে ওই নৃশংস পুলিশ অফিসারের। কিন্তু, ট্রাম্প যেখানে ক্ষমতায় আছেন, শ্বেতাঙ্গদের আর কী শাস্তি হবে, সম্ভবত এই ভাবনা থেকেই তিনি নির্বিকার। ফ্লয়েড-এর শত অনুরোধ তাঁর কানে যায়নি। যন্ত্রনা, তাঁর চোখে পড়েনি। রীতিমতে হাঁটু দিয়ে ফ্লয়েডকে মাটিতে চটকাতে থাকেন তিনি, যেন কোনও বিষাক্ত পোকাকে মেরে ফেলছেন।

ওই অবস্থায় বেশ কয়েক মিনিট ছটফট করতে করতে জর্জ ফ্লয়েডকে দেখা যায় নিস্তেজ হয়ে যেতে। তারও বেশ কিছুক্ষণ পরে পুলিশ অফিসারটি তার গলার উপর থেকে পা তুলেছিল। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দেখা যায় তাঁর মৃত্যু ঘটেছে।

Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…

এরপর এই ঘটনার ভিডিও ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যেতেই বিশ্বজোড়া সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকারের দাবি নিয়ে কাজ করা প্রভাবশালী মার্কিন আইনজীবী বেন ক্র্যাম্প বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ভিডিওতে দেখা যাওয়া পুলিশ অফিসার-সহ, ফ্লয়েড-কে গ্রেফতার করতে যাওয়া মিনিয়াপোলিস-এর চার পুলিশ অফিসারকেই বরখাস্ত করা হয়েছে। সেখানকার মেয়র জ্যাকব ফ্রে-ও এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। কিন্তু, তাতে জনরোষ সামাল দেওয়া যায়নি। তাদের পরিষ্কার বক্তব্য, যেভাবে ফ্লয়েড-কে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে, তাতে ওই চার পুলিশ সদস্যকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

Scroll to load tweet…
Scroll to load tweet…

মঙ্গলবার মিনিয়াপোলিসে রাস্তায় বন্যার মতো প্রতিবাদী মানুষের ঢল নামে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পরড়েন তাঁরা। পুলিশের বর্বরতা ও বর্ণবিদ্বেষের এই স্বতস্ফুর্ত বিক্ষোভ সামলাতে মার্কিন পুলিশকে দাঙ্গারোধী সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়েছে। তাতেও অবশ্য তাদের থামানো যায়নি। বুধবারও মিশিগানে কোভিড-১৯-এর ভয় উড়িয়ে লকডাউন বিধি ভেঙে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন আইনী ব্যবস্থায় 'শ্বেত আধিপত্য'এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। তৈরি হয়েছে অসংখ্য শিল্পকর্মও।

Scroll to load tweet…

বস্তুত, গত কয়েকবছর ধরেই আমেরিকায় ফের বর্ণবিদ্বেষের বিষ মাথা চাড়া দিয়েছে। ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের আগে মার্চমাসে লুইসভিলে ব্রেওনা টেইলার, তার আগে আহমদ আরবেরি, একের পর এক কৃষ্ণাঙ্গকে বিনা কারণে হত্যা করেছে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ। এই অবস্থায় দেশজোডা় বিক্ষোভের মধ্যে এই মামলার তদন্তের বারক নিয়েছে এফবিআই।