সংক্ষিপ্ত

সাত বছর আগের পুর নির্বাচনের খরচের হিসাব চেয়ে প্রার্থীদের শোকজ নোটিশ পাঠালো বীরভূম জেলা প্রশাসন (Birbhum District Administration)। এটা বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) নতুন কৌশল, এমনই অভিযোগ বিজেপি (BJP) ও কংগ্রেসের (Congress)।

নির্বাচনের পর কেটে গিয়েছে সাত বছর। পুরসভাগুলির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। কাজ চালাচ্ছেন পুর প্রশাসকরা। সামনেই, পরের নির্বাচন। তার আগে যেন হঠাৎ ঘুম ভেঙে গা ঝাড়া দিয়ে উঠল প্রশাসন। বীরভূম জেলার পাঁচটি পুরসভায়, প্রার্থীদের কাছে বিগত নির্বাচনে খরচের হিসাব চেয়ে শো-কজ নোটিশ পাঠিয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসন (Birbhum District Administration)। মঙ্গলবারের মধ্যেই অধিকাংশ প্রার্থীই শোকজের জবাব দিয়েছেন। তবে, এই শোকজ নোটিশে, সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করার এটা একটা নতুন কৌশল। শাসক দলের নির্দেশেই এটা করা হচ্ছে। এই নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বিজেপি (BJP) ও কংগ্রেস (Congress) দুই বিরোধী দলই।

বীরভূম জেলায় মোট পাঁচটি পুরসভা রয়েছে - রামপুরহাট, বোলপুর, সিউড়ি ও সাঁইথিয়া এবং দুবরাজপুর। প্রথম চারটি পুরসভায় নির্বাচন হয়েছে ২০১৫ সালে, দুবরাজপুরে ২০১৩ সালে। করোনা বাধ না সাধলে, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচটি পুরসভাতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সব দলেই নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। চলছে প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজও। এই সময় আচমকা বিগত নির্বাচনের অধিকাংশ প্রার্থীকেই নোটিশ পাঠাল বীরভূম জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার পাঠানো ওই নোটিশে বিগত নির্বাচনে প্রার্থীরা খরচের হিসাব কেন জমা দেননি তার কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে শো-কজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাবি চিঠি জমা দিতে হবে সিউড়িতে নির্বাচন কমিশনের (West Bengal State Election Commission) অফিসে। 

বিরোধীরা শোকজের জবাব দিলেও, পুর নির্বাচনের ঠিক আগে সাত বছর আগের খরচের হিসাব চেয়ে পাঠানো এই শোকজ নোটিশ, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশেই পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করছেন তাঁরা। তাদের দাবি, এর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বল প্রয়োগ করে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়নে জমা দিতে দেওয়া হয়নি। সেই ঘটনায় মুখ পুড়েছিল শাসক দলের। তাই এবার ছলের রাস্তা নেওয়া হচ্ছে। আইনি ধারার ফাঁককে কাজে লাগিয়ে, প্রশাসনের মাধ্যমে বিরোধীদের মনোনয়ন বাতিল করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। 

বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি শুভাশিস চৌধুরী (Subhasis Chaudhuri) যেমন জানিয়েছেন, সাত বছর আগেই, নির্দিষ্ট ৩০ দিনের মধ্যে খরচের হিসাব তাঁরা জমা দিয়েছিলেন। তাঁর মতে সাত বছর পর নতুন করে আগের হিসাব জমা দেওয়াটা মোটেই সম্ভব নয়। কারণ, সাত বছর আগের খরচের হিসাব মনে রাখা কার্যত অসম্ভব। তাছাড়া, এর মধ্যে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন, কোনও ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের কাছ থেকে খরচের হিসাব কীভাবে পাওয়া যাবে, তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। শাসক দলের যারা নতুন করে ভাউচার জোগাড় করে ফের খরচের হিসাব জমা দিচ্ছেন, তারা সম্পূর্ণ মন গড়া হিসাব দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর আশঙ্কা, শাসক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই প্রশাসন এটা করছে। প্রয়োজনে তিনি উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

বীরভূম জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি চঞ্চল মুখোপাধ্যায়ের (Chanchal Mukherjee) দাবি, তাঁদের দলের যে প্রার্থীরা নির্বাচনের খরচের হিসাব জমা দিয়েছিলেন, তাঁদেরও এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, জেলাশাসকের দফতরই নির্বাচনী রেকর্ড রাখতে ব্যর্থ। তিনি আরও জানিয়েছেন, খরচ জমা দেওয়ার সমস্ত প্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে। বিজেপির মতো কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, আইনি অজুহাতে তাঁদের কোনও প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হলে, উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবে।

তবে, এর পিছনে কোনও রাজনীতি নেই বলেই দাবি জেলাশাসক বিধান রায়ের (Bidhan Roy)। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনী হিসাব জমা দেওয়া প্রত্যেক প্রার্থীরই কর্তব্য। তাঁরা সেটা করেননি বলেই, আইন মেনে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। শাসক-বিরোধী মিলিয়ে মোট ৩৩৫ জনকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনার জল এবার কতদূর গড়ায়, ৭ বছরের আগের নির্বাচনী হিসাব দেওয়া নেই বলে কোনও প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার।