সংক্ষিপ্ত
সিবিআই ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সানমার্গ নামে একটি বেআইনি অর্থলগ্নিকারী সংস্থার থেকে প্রায় ৩ কোটি ৭৫ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রণবের বিরুদ্ধে।
বর্ধমান পুরসভার (Burdwan Municipality) প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে (Pranab Chatterjee) গ্রেফতার (Arrest) করল সিবিআই (CBI)। প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একটি বেসরকারী অর্থলগ্নিকারী মামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার কলকাতায় তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করে। শুক্রবার সকালে আসানসোলের সিজেএম তোলা হলে তাঁকে তিন দিনের সিবিআই হেফাজতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার ফের তাঁকে আদালতে তোলা হবে। পাশাপাশি সিবিআইয়ের একটি দল বর্ধমানেও অভিযান চালায়। ধৃত প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে যায় সিবিআইয়ের একটি দল। অন্যদিকে বর্ধমান শহরের ঢলদিঘিতে তাঁর অফিসেও সিবিআই তল্লাশি চালায়।
সিবিআই ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সানমার্গ নামে একটি বেআইনি অর্থলগ্নিকারী সংস্থার থেকে প্রায় ৩ কোটি ৭৫ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রণবের বিরুদ্ধে। প্রায় ৪ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে। এই মামলার চার্জশিটে চন্দ্রশেখর সাভার এবং সৌম্যদ্বীপ ভৌমিকের নাম ছিল। সিবিআই সানমার্গ চিটফান্ডের তদন্ত শুরু করেছিল ২০১৮ সালে। পরে তদন্তের সময় প্রণবের নাম উঠে আসে। তখনই চার্জশিটে তাঁর নাম যুক্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে এই মামলায় জেরার জন্য প্রণবকে কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। সেই জেরা শেষে বিকেলে বেরোতেই সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পরে রাতের দিকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মোটা টাকার বিনিময়ে সানমার্গে লগ্নিকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও অন্যান্য় নানাভাবে ওই সংস্থাকে তিনি সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ।
শুক্রবারই বর্ধমানে প্রণবের বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআইয়ের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল। অন্যদিকে, বর্ধমানেরই ঢলদিঘির একটি বহুতল আবাসনে তদন্তে যান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার প্রতিনিধিরা। জানা গিয়েছে, ওই বহুতল আবাসনেই ছিল সানমার্গের অফিস। আর সেই অফিসের ভাড়া দিয়েছিলেন খোদ পুরপ্রশাসক। প্রণবের বিরুদ্ধে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কুলটি থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪১৯, ৪২০, ৪৬৮ ও ১২০/বি নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
বাড়িতে তল্লাশি চালানো প্রসঙ্গে প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রেখা চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমাদের বাড়িতে সিবিআইয়ের টিম এসেছিল। তারা সানমার্গ নিয়ে তদন্ত করছে। আমাদের একটি বিল্ডিং সানমার্গ ভাড়া নিয়েছিল কিছুদিনের জন্য। আমরা জানতাম ওরা টেক্সটাইলের কাজ করে। এরপর যখন রিয়েল এস্টেটের কাজ শুরু করল ততদিনে ওরা ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছে। এর বেশি আমরা আর কিছুই জানি না।" আদালত থেকে বেরিয়ে আসার পর প্রণবের কাছে সংবাদমাধ্যম জানতে চেয়েছিল, তিনি চক্রান্তের শিকার কি না? তাতে তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘২০১০ সালের মামলায় ২০২১ সালে আমাকে গ্রেফতার করা হল। আপনারাই বুঝে নিন।’’
উল্লেখ্য মাস চারেক আগে প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে বর্ধমান পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। বর্ধমান পুরসভার পুরপতি হিসেবে দীর্ঘসময় দায়িত্বে ছিলেন তিনি। প্রণব পুরপ্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়ার পর ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় তদন্তের জন্য একাধিকবার পুরসভায় গিয়েছিল সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দল। সেইসময়, প্রণবকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল তারা। যদিও তখন সেই ঘটনায় যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন তিনি। অবশেষে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করল সিবিআই।