সংক্ষিপ্ত
- বৃদ্ধ বয়েসে বাবা-মা-র থেকে মুখ ফিরিয়েছে ছেলে
- স্ত্রী ও মেয়ে-কে নিয়ে আলাদা থাকে সে
- লকডাউনে অনাহারে দিন কাটছে বৃদ্ধ দম্পতির
- নিরুপায় হয়ে শরণাপন্ন হলেন আদালতের
আশিষ মণ্ডল, বীরভূম: স্বামী-স্ত্রী আর অ্যালসিশিয়ান, জায়গা বড়ই কম।' বৃদ্ধ বাবা-মা জায়গা পাননি ছেলের ফ্ল্যাটে। এক যুগ পেরিয়ে দিয়েছে, কোনও যোগাযোগই নেই। এভাবে আর কতদিন চলবে! নিরুপায় হয়ে এবার মাসোহারার দাবিতে আদালতের দারস্থ হলেন বৃদ্ধ দম্পতি। অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের দূবরাজপুরে।
দুবরাজপুর শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুলপল্লিতে থাকেন ষাটোর্ধ্ব উত্তম দত্ত ও তাঁর স্ত্রী সোনালীদেবী। এলাকার বাসস্ট্যান্ডে বাসের টাইম ঘোষণা করতেন ওই বৃদ্ধ। কিন্তু তাতে আর ক'পয়সাই বা আয় হয়! অভাবে সংসারে একমাত্র সন্তানকে মানুষ করার জন্য কম কষ্ট করতে হয়নি ওই দম্পতিকে। তারপর সেই ছেলে যখন কলকাতা পুলিশের চাকরি পেল, তখন আনন্দে পাড়ায় মিষ্টি বিলি করেছিলেন স্বামী-স্ত্রী। ভেবেছিলেন, পুরানো বাড়িতে ছেড়ে পাকাপাকিভাবে ছেলের ফ্ল্যাটে থাকবেন। সেই আশা আর পূরণ হল কই! কলকাতায় স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে ছেলে আলাদা সংসার পেতেছে। বাবা-মা-র সঙ্গে কোনও যোগাযোগই রাখে না সে। সোনালীদেবী জানালেন, 'বছরে দু'একবার বন্ধুর ফোন থেকে ওঁর বাবার সঙ্গে কথা বলে। কতদিন হয়ে গেল, ছেলেটার গলা শুনিনি। আমার কাছে ফোন নম্বরও নেই। ১৩ বছর তার মুখ দেখিনি।' আর উত্তমবাবুর আক্ষেপ, 'ভেবেছিলাম ছেলে সুখেই থাক। আমরা বিরক্ত করব না। কিন্তু এখন আমার নিরুপায়। ছেলে যদি প্রতিমাসে কিছু টাকা না পাঠায়, তাহলে দু'জনে না খেতে পেয়ে মরব।' ওই দম্পতির হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে মামলা লড়ছেন আইনজীবী মল্লিকা দত্ত।
আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে 'পৌষমাস', জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা
জানা গিয়েছে, লকডাউনের আগে পর্যন্ত দুবরাজপুরে বাসস্ট্যান্ডে 'স্টার্টার'-এর কাজ করতেন উত্তম দত্ত। স্থায়ী চাকরি নয়, সরকারি বাসের চালক ও কডাক্টররা খুশি হয়ে যা দিতেন, তা দিয়ে চলে দু'জনের সংসার। কিন্তু বাস বন্ধ, কেউ আর টাকাও দেয় না। দিনভর বাসস্ট্যান্ডে বসে ফিরতে হয় খালি হতে। বাঁচার তাগিদে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি।