সংক্ষিপ্ত

গত পাঁচ দিন ধরে পরিস্রুত পানীয় জল পাচ্ছেন না দু’লক্ষের বেশি গ্রামবাসী। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁরা জল কিনে খাচ্ছেন।

শীতের হাওয়া বইতে শুরু করতেই আর্সেনিকমুক্ত (Arsenic-free) পানীয় জল(water supply) সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল মালদহ জেলার (Maldah) রতুয়া-১ ব্লকের কাহালা (Kahala) ও দেবীপুর (Devipur) গ্রাম পঞ্চায়েতে। গত পাঁচ দিন ধরে পরিস্রুত পানীয় জল পাচ্ছেন না দু’লক্ষের বেশি গ্রামবাসী। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁরা জল কিনে খাচ্ছেন। আর যাঁদের সেই সামর্থ নেই, প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা বিষ মিশে থাকা জলই পান করছেন। দ্রুত জল সরবরাহের দাবিতে তাঁরা স্থানীয় পঞ্চায়েত দপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন। একই আর্জি জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরেও। 

ওই দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, শীতের শুরুতেই নদী অনেকটা পিছিয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা। সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রতুয়া-১ ব্লকের কাহালায় অবস্থিত আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল প্রকল্পের ওপর কাহালা ও দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অসংখ্য গ্রামের মানুষ নির্ভর করেন। সেই সংখ্যাটি দু’লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে। 

কিন্তু গত পাঁচ দিন ধরে ওই প্রকল্প থেকে পানীয় জল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। এদিকে এলাকায় পানীয় জলের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে শীতের শুরুতেই বিপাকে পড়েছেন সবাই। যাঁদের সামর্থ রয়েছে, তাঁরা কিনে জল পান করছেন। কিন্তু এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র সীমার নীচে বাস করেন। তাঁরা নলকূপ কিংবা পুকুর-ডোবার বিষাক্ত জল পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।

কাহালার বাসিন্দা হেমন্ত সিংহ জানাচ্ছেন, ‘দিন পনেরো থেকেই পানীয় জল সরবরাহ ঠিকমতো হচ্ছিল না। দিনে দু’বার জল সরবরাহের কথা থাকলেও কোনওদিন একবার, কোনওদিন বা জল দেওয়াই হচ্ছিল না। গত পাঁচ দিন ধরে জল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে গিয়ে জানা গিয়েছে, নদী পিছিয়ে যাওয়ায় জলের অভাবে নাকি লিফটিং পাম্প কাজ করছে না। ফলে পাইপ লাইনে জল সরবরাহ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আবেদন জানানো হয়েছে। 

বাসিন্দারা বলছেন, এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নদী থেকে ক্যানেল খোঁড়ার জন্য শ্রমিকও নিয়োগ করা হয়নি। অথচ এই জলের ওপর কাহালা ও দেবীপুর অঞ্চলের কয়েক লক্ষ মানুষ নির্ভর করে থাকেন। তাঁদের দাবি সংশ্লিষ্ট দপ্তর দ্রুত সমস্যা সমাধান করে পানীয় জলের ব্যবস্থা করুক। 

একই বক্তব্য আরেক স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জন সিংহের। তিনি জানান, ‘২০০৭ সালে এই প্রকল্প চালু হওয়ায় এলাকার দু’লক্ষেরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছিলেন। কিন্তু প্রতি বছর বর্ষার পর প্রকল্পে নদীর জলের অভাবে দেখা দিচ্ছে। এবার শীত পড়তে না পড়তেই সেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাঁচ দিন ধরে জল সরবরাহ করা হচ্ছে না। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেকবার বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি। এদিকে পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে ২০-৩০ টাকায় জল কিনে খেতে হচ্ছে। যাদের সেই সামর্থ নেই, তারা আর্সেনিক মিশে থাকা জলই খাচ্ছে।’

দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান লালটু চৌধুরীর বক্তব্য, ‘৪-৫ দিন ধরে পরিস্রুত পানীয় জল না পেয়ে এই পঞ্চায়েত এলাকার অনেক মানুষ পঞ্চায়েত দপ্তরে এসেছিলেন। তাঁরা হুমকি দিয়েছেন, দু’একদিনের মধ্যে পানীয় জল সরবরাহ চালু না হলে তাঁরা বড়সড় আন্দোলনে নামবেন। প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন, এনিয়ে দ্রুত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নইলে আমরাও সমস্যার মধ্যে পড়ব। তবে বর্ষার পর নদী পিছিয়ে যাওয়ার জন্যই প্রতি বছর এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কীভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, সেটাও প্রশাসনের ভাবা প্রয়োজন। নইলে এলাকার মানুষজনের সমস্যা থেকেই যাবে।’

রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও রাকেশ টাপো জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেই আমি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরে চিঠি দিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। গ্রামবাসীরা যাতে খুব তাড়াতাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল পান, তার জন্য আমি ফের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলব।’