সংক্ষিপ্ত

নয়নজুলিতে পড়ে থাকা বাসে আটকে পরা পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা এবং দমকল বাহিনীর কর্মীরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও। 
 

কৌশিক সেন, প্রতিনিধি- পুজোর আগ দিয়ে এক ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা (Bus Accident), যা ২২ সেপ্টেম্বর রাজ্য থেকে দেশের মানুষকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের (North Dinajpur) রায়গঞ্জের (Raiganj) কাছে রূপাহার নামে একটি জায়গায় এই বাস দুর্ঘটনা (Bus Accident At Raiganj)। বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানঝুলিতে উল্টে যাওয়ায় কাদায় দমবন্ধ হয়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জখম অসংখ্য। দুর্ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অসংখ্য বাসযাত্রী (Many Feared Dead in Bus Accident)। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রাত ১০টা ৩০ মিনিটে বাসটি নয়ানঝুলিতে উল্টে যায়। এক বিকট আওয়াজ শুনে লোকজন বাইরে বেরিয়ে আসেন। তারাই তড়ডিঘড়ি উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন। জানা গিয়েছে, বাসটি ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) পাকুর জেলা (Pakur District) থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrate Labour) তুলতে তুলতে রায়গঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। বাসটি লখনউ (Lucknow) যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সেখানে পৌঁছানোর আগেই বাসটি দুর্ঘটনার কবলে। বাসযাত্রীদের অভিযোগ চালক মত্ত অবস্থায় থাকায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। 

দুর্ঘটনার পেতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বিশাল পুলিশবাহিনী। চলে আসে দমকল কর্মীরা এবং জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁরাও উদ্ধারকাছে হাত লাগায়। সরকারি বাহিনী উদ্ধারকাজ শুরু করার আগেই স্থানীয় বাসিন্দারা অধিকাংশ জীবিত এবং অল্প-বিস্তর জখম যাত্রীদের উদ্ধার করে রাস্তার উপরে নিয়ে আসে। কিন্তু বাসের বের হওয়া দরজা কাদার মধ্যে চেপে পড়ে থাকায় অনুমান করা যাচ্ছিল না ঠিক কতজন মারা গিয়েছেন। পরে পুলিশ ক্রেন নিয়ে এসে কাদের দিকে থাকা বাসের অংশটিকে টেনে তোলে। তখনই দেখা যায় অসংখ্য দেহ বাসের জানলা ও দরজায় আটকে রয়েছে। প্রতিটি দেহই কাদা চেপে যে বসেছিল তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। অনুমান এই মানুষগুলি উল্টে যাওয়ার বাসের দিকের অংশে এক্কেবারে ছিলেন। যার ফলে নয়ানজুলির কাদায় বাসটি কাত হয়ে আটকে যেতেই এরা তাতে চাপা পড়ে যান। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান এদের সকলেরই মৃত্যু কাদায় ডুবে হয়েছে। 

 

কৃষ্ণা মণ্ডল নামে এক বাসযাত্রী জানিয়েছেন যে, বাসটি পাকুর থেকে আসছিল। লখনউ যাওয়ার জন্য পাকুর জেলার সোনাঝুড়ি মোড়ের সামসারা গ্রাম থেকে বাসে চেপেছিলেন কৃষ্ণা। তাঁর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা ছিল। নিজে কোনও মতে বাস থেকে বেরিয়ে এলেও স্ত্রী ও সন্তানের কোনও খবর বের করতে পারেননি। তিনি জানিয়েছেন, বাসে ওঠার পর থেকেই দেখেন চালক বেলাগামভাবে বাস ছোটাচ্ছেন। কৃষ্ণার অভিযোগ, চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন। দুর্ঘটনার এক ঘণ্টা আগেই বাসটি একটি ধাবায় রাতের খাবারের জন্য থেমেছিল। সেখানে চালক আকন্ঠ মদ্যপান করে বলে অভিযোগ কৃষ্ণার। দুর্ঘটনার কিছু সময় আগে বাসের চালক একটি গাড়িকেও  ধাক্কা মেরেছিল বলে কৃষ্ণা অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, আচমকাই দেখেই তাদের বাস জলের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। পরে কোনওমতে বাইরে বেরিয়ে এসে কৃষ্ণা দেখেন বাসটি একটি কাদার উপরে একদিকে পাল্টি খেয়ে পড়ে রয়েছে। 

