সংক্ষিপ্ত

মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জ, সুতির অল্প বিস্তর এলাকা ছাড়াও কান্দিতে এদের রমরমা দেখা যেত। কিন্তু, উপযুক্ত কাজ না পেয়ে এখন বাপ-ঠাকুরদার আমলের এই পেশা থেকে মুখ  মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। 

এরাও 'শিল্পী' (Artist)। তবে সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত আর পাঁচটা শিল্পীর মতো এদের কদর নেই। এদের পোশাকি নাম 'শোলা শিল্পী' (Shola Artist)। কেবল বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পুজো (Puja), রাজনৈতিক অনুষ্ঠান (Political Event) এলে এলাকায় ও মণ্ডপে শোভা বাড়াতে এদের জুড়ি মেলা ভার। আগে অবশ্য নানান সামাজিক অনুষ্ঠান বিয়ে, পৈতে, অন্নপ্রাশনে এদের ডাক পড়ত। তবে এখন তা একেবারেই দেখা যায় না। মুর্শিদাবাদ জেলার (Murshidabad District) সামসেরগঞ্জ, সুতির অল্প বিস্তর এলাকা ছাড়াও কান্দিতে এদের রমরমা দেখা যেত। কিন্তু, উপযুক্ত কাজ না পেয়ে এখন বাপ-ঠাকুরদার আমলের এই পেশা থেকে মুখ  মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। 

এই প্রসঙ্গে শোলা শিল্পী কান্দির বিনয় পাল বলেন, "আমাদের অবস্থা খুব শোচনীয়। আজ এই শেশায় আর লাভ নেই। সারা বছরে শুধু বিয়ে-আর বড় মাপের পুজোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। ওই বিয়ে বাড়ির টোপর, চাঁদ মালা বা কদম ফুল বানিয়ে, কিংবা দেবী প্রতিমার সাজ বানানোর মজুরি আর কাঁচামালের দাম মিটিয়ে হাতে সেই ভাবে আর কিছুই থাকে না। তাই সারা বছর অন্য কাজের সুযোগে ঘুরে বেড়াতে হয় নানান জায়গা। আর এই উৎসবের মরশুমে এখন একটু বাড়তি উপার্জন হলে বছরের বাকি সময় হয়তো শ্রমিকের কাজ, আর তা না হলে চাষের জমিতে কাজ করেই কোনও রকমে দিন চালাতে হয়। এর জেরে খুবই সমস্যায় পড়ি।" 

আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এমনিতেই শোলা শিল্পীদের কাজের চাহিদা যেমন কমেছে, তেমনই মুর্শিদাবাদে আগে বিভিন্ন খাল, বিল থেকে উৎকৃষ্ট মানের যে জৈব শোলার কাঁচা মাল পাওয়া যেত, বর্তমানে অধিকাংশ খাল, বিল মজে যাওয়ায় উৎকৃষ্ট মানের সেই শোলাও আর পাওয়া যাচ্ছে না। আর যতটুকু পাওয়া যায় তার দাম বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে শোলা শিল্পীদের  কারখানায় বাকি শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে শিল্পীদের কাছে আর টাকা থাকছে না। পাশাপাশি শোলা শিল্পের উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। উপযুক্ত মূল্য মেলে না ক্রেতাদের কাছ থেকে। 

সম্প্রতি বাজারে এসেছে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি কৃত্রিম প্রজাতির শোলা। যা 'থার্মোকল' নামেই বেশি পরিচিত। এই কৃএিম শোলা তুলনামূলক কম দামে বাজারে পাওয়া গেলেও এতে কাজ করে ঠিক মতো তৃপ্তি মেলেনা বলেও জানান শোলা শিল্পীরা। এ নিয়ে বহরমপুরের এক শোলা শিল্পী দীপঙ্কর দাস বলেন, "এই ধরনের শোলার গুণগত মান জৈব শোলার চেয়ে অনেক নিম্ন। যা দিয়ে, শোলার মালা, চাঁদোয়া, দোলাঞ্চী, মান্দাস স্টেজের নকশা খুব ভালো করে বানানো সম্ভব হয় না। তাই বাইরে থেকে শোলা আমদানি করে কাজ ওঠাতে হচ্ছে। এককথায় শোলা শিল্পীদের অবস্থা আজ তলানিতে এসে থেকেছে। তাই সরকার যদি একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে জেলার এই পুরাতন শিল্প হয়তো টিম টিম করে হলেও কোনওরকমে টিকে থাকবে।"