সংক্ষিপ্ত
সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপি ছাড়লেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। দলের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগে তাঁকে শোকজ করা হয়েছিল। তারপরই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
বেশ কিছু দিন ধরেই বেসুরো ছিলেন তিনি। একের পর এক দল বিরোধী মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছিল তাঁকে। ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন দলীয় নেতৃত্বদের বিরুদ্ধেও। অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপি (BJP) ছাড়লেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী (Krishna Kalyani)। দলের বিরুদ্ধে কথা বলার অভিযোগে তাঁকে শোকজ (Show Cause) করা হয়েছিল। তারপরই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
আগেই জেলা বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে জেলা নেতৃত্ব ও সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর (Debasree Chaudhuri) বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। এমনকী, দলীয় কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। তারপর সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকেই নিজের দফতরের মধ্যে থাকা দেবশ্রী চৌধুরীর ছবিও ঢেকে দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র (Conspiracy) করা হচ্ছে। কোনও ষড়যন্ত্রকারীর ছবি তিনি নিজের কার্যালয়ে রাখবেন না।
আরও পড়ুন- মৃতের নামেও তোলা হচ্ছে রেশন, তালিকা থেকে সেই নাম বাদ দিতে তৎপর রাজ্য
তবে শুধুমাত্র দেবশ্রী চৌধুরীর ছবিই নয় একে একে তাঁর দফতর থেকে সরে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) ছবিও। তখন থেকেই তৈরি হয়েছিল জল্পনা। এছাড়া কয়েকদিন আগেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বাবুল সুপ্রিয়। সেই সময় বিজেপির সব নেতাই বাবুলের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সাংবাদিক বৈঠকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল বাবুলকে। তখন বাবুলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। বাবুলের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, "বাবুল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তাঁর ব্যক্তিগত। দলে সম্মান পাননি বাবুল। তাই দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বাবুল ঠিক কাজ করেছেন। কে কোথায় অসম্মানিত বোধ করছেন, তা দেখতে হবে দলকে। যাঁরা দল ছাড়ছেন, তাঁরা অসম্মানিত হয়েই ছাড়ছেন। আমার দাবি মানার জন্য দলকে যথেষ্ট সময় দিয়েছি। সময় মতো কাজ না-হলে এবার আমাকে অন্য কিছু ভাবতে হবে।"
আরও পড়ুন- Durga Puja 2021: পুজো মণ্ডপে এবারও 'নো-এন্ট্রি' দর্শকদের, বড় ঘোষণা কলকাতা হাইকোর্টের
বাবুলের সমর্থনে করা মন্তব্যেই নিজের দল ছাড়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক। যা তাঁর দল ছাড়ার জল্পনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর এবার সেই জল্পনাকেই সত্য করে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিলেন তিনি। শুক্রবার তিনি বলেন, "দেবশ্রী চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।"
এ প্রসঙ্গে দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, "কারও ব্যক্তিগত ভাবে আমার সঙ্গে শত্রুতা করার থাকলে আমার কিছু করার নেই। উনি বহুদিন ধরেই জেলার সংগঠন ও রাজ্য সংগঠন নিয়ে কথা বলছিলেন। আমার সঙ্গে ওঁর কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। কোনও দিন কথা কাটাকাটিও হয়নি। ব্যক্তিগত কারণে যদি আমার উপর কিছু আরোপ করেন তাহলে সে বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। সেটা দল ঠিক করবে। আমি ওঁর বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করব? উনি একমাস ধরে আমার বিরুদ্ধে একাধিক মন্তব্য করেছেন। তা নিয়ে আমি কিছুই বলিনি।"
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার কৃষ্ণ কল্যাণীকে শোকজ করে রাজ্য কমিটি। নোটিশও পাঠানো হয়েছে তাঁকে। কৃষ্ণ কল্যাণীর দাবি, সময় মতো শোকজের জবাব দেওয়া হবে। আর এই শোকজের পরই বিজেপি ছাড়লেন তিনি। বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর থেকেই বিজেপিতে শুরু হয়েছে ভাঙন। দল যাতে আর না ভাঙে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য সম্প্রতি দিল্লিতে বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে বার্তা দিয়েছিলেন অমিত শাহ। কিন্তু, তারপরেও ফের ভাঙন দেখা দিল দলে। যদিও পদ্ম ছেড়ে বাবুল, মুকুল রায়ের পথ অনুসরণ করে কৃষ্ণ কল্যাণী এখন জোড়াফুলে যান কিনা সেটাই দেখার বিষয়।