সংক্ষিপ্ত

ভোট-সন্ত্রাসে বলির তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে বিজেপির

হিংসার রাজনীতি থেকে বাংলাকে মুক্ত করার ডাক দিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়

প্রথম দফার ভোটগ্রহণের প্রাক্কালেও বিজেপির ৫ জন শহিদ হয়েছেন বলে অভিযোগ

এশিয়ানেট নিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা

 

 


ভোট-সন্ত্রাসে বলির তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে বিজেপির। এই প্রেক্ষিতে প্রথম দফার ভোটগ্রহণের প্রাক্কালে হিংসার রাজনীতি থেকে বাংলাকে মুক্ত করার ডাক দিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এশিয়ানেট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৈলাস  বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে হিংসা আর মাফিয়ারাজের রাজনীতি চলছে। ভারতীয় জনতা দল তাদের  ১৩০ জন কর্মীকে হারিয়েছে।   হিংসার এই রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে হবে বাংলাকে।’


পশ্চিমবঙ্গ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণের দিন শনিবার। রাজ্যে ৩০টি বিধানসভা আসনে প্রথম দফার ভোট চলছে। এরই মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠছে। বুধবার সকালে কোচবিহারের দিনহাটায় পশু হাসপাতালের বারান্দা থেকে উদ্ধার হয় বিজেপির মণ্ডল সভাপতি অমিত সরকারের ঝুলন্ত দেহ। বৃহস্পতিবার সকালে নদিয়া জেলার শান্তিপুর থানার মেথিডাঙা এলাকার একটি কলাবাগানে নিশ্চিন্তপুর হাউস কলোনির বাসিন্দা দীপঙ্কর বিশ্বাস ও নৃসিংহপুরের বর্মণ পাড়ার বাসিন্দা প্রতাপ বর্মনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। শুক্রবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানার বাগমারির জোড়াকুশমি গ্রামে বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে একটি গাছে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় লালমোহন সরেন নামে এক যুবকের। আর শনিবার সকালে  পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির বেগমপুরে বাড়ির উঠোনে উদ্ধার হয়েছে বিজেপির সক্রিয় কর্মী মঙ্গল সরেনের দেহ। মৃতের ঘাড়ে, মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বাড়ির লোকদের অভিযোগ, অন্যত্র খুন করে দেহ বাড়ির উঠোনে ফেলে দিয়ে গিয়েছে তৃণমূলের লোকেরা। ভোটের আগের রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির বালিবস্তি এলাকায় ২১০ বুথের বিজেপি সভাপতি অমিত পাত্র এবং দলীয় কর্মী সুমন জানার উপরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা লাঠি তরোয়াল হাতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। আহতরা স্থানীয় জনকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এশিয়ানেট নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কৈলাস বলেন, ‘ এই রাজ্যে হিংসার রাজনীতি গত চার দশক ধরে চলছে। কংগ্রেস, সিপিএমের আমলেও ছিল । তৃণমূলের আমলে খুব বেড়ে গিয়েছে।’ তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ স্নোগানকে বিঁধে কৈলাস বলেন, ‘ ওদের খেলা হবে মানে পোলিং বুথ কব্জা করা, খেলা হবে মানে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো, খেলা হবে মানে বোমাবাজি।’  গণ্ডগোলের এই আশঙ্কা ছিল বলেই বাংলায় ৮ দফায় ভোট হচ্ছে বলে জানান তিনি। তারপরেও শনিবার, ভোটের দিনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মীদের উপরে হামলার খবরে উদ্বিগ্ন বিজেপি নেতৃত্ব। গড়বেতার হেতাশোলে বিজেপি কর্মীদের উপরে হামলা হয়েছে।  পটাশপুর, ভগবানপুরে বোমাবাজি হয়েছে। কাঁথিতে শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দুর গাড়িতে হামলা হয়েছে।


কিন্তু এতকিছুর পরেও মানুষ মহা উৎসাহে যে ভাবে ভোট দিচ্ছেন, সেটা তাদের পক্ষে ভাল খবর বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা।  ইন্টারভিউতে কৈলাস জানিয়েছেন,  অহিংসার রাজনীতি ছাড়াও তোষণ আর বাংলার বিকাশ এবারের ভোটে বিজেপির অন্যতম ইস্যু। তাঁর মতে, ‘বাংলার মানুষও বিশ্বাস করছে হিংসার এই রাজনীতি, তুষ্টিকরণ থেকে কেউ যদি মুক্ত করতে পারে, বাংলার বিকাশ যদি কেউ করতে পারে, তাহলে সেটা ভারতীয় জনতা পার্টি।’  তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করতে বাংলার মানুষ মরীয়া বলেই এবারে ভোটদানের হার এত বেশি। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা কৈলাসের অভিযোগ, ‘তোলাবাজি ও সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে মানুষের মধ্যে আক্রোশ তৈরি হয়েছে।’ বস্তুত তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে এই রাজ্যের মানুষের সবচেয়ে বড় অভিযোগ তোলাবাজির। খুল্লম-খুল্লা তোলা আদায় চলছে সর্বত্র। বড়-মেজো-সেজো দাদারা আলাদা আলাদা করে এসে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। কোথাও নালিশ করার উপায় নেই। কারণ শাসকদলের পকেটে পুলিশ। বালি চুরি, কয়লা চুরি, গরু চুরি- তৃণমূলের আমলে দুর্নীতি চরমে উঠেছে। সবেতেই কাটমানি দিতে দিতে নাভিশ্বাস উঠেছে বাঙালির। কৈলাস বিজয়বর্গীয় জানান, ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় এসে বাংলাকে দুর্নীতিমুক্ত করবে সবার আগে। তাঁর কথায়, ‘মোদিজীর নেতৃত্বে দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়বে বাংলা। আমাদের উপরে ভরসা রাখুন।’