সংক্ষিপ্ত
মঙ্গলবার সকাল থেকেই বাঘ সুমারির কাজে লেগে পড়েছেন বনকর্মীরা। মোট তিনটি পর্বে বাঘ গণনার কাজ চলবে।
চার বছর পর ফের সুন্দরবনের জঙ্গলে (Sundarbans forest) বাঘের (Royal Bengal Tiger) সঠিক সংখ্যা (number of tigers) কত তা জানতে টাইগার এস্টিমেশনের (tiger estimation) কাজ শুরু হল। সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা (Camera trapping) বসিয়ে বাঘের ছবি তোলা হবে। একমাস ব্যাপী ছবি তোলার পর সেই ছবি বিচার বিশ্লেষণ করে সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণ করবে বন দফতর।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ আছড়ে পড়তে পারে সুন্দরবনের ওপর। আবহাওয়া দফতরের তরফে সেই পূর্বাভাস ছিল। সেই কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখেই সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘ গণনার কাজ ৫ই ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে ৭ই ডিসেম্বর করা হয়। সেই মোতাবেক মঙ্গলবার সকাল থেকেই বাঘ সুমারির কাজে লেগে পড়েছেন বনকর্মীরা। মোট তিনটি পর্বে বাঘ গণনার কাজ চলবে।
প্রথম পর্বে নৌকায় বা ভুটভুটিতে জঙ্গল লাগোয়া নদী, খাঁড়িতে ঘুরে ঘুরে বাঘের পায়ের ছাপ বা বাঘের দেখা যে এলাকায় বেশি পাওয়া যাবে সেগুলিকে চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপে সেগুলি নথিভুক্ত করবেন বনকর্মীরা। এরপর দ্বিতীয় পর্বে ক্যামেরা বসানোর কাজ চলবে। আর তৃতীয় পর্বে সেই ক্যামেরায় ওঠা ছবি বিচার বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
শেষ পাওয়া ব্যাঘ্র সুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে ৯৬ টির মতো বাঘ রয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে যেভাবে বাঘের হামলার ঘটনা ঘটছে এবং পর্যটকরা সুন্দরবনে বেড়াতে এসে বারে বারে যেভাবে বাঘের দর্শন পেয়েছেন তাতে সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা আগের থেকে বেশ খানিকটা বেড়েছে বলেই অনুমান করছেন বন আধিকারিকরা। তবে ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও সে ছবি বিশ্লেষণ করে তবেই বাঘের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বন দফতর সূত্রে খবর, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় প্রথম ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের কাজ শুরু হবে। এই ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের জন্য বনকর্মীদের ১০ টি বিশেষ দল তৈরি করা হচ্ছে যারা জঙ্গলের মধ্যে ক্যামেরা বসানোর কাজ করবেন। এক একটি দলে অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন করে বনকর্মীরা রয়েছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০ বনকর্মী এই কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগণা বনবিভাগ দুই জায়গাতেই ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে এই ‘টাইগার এস্টিমেশান’ এর কাজ চলবে। কিভাবে ক্যামেরা বসানো হবে, কিভাবেই বা সেই ক্যামেরা কাজ করবে, বাঘের গতিবিধি কিভাবে নির্ধারণ করা হবে এইসব বিষয় নিয়ে বনকর্মীদের ইতিমধ্যেই ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে বনকর্মীদের। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বনকর্মীরা বেড়িয়ে পড়েছেন সেই কাজ করতে।
সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের বসবাস যে এলাকার রয়েছে ইতিমধ্যেই সেই জায়গা নির্ধারিত করা হয়েছে। মোট ৭৪৮ টি জায়গায় ক্যামেরা বসানো হবে। এক একটি জায়গায় দুটি করে ক্যামেরা লাগানো হবে, যাতে সেই ক্যামেরার সামনে বাঘ এলে তার সামনে ও পিছনের দিকের ছবি তাতে ধরা পড়ে। আর ক্যামেরার সামনে বাঘেরা যাতে আসতে আকৃষ্ট হয় সেই কারণে পচা মাংস আর পচা ডিমের সংমিশ্রণে তৈরি লিয়র একটি বাঁশের টুকরোয় লাগানো হচ্ছে। সেই গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে বাঘ ক্যামেরার সামনে এলেই স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা তার ছবি তুলবে। ৩০ থেকে ৩৬ দিন পরে সেই ক্যামেরাগুলি খুলে নিয়ে তাতে ওঠা ছবি বিশ্লেষণ করে সুন্দরবনের সঠিক বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করবেন বিশেষজ্ঞরা।
এই ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যাবে, তেমনি সুন্দরবনের জঙ্গলে আরও কি কি ধরনের জীবজন্তু রয়েছে সে সম্পর্কে ও অনেক তথ্য জানা যাবে। পাশাপাশি সুন্দরবনে বাঘেদের খাবার অর্থাৎ হরিণ, শূকর, বানর যথাযথ পরিমাণে আছে কিনা সে বিষয়েও একটা তথ্য পাওয়া যাবে।
আগে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বাঘ গননা হলেও বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতেই বাঘের সঠিক সংখ্যার অনুমান করার কাজ শুরু হয়েছে সুন্দরবনে। সংক্রিয় জিপিএস ও ইনফ্রারেড প্রযুক্তি সম্বলিত হাই রেজুলেশান নাইট ভিসন ক্যামেরার সামনে দিয়ে দিনে, রাতে যে কোন সময়, যে কোন জীবজন্তু গেলেই সেই ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়বে।