সংক্ষিপ্ত
- লাদাখে চিনা সেনার হামলায় শহিদ বাংলার ছেলে
- বছর পাঁচেক আগে সেনা বাহিনীতে যোগ দেন
- অভাবের সংসারে তিনি ছিলেন একমাত্র রোজগেরে সদস্য
- ছুটিতে ফিরলে বিয়ের কথা ছিল ২৫ বছরের তরতাজা যুবকের
সোমবার রাতে ভারত-চিন সীমান্তে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে চিনা বাহিনী অতর্কিতে যে হামলা চালিয়েছিল তাতে শহিদ হয়েছেন ভারতের ২০ জন বীর সেনানী। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন এই বাংলার এক সাহসী ছেলেও। বীরভূমের মহম্মদবাজার থানা এলাকার বেলগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রাজেশ ওরাং বছর পাঁচেক আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন । এরপর থেকে লাদাখেই কর্মরত ছিলেন তিনি। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই ঝরে গেল সেই তাজা প্রাণ।
লকডাউন না হলে বাড়িতে ফেরার কথা ছিল রাজেশের। বোনের বিয়ের কথা চলছিল। লাদাখ থেকে ফিরে বিয়ের কথা ছিল রাজেশেরও। কিন্তু সোমবার রাতে চিনের লাল ফৌজের আক্রমণ সহ হিসেব ওলট-পালট করে দিল। সেনাবাহিনী থেকে ফোনে বীরভূমের মদম্মদ বাজারের বেলগড়িয়া গ্রামে রাজেশের পরিবারকে জানান হল দুঃসংবাদ। তারপর থেকেই ছেলের অকাল মৃত্যুর খবর পয়েছে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে গোটা গ্রাম।
আরও পড়ুন: ভারত-চিন উত্তেজনা বাড়তেই ফের সক্রিয় ট্রাম্প, শহিদ জওয়ানদের জন্য শোকপ্রকাশ আমেরিকার
রাজেশের বাবা সুভাষ ওরাং চা-আবাদের কাজ করতেন। বাবা, মা, দুই বোন ও এক ভাইকে নিয়ে ছিল ওরাং পরিবারের সংসার। দুই বোনের একজনের বিয়ে হয়ে গেলেও আরেক বোনের বিয়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন রাজেশ। একমাত্র রোজগেরে ছেলেকে হারিয়ে এখন মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন রাজেশের শোকস্তব্ধ মা-বাবা। এর ফাঁকেই চোখের জল মুছতে মুছতে শোকবিহ্বল সুভাষ ওরাং বলেন, দেশের জন্য ছেলে শহিদ হওয়ায় তিনি গর্বিত।
বীরভূমের বেলগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রাজেশ ছোট থেকেই বেশ সাহসী ছিলেন। শেওড়াকুড়ি বংশীধর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে সিউড়ির বিদ্যাসাগক কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু স্নাতক হওয়ার আগেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। সেই সময় গ্রামের ছেলে সেনাবাহিনীতে যাওয়ায় গর্বে বুক ভরে উঠেছিল স্থানীয়দের। তার উপর রাজেশ ছিলেন গ্রামের প্রথম যুবক যিনি সেনায় যোগ দিয়েছিলেন। রাজেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরেই ওরাং পরিবারের সংসারে হাল ফিরেছিল। স্বচ্ছ্বলতা আসে সংসারে। তাই এই বছর ছেলের বিয়ে দিবেন বলে স্থির করেছিলেন বাবা-মা। মেয়ও নাকি দেখা হয়েছিল। কিন্তু সেই সব স্বচ্ছ নিমেশে চূর্ণ করে দিয়ে বীরভূমের বাড়িতে এসে পৌঁছল রাজেশের মৃত্যুর সংবাদ।
মঙ্গলবার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে ফোন এসেছিল লে-র আর্মি হাসপাতাল থেকে। রাজেশের খুড়তুতো ভাই অভিজিত ওরাং জানান, ২০১৫ সালে সেনায় যোগ দেন তিনি। প্রথমে পোস্টিং ছিল জম্মুতে। তারপর ২ বছর ধরে ছিলেন লাদাখে।
কেজেশের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে ইতিমধ্যে ট্যুইট করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ।
রাজেশের বোন শকুন্তলা জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে শেষবার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন তিনি। শকুন্তলার কথায়, “দূরে থাকলেও বাবা-মাকে নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করত দাদা। ফোন করে বলত, বেশি বাইরে না বেরোতে। বাবা যদি বাইরে যায় তাহলে যেন মাস্ক পরে।” আট মাস আগে শেষবার বাড়িতে এসেছিলেন রাজেশ।