সংক্ষিপ্ত
নরেন্দ্র মোদীর বন্ধু হিসাবেই পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প
কিন্তু প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মিল পাওয়া যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে
নির্বাচন যত এগোচ্ছে 'বাংলার ট্রাম্প' হয়ে উঠছেন তৃণমূল নেত্রী
হারলে ট্রাম্পের মতোই গদি আঁকড়ে থাকবেন না তো
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ বন্ধু ছিলেন (এখনও আছেন কিনা তা জানার কোনও উপায় নেই), বলেই সকলে জানে। কিন্তু, বাংলার আটদফা নির্বাচন যত এগোচ্ছে ততই বাংলার বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের অত্যন্ত মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। ক্রমশ যেন বাংলার একান্ত নিজস্ব 'ট্রাম্প' হয়ে উঠছেন তৃণমূল নেত্রী।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসে, যখন কোভিড মহামারির প্রথম তরঙ্গ বিশ্বজুড়ে পুরোদমে বইছে, সেই সময় হয়েছিল মার্কিন নির্বাচন। একেবারে নির্বাচনের শুরু থেকেই নির্বাচনে রিগিং হতে পারে বলে অভিযোগ করা শুরু করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর বাংলায় ভোট ঘোষণার দিন থেকেই নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মার্কিন নির্বাচনে পরাজয় বুঝে ক্যাপিটল ভবনে হামলার উস্কানি দিয়েছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হামলা করতে ঠিক বলেননি, ঘেরাও করতে বলেছিলেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীনই ঘেরাও করতে বলেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। হাতা-খুন্তি নিয়ে আক্রমণ করতে বলেছেন। বিরোধীদের দাবি, তারই ফলে ঘটেছে শীতলকুচির ঘটনা।
নির্বাচনের প্রচারে প্রতিপক্ষ জো বাইডেন'কে 'ঘুমন্ত বুড়ো'-সহ বহু কটুকথা, কমলা হ্যারিসের গায়ের রঙ নিয়ে মন্তব্যের মতো ব্যক্তিগত আক্রমণের রাস্তায় হেঁটেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একইভাবে চলতি নির্বাচনের প্রচারে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্পর্কে 'হোদল কুতকুত', 'রাবণ', 'দুঃশাসন', 'ডাকাত'-এর মতো সম্বোধন করেছেন।
রিপাবলিকান পার্টির কোনও নেতা কিংবা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত স্তরের কোনও কর্মী ট্রাম্পের সামান্য বিরোধিতা করলেই তাঁর উপর নেমে এসেছে 'গদ্দার', 'বিশ্বাসঘাতক' জাতীয় আক্রমণ। ঠিক যেভাবে তাঁর সঙ্গে থেকে কাজ করতে না পারা শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায়, বৈশালী ডালমিয়াদের বিরুদ্ধে বলছেন মমতা। এমনকী, গণতন্ত্রকে সম্মান জানিয়ে ট্রাম্পের পরাজয় যখন মেনে নিয়েছেন তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, তখন তাকেও কসুর করেননি প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচনে হারের পরও প্রায় প্রতিটি পরাজিত প্রদেশের নির্বাচনের ফলকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গিয়েছিল ট্রাম্প শিবির। নন্দীগ্রামের নির্বাচনের পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আদালতে যাওয়ার কথা বলতে শোনা গিয়েছিল।
নির্বাচন চলাকালীন এবং ফল বের হওয়ার সময় বারবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভুয়ো খবর, প্ররোচনামূলক মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। বেশ কয়েকবার তাঁর পোস্ট হাইড করার পর শেষ পর্যন্ত টুইটার সংস্থা ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার ২৪ ঘন্টার জন্য নিষিদ্ধ করল খোদ নির্বাচন কমিশন। তার আগে তাকেও ২টি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন - ধর্নায় বসেই মমতার হাতে রঙ-তুলি-ক্যানভাস - কী ছবি আঁকলেন মুখ্যমন্ত্রী, দেখুন
আরও পড়ুন - কাকে ভোট দেবেন, কোন 'বন্ধু' মমতার প্রিয়তম - ধন্দে পাহাড়ের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা
আরও পড়ুন - 'ভাইপোকে কোথা থেকে কোথায় তুলে এনেছেন', মমতার বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ কতটা সত্যি
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিল সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রেই, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। মার্কিন নির্বাচনে করোনাকালে পোস্টাল ব্যালট কে সম্পূর্ণ বৈধতা দিয়েছিল সেই দেশের নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থা। তবু বারবার সেই পোস্টাল ব্যালট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ট্রাম্প। এমনকী, সেই ভোট না গোনারও আহ্বান জানিয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও অবধি ইভিএম, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশন-কে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই অবস্থায়, হালকা চালে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে, নির্বাচনে যদি হার হয়, তাহলে কি এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতোই ফলাফলকেও প্রশ্ন করবেন? কিছুতেই মানতে চাইবেন না পরাজয়?