সব হারিয়ে আজও ঘোড়ামারার পারে বসে থাকেন ঊর্মিলা, খোঁজেন একটু জীবনের আলো

  • যৌবনেই হারিয়েছেন স্বামীকে 
  • তার আগেই তাঁর পরিবার হারিয়েছে সহায় সম্বল
  • স্বামী যেতে আকাশ ভেঙে পড়েছিল 
  • ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত ঘোড়ামায় কাহিনি বললেন ঊর্মিলা
     
/ Updated: Jun 14 2020, 11:44 AM IST
Share this Video
  • FB
  • TW
  • Linkdin
  • Email

ঘোড়ামার ভাঙাচোরা, ভাঙনে খয়ে যাওয়া ফেরিঘাটে বসেছিলেন ঊর্মিলা দাস। বয়স ঠাহর করতে পারেন না। তবে, দেখে মনে হতেই পারে ৭০। কবে বিয়ে হয়ে এসেছিলেন ঘোড়ামারায়। প্রশ্নের উত্তরে ঊর্মিলা ঠিক করে সালটা বলতে পারলেন না। চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড খেয়াল করার চেষ্টা করলেন। শেষপর্যন্ত সে সময় পরিবারে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার সঙ্গে জুড়ে দিলেন নিজের বিয়ের সময়। অবশ্যই এই ঘটনা ঊর্মিলার পরিবারের লোকজন ছাড়া অন্য কারওর পক্ষে বলা কঠিন। কথায় কথায় জানা গেল ঊর্মিলা-র ছয় সন্তান। ৪ ছেলে এবং ২ মেয়ে। ছেলের মধ্যে ২ জন মানসিক ভারসাম্যহীন। এক ছেলে ছাড়া সব সন্তানেরই বিয়ে দিয়েছেন ঊর্মিলা। ২ মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে ঘোড়ামারায় বাস করেন তিনি। সংসারে উপার্জন বলে কিছুই নেই। মহিষাদল থেকে বিয়ে করে ঘোড়ামারায় পা রেখেছিলেন ঊর্মিলা। তাঁর কথায় স্বামী তখনকার সময় অনুযায়ী খুবই শিক্ষিত ছিলেন। ঘোড়ামারা বাজারে স্বামীর বিশাল দোকানও ছিল। কিন্তু কিসের দোকান তা এখন আর খেয়াল করতে পারেন না ঊর্মিলা। স্বামী বেঁচে থাকতেই নদী ভাঙনে সেই দোকান তলিয়ে গিয়েছিল। ভাঙনের আগ্রাসন সহ্য হয়নি ঊর্মিলার স্বামীর। তিনিও অকালে ঊর্মিলা ও সন্তানদের রেখে চোখ বুজেছিলেন। ঊর্মিলা জানিয়েছেন, তখন তিনি যুবতী, ফলে শরীরে জোর ছিল। লোকের বাড়ি ফাইফরমাশ খেটে ধান সেদ্ধ করে সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু এখন আর পারেন না। শরীর খুবই অসুস্থ। ঠিক করে নিঃশ্বাসও নিতে পারেন না। কথা বলতেও কষ্ঠ হয়। এহেন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় আমফান লন্ডভন্ড করে দিয়েছে তাঁর বসত ভিটে। নদীর পারে এসে বসে থাকেন ঊর্মিলা। আর সামনে জলরাশির উপরে তাকিয়ে তাকিয়ে প্রার্থনা করে চলেন যদি কেউ ওপার থেকে আসে কোনও আশার আলো নিয়ে। তাহলে একটু সুস্থ ও নিশ্চিন্তে খেতে-পেয়ে বাঁচতে পারেন ঊর্মিলা। সারাটা জীবন লড়াই করে, শেষ বয়সে এটাই প্রার্থনা ঊর্মিলার।