সংক্ষিপ্ত

সোশ্যাল মিডিয়ায় সুঁচ কাণ্ডের ঘটনার উঠেছে নিন্দার ঝড়। দাবি উঠছে এই ঘটনায় দোষীদের যেন কঠোর থেকে কঠোরতর সাজা দেওয়া হয়।

২০১৭ সালে পুরুলিয়ার সুঁচ কাণ্ডের (Purulia Needle Case) ঘটনা সারা রাজ্যকে নাড়া দিয়েছিল। পুরুলিয়া মফস্বল থানার নদিয়াড়া গ্রামের তিন বছরের শিশু কন্যাকে (3Years old Baby Girl) শরীরে একাধিক সুঁচ (Needle) ঢুকিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল। এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত হন শিশুর মা মঙ্গলা গোস্বামী এবং সনাতন গোস্বামী ওরফে ঠাকুর। ২০১৭ সাল থেকে পুরুলিয়া জেলা আদালতে চলছে এই ঘটনার বিচার। গত ১৭ ই সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত দুজনকে দোষী সাব্যস্ত করেন পুরুলিয়া জেলা আদালতের বিচারক।

জানানো হয় ২০শে সেপ্টেম্বর ফের এই মামলার সাজা ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু এরপরেও স্থগিত হয়ে যায় সাজা ঘোষণা। মঙ্গলবার ফের এই মামলার সাজা ঘোষণা হবে। অন্যদিকে পুরুলিয়ার সূঁচ কাণ্ডের অন্যতম দোষী সনাতন গোস্বামী বিচার ব্যবস্থাকে আন্ধা কানুন বলে কটাক্ষ করেন। শিশুর মা মঙ্গলা গোস্বামী কান্নায় ভেঙে পড়েন। মঙ্গলাকে থামাতে হিমশিম খেতে হয় মহিলা পুলিশ কর্মীদের।

সুঁচ কাণ্ডের দোষী সনাতন গোস্বামী ওরফে ঠাকুর ও মঙ্গলার সাজা ঘোষণার রায় দান স্থগিত রাখেন পুরুলিয়ার জেলা ও দায়রা আদালতের দ্বিতীয় কোর্টের বিচারক রমেশ কুমার প্রধান। পূর্ব নির্ধারিত অনুযায়ী ২০সেপ্টেম্বর দুপুরে ১টায় এই মামলার সাজা ঘোষণার সময় ধার্য হয়েছিল। সেই মোতাবেক পুলিশ দুই দোষী সাব্যস্ত কারিকে আদালতে হাজির করে। আদালতে বিচারক তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টি আরেকবার মনে করিয়ে দেন। তার পর শুরু হয় রায়দান প্রক্রিয়া। সেই মামলার সরকারি আইনজীবি আনোয়ার আলী আনসারি বিচারকের কাছে দৃষ্টান্তমূলক সাজার প্রার্থনা করেন। আর তার পরই  বিবেচনার জন্য রায়দান স্থগিত রাখেন। 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পিছন থেকে ছুরি মেরেছে শুভেন্দু, মীরজাফরের সঙ্গে তুলনা ফিরহাদ হাকিমের

মঙ্গলবার আবার এই মামলার রায় দানের দিন ধার্য হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী আনোয়ার আলী আনসারী জানান, এ ধরণের ঘটনায় সাজা যাবজ্জীবন তো হচ্ছেই। এর থেকেও কঠিন সাজা ফাঁসির দাবি রাখা হয়েছে। এই কথা শোনার পর মৃত শিশু কন্যার মা মঙ্গলা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কোনও মতেই পুলিশের সঙ্গে যেতে চাইছিলেন না। কান্নায় চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে মহিলা পুলিশ কর্মীদের হিমসিম খেতে হয়। এই বিচারের রায় শোনার জন্য আদালতে উপস্থিত হন মঙ্গলার মা মাধুরী মহন্ত। 

ভ্যাকসিনের সূঁচ অর্ধেক ভেঙে ঢুকে গেল শরীরে, প্যারালাইসিস হয়ে মৃত্যুর মুখে যুবক

মঙ্গলাকে জড়িয়ে ধরে তিনি মেয়েকে সান্ত্বনা দেন। সেখানেই মাধুরী দেবী ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, মেয়ের প্রাক্তন স্বামী লক্ষ্মীকান্তর জন্যই এই ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, দশ বছর আগে লক্ষ্মীকান্তর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মঙ্গলার। তার পর থেকেই কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকত। বিয়ের তিন বছর পর এই শিশুটির জন্ম হয়। তার পর লক্ষ্মীকান্ত দাবি করে এই শিশুটি তার নয়। অভিযোগ, তারপর থেকে মঙ্গলাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। সেই থেকে মঙ্গলা বাপের বাড়িতে মায়ের কাছে থাকত। ওই সময়ই মঙ্গলাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে সনাতন তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সাড়ে তিন বছরের শিশু কন্যা সুপ্রিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সনাতনের বাড়িতে থাকত মঙ্গলা। 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১২ জুলাই সন্ধ্যায় শিশুটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় জেলার দেবেন মাহাত সদর হাসপাতালে ভর্তি করে শিশুর মা এবং সনাতন ঠাকুর নামে ওই গৃহস্থের মালিক। শিশুর চিকিত্সা করতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত চিকিত্সকরা পরীক্ষা করে দেখেন শিশুর গোটা শরীরের বিভিন্ন স্থানে সূচ ফোটা রয়েছে। আঘাতের চিহ্ন যৌনাঙ্গে, বুকে ক্ষত। চোখে মুখে ক্ষতের দাগ। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ১৪ জুলাই চাইল্ড লাইনের পক্ষ থেকে জেলা কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার পুরুলিয়া মফসল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। 

২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক হবে ভারত, বিশেষ রিপোর্ট

শিশুটিকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালীন শিশুটি মারা যায়। সেই মামলায় গত ১৭ই সেপ্টেম্বর  অভিযুক্ত দুই জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। মঙ্গলবার আবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য হয়েছে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সুঁচ কাণ্ডের ঘটনার উঠেছে নিন্দার ঝড়। দাবি উঠছে এই ঘটনায় দোষীদের যেন কঠোর থেকে কঠোরতর সাজা দেওয়া হয়।