 

নয়ানজুলিতে বাস পড়ে গিয়েছে- এই খবর পেতেই ঘটনাস্থলে ছুটেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রণব রায়। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা গিয়ে দেখেন বাসের একটি জল ও কাদার মধ্যে ডুবে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাই বাসের অন্যদিকের জানলা ভেঙে বহু মানুষকে ভিতর থেকে টেনে বের করে। এরপর দমকল বাহিনী এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এসে আরও কিছু মানুষকে টেনে বার করে। এদের মধ্যে কারওর মাথায়, কারও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ছিল। কয়েক জন আবার পায়ে এবং হাতে গুরুতর চোট পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন প্রণব। তাঁরা এমন ৪ শিশুকে উদ্ধার করেছেন যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানিয়েছেন তিনি।  

অসুস্থ ও আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, রাত ১০টা নাগাদ বাসটি মালদহ-র দিক থেকে আসছিল। সেই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানজুলিতে পড়ে যায়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান চালক মত্ত অবস্থাতে থাকাতেই দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় চালক বেঁচে রয়েছেন না মারা গিয়েছেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকী মৃতের সংখ্যা নিয়েও কোনও চূড়ান্ত তথ্য তারা দেয়নি। দুর্ঘটনাস্থলে থাকার সময় পুলিশের কর্তা সাফ জানিয়ে দেন, এই মুহূর্তে তারা উদ্ধারের কাজে এবং জখম ও আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করছেন। তারমধ্যে জাতীয় সড়কের মেরামতির কাজ চলছে। এই অবস্থায় দুর্ঘটনাগ্রস্থ বাসটিকে রাস্তার উপরে ক্রেন দিয়ে টেনে তোলার চেষ্টার মধ্যেই যানজট শুরু হয়। যদিও তড়িঘড়ি দুর্ঘটনাগ্রস্থ বাসটিকে ক্রেন দিয়েই রাস্তার একপাশে করে দেওয়াতে যানজটের সমস্যা কিছুটা হলেও কমে যায়। 
 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কিন্তু এত ঢিলে তালে কাজ চলছে যে এইখান দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের ঝুঁকি বাড়ছে। আর এই ঝুঁকির হাত ধরেই এদিন এই ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা বলে মনে করছেন বহু স্থানীয় বাসিন্দারা। চালক মত্ত অবস্থায় থাকায় বাস দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার নিয়েছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। 

শ্যামল মণ্ডল নামে এক বাস যাত্রী জানিয়েছেন তিনি রায়গঞ্জের কাছেই ইটাহারের নন্দনগ্রাম থেকে সওয়ারি হয়েছিলেন। তাঁর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। চালক যে অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় ছিল সে কথা জানিয়েছেন শ্যামল। তিনি দিল্লি যাবেন বলে বাসে উঠেছিলেন। পেশায় রাজমিস্ত্রি শ্যামল। তাঁর পায়ে চোট লেগেছে। দুর্ঘটনার পর কোনওমতে বাসের জানলার কাঁচ ভেঙে বাইরে আসেন তিনি। বাসে ঠিক কত জন যাত্রী ছিল তা বলতে পারেননি শ্যামল। তবে তাঁর অনুমান ১০০ বেশি যাত্রী ছিল। এদের মধ্যে বেশকিছু মহিলা ও শিশুরাও ছিল বলে জানিয়েছেন শ্যামল।