সংক্ষিপ্ত

বাংলার ভোট আর মাত্র ক'দিন বাকি

নির্বাচনের আগে নজরে প্রতিটি দলের প্রতিশ্রুতি

সম্প্রতি নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করল বিজেপিও

কী কী প্রতিশ্রুতি দিল গেরুয়া শিবির

শমিকা মাইতি: বিজেপি ক্ষমতায় এলে নতুন সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট মিটিংয়েই নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, সংক্ষেপে সিএএ) কার্যকর করা হবে। সদ্য প্রকাশিত বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার ‘সোনার বাংলা সংকল্প পত্রে’ এমন প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হয়েছে। ইস্তাহার প্রকাশের পরে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা অমিত শাহ ‘অনুপ্রবেশ-মুক্ত’, ‘তোষণ মুক্ত বাংলা’ গড়ার ডাক দিয়ে ঘোষণা করেন, ‘যে সব উদ্বাস্তু পরিবার ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে বসবাস করছে, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’ উদ্বাস্তু পরিবারগুলিকে বছরে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

উল্লেখ্য সংসদে আইন পাশের পরে এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও কেন্দ্রীয় ভাবে এখনও ‘সিএএ’ লাগু করা যায়নি। লোকসভা ও রাজ্যসভার আইন প্রনয়ন কমিটি কমিটি ইতিমধ্যে সময়সীমা বাড়িয়েছে। এই দীর্ঘসূত্রিতায় বিরক্ত পশ্চিবঙ্গের মতুয়া সমাজ। তৃণমূল ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছে, এই আইনকে গাজরের মতো ঝুলিয়ে রেখে মতুয়াদের বোকা বানাচ্ছে বিজেপি। এই প্রেক্ষিতে মতুয়াদের আশ্বস্ত করতেই বিজেপি-র ইস্তাহারে সিএএ প্রসঙ্গ আনা হয়েছে বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। তবে, কিনা কেন্দ্রের আইন কার্যকর করার জন্য রাজ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার কোনও দরকার নেই। নাগরিকত্বের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে কেন্দ্রের ব্যাপার। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই বিরুদ্ধে থাকুন না কেন, এই আইন আটকানোর ক্ষমতা তাঁর নেই।

নির্বাচনী ইস্তাহারে বিজেপি একদিকে যেমন বাংলার আবেগের কথা মাথায় রেখে সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্মৃতি পুরস্কার বা শিক্ষাখাতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ফান্ডের উল্লেখ করেছে, তেমনই সামাজিক সুরক্ষার দিকটিও ভেবেছে গুরুত্ব সহকারে। কেন্দ্রীয় যে দু’টি প্রকল্প এখনও চালু হয়নি এই রাজ্যে সেই আয়ুষ্মান ভারত ও পিএম কিষান যোজনা যত দ্রুত সম্ভব বলবৎ করা হবে বলে ইস্তাহারে জানিয়েছে বিজেপি। পিএম কিসান যোজনা প্রকল্পের রাজ্যের প্রায় ৭৫,০০০ চাষিকে বকেয়া ১৮,০০০ টাকা  দেওয়া হবে অ্যাকাউন্টে। তারপরে বার্ষিক ৬ হাজার টাকা করে  যেমন দেওয়ার কথা দেওয়া হবে। এছাড়াও চাষিদের সামাজিক সুরক্ষা খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি ফান্ড আলাদা থাকবে। চাষি ও মৎস্যজীবী পরিবারগুলিকে বিমার আওতাতেও আনতে চাইছে বিজেপি।
ইস্তাহারে বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির উন্নয়নে ১১ হাজার কোটি টাকার পৃথক ফান্ডের কথা বলা হয়েছে। নোবেল প্রাইজের মতো করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে। একই ভাবে সিনেমার জন্য থাকবে সত্যজিৎ রায় পুরস্কার। কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হযেছে ইস্তাহারে।

সরকারি চাকুরেদের জন্যও রয়েছে সুখবর। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সপ্তম বেতন কমিশন চালু করবে বলে জানিয়েছে। সরকারি চাকরিতে মেয়েদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ থাকবে। মেয়েদের জন্য আরও অনেক সুযোগ-সুবিধার কথা রয়েছে ইস্তাহারে। যেমন, মেয়েদের প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সমস্ত খরচ মকুব করে দিতে চায় বিজেপি। এমনকী সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থায় বিনামূল্যে যাতায়াত করতে পারবে মেয়েরা। কন্যাশ্রী প্রকল্পের টেক্কা হিসাবে বিজেপির ইস্তাহারে ১৮ বছর বয়সের পরে মেয়েদের ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের নাম ‘বালিকা আলো’। বলা হয়েছে, ছাত্রীরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠলেই বছরে তিন হাজার, নবম শ্রেণিতে পাঁচ হাজার এবং একাদশ শ্রেণিতে উঠলে সাত হাজার টাকা করে পাবে।  

আরও পড়ুন - মমতা, আব্বাস না বিজেপি - কোথায় যাবে মুসলিম ভোট, বাংলার নির্বাচনে এবার সবথেকে বড় ধাঁধা

আরও পড়ুন - বিজেপির হাত ধরে বঙ্গে মাথা তুলছে নিম্নবর্ণের হিন্দুত্ব, বাংলা কি শিখবে রাজনীতির নতুন ভাষা

আরও পড়ুন - শেষ বাজারে আচমকা মমতার হিন্দুত্বের তাস, নির্বাচনে কতটা সুবিধা দেবে তৃণমূল কংগ্রেসকে

নজর দেওয়া হয়েছে শিক্ষা-স্বাস্থ্যেও। উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল ও সুন্দরবন এলাকায় এইমস হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়েছে ইস্তাহারে। স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়ন ও নতুন পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ফান্ড করবে বিজেপি। কলকাতাকে ইউনেস্কো ‘হেরিটেজ সিটি’র আওতায় আনতে চায় তারা। এই জন্য কলকাতার পরিকাঠামো উন্নয়নে ২২ হাজার কোটি টাকার আর একটি ফান্ড থাকবে। কলকাতা মেট্রো ব্যবস্থাকে শ্রীরামপুর, ধূলাগড় ও কল্যাণী পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ইস্তাহারে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে থাকবে এক হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি, রেশনে এক টাকায় চাল-গম, তিন টাকায় নুন, পাঁচ টাকায় চিনি আর ৩০ টাকায় ডাল দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইস্তাহারে। এমনকী তৃণমূলের ‘মা’ ক্যান্টিনের মতো ‘অন্নপূর্ণা’ ক্যান্টিনের কথাও আছে, যেখানে ৫ টাকায় খাবার পাওয়া যাবে।

এত টাকার সংস্থান কোথা থেকে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি-র ইস্তাহারকে ‘কল্পতরু’ আখ্যা দিয়েছে বিরোধী তৃণমূল, কংগ্রেস, বামেরা। যদিও অমিত শাহের আশ্বাস, ‘আমি বেনিয়া। তাই টাকার সংস্থানের কথা আগেই ভেবেছি।’ অমিত শাহের কথায়, ‘আপনারা কংগ্রেসকে সময় দিয়েছেন। ৩০ বছরেরও বেশি সময় দিয়েছেন কমিউনিস্টদের। তৃণমূলকে দশ বছর দিয়েছেন। এবার আমাদের পাঁচ বছর দিন। আমরা সোনার বাংলা গড়ে দেখিয়ে দেবো।’