সংক্ষিপ্ত

ঘূর্ণিঝড় আমফানে তছনছ বাংলা

কিন্তু, ঝড় চলে যাওয়ার পর কোথায় প্রশাসন

নিজেই গাছ কাটতে গিয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের এক ফল ব্যবসায়ী

দুটি গাছের মধ্যে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল তাঁর

 

ঘূর্ণিঝড় আমফান বাংলা তছনছ করে দিয়ে গিয়েছে গত বুধবার। তার তিনদিন পর সেই ঝড়ের বলি হলেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানা এলাকার এক পাইকারি ফল ব্যবসায়ী। জানা গিয়েছে প্রশাসনের অভাবে তিনি নিজেই এদিন গাছ কাটতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আচমকা দুটি গাছের মধ্যে পিষ্ট হয়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

জানা গিয়েছে ঘটনাটি ঘটেছে বিষ্ণুপুর থানার খড়িবেড়িয়া এলাকায়। সেখানকারই দক্ষিন কাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা ছিলেন ফল ব্যবসায়ী খোকন ঘরামী (৫২ )। খড়িবেড়িয়া বাজারে তাঁর একটি পাইকারি ফলের দোকান ছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের দাপটে সেই দোকানের পিছনের দিকে একটি শিরিষ গাছ ভেঙে পড়েছিল।

তিনদিন ধরে বিপজ্জনক অবস্থায় দোকানের উপরেই পড়েছিল গাছটি। প্রশাসনের তরফে এরমধ্যে সেই গাছ সরানোর কোনও উদ্যোগ নিতে না দেখে খোকন ঘরামি রবিবার সকালে নিজেই গিয়েছিলেন কুড়ুল দিয়ে সেই গাছের ডাল কেটে জায়গাটি পরিষ্কার করতে। কিন্তু, যে ডালটি তিনি কাটেন, সেটিই আচমকা তার উপরে এসে পড়ে। ফলে পাশের একটি নারকেল গাছের গুড়ির গায়ে একেবারে পিষে যান খোকন।

স্থানীয় বাসিন্দারা, তাঁর আর্তনাদ শুনে ছুটে এসেছিলেন। তারা এসে দেখেন নারকেল গাছের গায়ে তিনি ওই শিরিষগাছের ডালটিতে পিষ্ট অবস্থায় ঝুলছেন। তাঁরাই ওই ডালটি আরও কয়েক টুকরো করে দড়ি বেঁধে অচৈতন্য খোকনকে নিচে নামিয়ে আনেন। স্থানীয়দের দাবি, নিচে নামানোর পরও তাঁর প্রাণ ছিল। কিন্তু, নানাভাবে চেষ্টা করেও তাঁর জ্ঞান ফেরানো যায়নি। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা অবশ্য জানান, নার্সিংহোমে আনার আগেই কোকনের মৃত্যু হয়েছে।

পরে তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ।

তবে এই ঘটনায় বিষ্ণুপুর এলাকার মানুষ স্থানীয় প্রশাসনের উপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলছেন, প্রশাসনের তরফেই যদি বিপজ্জনকভাবে ঝুলে থাকা ওই গাছটি সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হত, তাহলে খোকন ঘরামি-কে এভাবে মরতে হত না। ঘূর্ণিঝড় বিদায় নেওয়ার তিনদিন পরেও তার বলি হতে হত না আরেক তরতাজা প্রাণকে। বস্তুত শুধু খোকন ঘরামিই নন, তাঁর মতো রাজ্যের অনেকেই প্রশাসনের উপর ভরসা হারিয়ে নিজেরাই গাছ কাটা, বা ইলেকট্রিকের তার সরাতে গিয়ে প্রাণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছেন। শনিবারই রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধারকাজ ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সেনাসদস্যদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। বিরোধীরা অবশ্য একে বলেছেন মুখ্য়মন্ত্রীর 'বিলম্বে বোধদয়'।