সংক্ষিপ্ত
- গোঘাটের বাসিন্দা পেশায় পরিচারিকা লক্ষ্মী দাস
- পেশায় পরিচারিকা লক্ষ্মী দেবী
- সামান্য উপার্জনেই দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে
- শিক্ষণ সামগ্রী, নতুন পোশাক দিয়েও গরিবদের সাহায্য
উত্তম দত্ত, হুগলি: পেশায় তিনি পরিচারিকা। একটি চোখও নেই তাঁর। কিন্তু তাতে কী? উপার্জন সামান্য হলেও তাঁর হৃদয় বড়। নিজের মতোই যাঁরা গরিব, যাঁরা দুঃস্থ,তাঁদের জন্য তাঁর মন কাঁদে । কিছু করার ইচ্ছেও হয়।
তাই বেছে নিয়েছিলেন রাস পূর্ণিমার দিনটিকে। মঙ্গলবার দুঃস্থ, অসহায় মানুষদের মুখে হাসি ফোটালেন গোঘাটের দশঘড়া গ্রামের লক্ষ্মী দাস। মঙ্গলবার দুপুরে গোঘাটের শ্রীপুর শিবমন্দির প্রাঙ্গণে দেড় হাজার গরিব, অসহায় মানুষকে পেট ভরে খাওয়ালেন লক্ষ্মীদেবী। নিজের সামর্থ্য মত ভাত, ডাল,আলু পোস্ত, চাটনি, মিষ্টি, পায়েস- আয়োজনে খামতি ছিল না কোনও কিছুর। শুধু তাই নয়, প্রায় দেড়শো জন দুঃস্থ মানুষের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেন লক্ষ্মীদেবী। এ ছাড়াও শীতের কষ্ট লাঘব করে পঞ্চাশজনকে দেন কম্বল। দুঃস্থ পরিবারের প্রায় ষাট জন পড়ুয়ার হাতে তুলে দেন বইখাতা, পেন্সিল ইত্যাদি শিক্ষণ সামগ্রী।
লক্ষ্মীদেবীর জমিজমা কিছুই নেই। অন্যের এক চিলতে জমিতে একটা ছোট্ট ঘর তৈরি করে মা-মেয়েতে থাকেন। মায়ের বয়স প্রায় ৯৫ বছর। তাই সংসার চালানোর জন্য লক্ষ্মী দেবীকে পাঁচটা বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে হয়। ছোট থেকে অভাবের মধ্যেই বড় হয়েছেন। এক মুঠো ভাতের জন্য প্রতিদিন লড়াই করতে হয়েছে। এক সময় একটু সাহায্যের জন্য বহু মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছেন। কিন্তু কেউ পাশে দাঁড়াননি। তাই অভাবের যন্ত্রণা কত ভয়ঙ্কর তা তিনি ভালভাবেই উপলব্ধি করেন।
সেই অনুভূতি থেকেই গরিব, দুঃস্থদের জন্য কিছু করার ভাবনা ছিল তাঁর। সেকথা ভেবেই একটু একটু করে পয়সা জমিয়ে এই আয়োজন করেছিলেন লক্ষ্মীদেবী। লক্ষ্মীদেবীর কথায়, 'সারা বছর আমি যা উপার্জন করেছি তা থেকে কিছু কিছু সরিয়ে রেখেছিলাম। এ ছাড়া কয়েকদিন ধরে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চাল জোগাড় করেছি। সে সব দিয়েই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।'
মানুষের পাশে থাকার ও মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে প্রয়োজন সদিচ্ছার। এর জন্য অর্থ কোনও বাধা নয়। গোঘাটের লক্ষী দাস তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন।