সংক্ষিপ্ত

  • লকডাউনের মধ্যে অভাব দেখা দেয় পরিবারে
  • কীভাবে সংসার চলবে ভেবে পাচ্ছিলেন না
  • তখনই ফুচকা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তাঁরা
  • আজ 'ফুচকাওয়ালা' বাসিন্দাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে

তাঁরা ফুচকাওয়ালা। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা না হলেও এই পরিচয়ই জীবনযুদ্ধে এখন তাঁদের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। জীবন খাতার প্রতি পাতার হিসেব মেলানোটা কঠিন হলেও খড়দহের ইঞ্জিনিয়ার ভাইবোনের কাছে তা এখন অনেকটাই সহজ হয়ে উঠেছে। বলা ভালো সহজ করে তুলেছেন তাঁরা নিজেরাই। 

উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর মহকুমার থড়দহের বিবেকনগরের বাসিন্দা জ্যোতির্ময়ীর জীবন বেশ ভালোই চলছিল। ইঞ্জিনিয়ার দাদার অনুপ্রেরণায় বি টেক করে বড় কোনও সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করবে বলে মনস্থিরও করে ফেলেছিলেন । কিন্তু সোজাসাপটা জীবনে ঝড় আছড়ে পড়ে গত বছর।  দাদা দেবজ্যোতির অফিস থেকে জানিয়ে দেয়, মাসের শেষে বেতন পেলেও তা পরিমাণে অনেকটাই কম পাবেন । ব্যস ! ভাই-বোনের স্বপ্নের জাল কেমন যেন গুটিয়ে আসতে শুরু করে । কী করবেন ? কীভাবে সংসার চলবে ? ভেবেই পাচ্ছিলেন তাঁরা । তখন একমাত্র সম্বল বলতে বাবা শ্রীদাম সাহার পরিত্যক্ত মুদিখানার দোকান । পুঁজির অভাবে যা ১০ বছর ধরে বন্ধ । মা সুশীলা সাহা পৌরসভার আইসিডিএস কর্মী । কিন্তু তাঁর সামান্য বেতনে সংসার ভালোমতো চালানো দুষ্কর হয়ে উঠছিল । দু'তিন মাস এভাবেচলার পর তাঁরা ভাবেন যে দোকানটা হয়তো এবার বিক্রি করতে হবে । কিন্তু প্রতি মুহূর্তে কিছু করার স্বপ্ন যে তখনও তাঁদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে । সেই সময়ই ফুচকা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তাঁরা। হবে ফুচকাওয়ালা। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কেই ফুচকার দোকান খুলবে আর গঞ্জনা শুনতে হবে না তা কখনও হয়। হয় না। তাঁদের ক্ষেত্রেও হয়নি। কিন্তু তাঁরা লজ্জা পাননি। পিছিয়ে আসেননি। মা-বাবার অনুপ্রেরণায় তাঁরা এগিয়ে চলেছেন। তাই তো আজ 'ফুচকাওয়ালা' সেখানকার বাসিন্দাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।

আরও পড়ুন- 'ট্যাঁকে নেই জোর'-সেখানে মিলবে ৩২ হাজার চাকরি, প্রশ্ন উসকে দিয়ে আর কী বললেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি

আরও পড়ুন-অম্বুবাচীর দিন সকালে খুলে গেল কালীঘাট মন্দিরের দরজা, প্রবেশ করা যাবে নির্দিষ্ট সময়

আর ফুচকা বিক্রি করেই জ্যোর্তিময়ী নিজের স্বপ্নের দিকে আরও একধাপ এগোতে পেরেছেন। এখন তিনি বি টেক পড়ছেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। তাঁর স্বপ্ন বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু, ফুচকাকে ভুলবে না তিনি। আজ তিনি জীবনে যতটুকু পেয়েছেন তার পিছনে এই ফুচকার অবদান সবচেয়ে বেশি। 

এখন তাঁর আরও একটি স্বপ্ন রয়েছে। দোকানটিকে আরও বড় করতে চান। তবে তার জন্য প্রয়োজন মানুষের ভালোবাসা। হরেকরকমের ফুচকা পাওয়া যায় তাঁর দোকানে। দই ফুচকা, চাটনি ফুচকা, মোগলাই ফুচকা, চিংড়ি ফুচকা আরও কত কি। করোনার জেরে এখন দোকানে ভিড় কম হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে অনলাইনের মাধ্যমে সবথেকে বেশি ফুচকা বিক্রি করছেন। অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমেই ফুচকা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন জ্যোর্তিময়ী। দুপুর থেকে হোম ডেলিভারি শুরু হয়। সন্ধের সময় চাপটা একটু বেশি থাকে। আর সেই চাপ সামলাতে সাহায্যের জন্য দু'জন লোকও রেখেছেন তাঁরা। তবে কঠিন সময়ের মধ্যে দান, দয়া, ভিক্ষা নয়। মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকাই আসল লক্ষ্য ইঞ্জিনিয়ার ভাই-বোনের কাছে। আর ইচ্ছেডানার উপর ভর করে সেদিকেই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলছেন তাঁরা।