সংক্ষিপ্ত
মূলত জঙ্গিপুর মহকুমা সংলগ্ন জেলার উত্তর প্রান্ত নিমতিতা, শোভাপুর, ডাকবাংলো মোড় সংলগ্ন বালির চর পেরিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটছে এই জাল নোটের।
আন্তর্জাতিক স্মাগলিং তথা চোরাচালানের মানচিত্রে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) দীর্ঘ বছর ধরে একটি অতি পরিচিত নাম। সেক্ষেত্রে পাল্লা দিয়ে সীমান্ত হয়ে ভারত ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ছে 'জালনোট'। এই সীমান্ত লাগোয়া 'পদ্মার' বিস্তর চরের কোথাও কোথাও কাঁটা তার হীন উন্মুক্ত বর্ডারকে হাতিয়ার করেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জাল নোট কারবারীরা। সেক্ষেত্রে জালনোটের নেটওয়ার্ক (Fake Note Network) ব্যাপক আকারে ছড়াতে 'সফট টার্গেট' (Soft Target) হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে এলাকার স্কুল পড়ুয়া (School Student) থেকে স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবকদেরই। শতকরা ৫-১০ শতাংশ হারে কাজ পিছু কমিশনের 'টোপ' দিয়ে তাদের এই কাজে নামানো হচ্ছে। পুলিশ অবশ্য পাল্লা দিয়ে জাল নোট কারবারীদের এক এক করে ধরে পাঠাচ্ছে শ্রীঘরে। শুধু তাই নয় এই জালনোট কারবারে ব্যবহৃত এলাকার যুবকদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর চেষ্টাও করছে পুলিশ প্রশাসন (Police)।
জেলার উত্তর থেকে দক্ষিণ নানান প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে শুরু হয়েছে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি মূলক একাধিক প্রচার কাজ। মূলত জঙ্গিপুর মহকুমা সংলগ্ন জেলার উত্তর প্রান্ত নিমতিতা, শোভাপুর, ডাকবাংলো মোড় সংলগ্ন বালির চর পেরিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটছে এই জাল নোটের। বর্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই একটু একটু করে পদ্মার জলে ভাটা নামতে শুরু করে। শীত জাঁকিয়ে পড়তেই চরমে গিয়ে পৌঁছায়। এই সময় দিন ছোট হওয়ার ফলে সূর্য তাড়াতাড়ি অস্ত যায়। ফলে চরের চাষিরাও গবাদি পশু নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে ঘরের উদ্দশ্যে রওনা দেয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ জ্যাকেট বা শোয়েটারের আড়ালে নোট ভরে এপারে প্রবেশ করে ওপারের লোকেরা।
আরও পড়ুন- রাতে বিমান অবতরণে জটিলতা, আজ নয়, সোমবারই ত্রিপুরা যাচ্ছেন অভিষেক
আরও পড়ুন- এখন থেকে রোজ স্কুল নয়, নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাষি বলেন, "এই সময় সন্ধ্যার দিকে অথবা ভোরের আলো ফোটার মুখে চায়ের দোকান গুলিতে অনেক অচেনা মুখ দেখা যায়। বেলা বাড়লেই তারা হওয়ায় মিলিয়ে যায়।" বাড়তি রোজগারের আশায় এলাকার স্কুল পড়ুয়ারাও পাচারকারীদের হয়ে এলাকা চিনিয়ে দেওয়ার কাজ করে থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এমনকী, এই জেলাতেই কোটি টাকার মাদক সহ এক সদ্য স্কুলত্যাগী পড়ুয়াকে বমাল গ্রেফতারও করে মুর্শিদাবাদের পুলিশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু মুর্শিদাবাদেই গত ২ বছরে এখনও পর্যন্ত জাল নোট নিয়ে প্রায় শতাধিক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে বহরমপুরের ভুটিয়াবাজার শহরে ৫ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকার জালনোট সহ তিন জনকে গ্রেফতারে বাংলাদেশ যোগও মিলেছিল।
আরও পড়ুন- গ্রেফতার সায়নী ঘোষ, হেলমেট পরে তাণ্ডব 'বিজেপি'-র, উত্তাল ত্রিপুরা
এছাড়া সামসেরগঞ্জ,ফারাক্কায় একাধিক জালনোট উদ্ধারে বহু মিসিং লিঙ্ক এখনও জেলা পুলিশের হাতে। যা দিয়েই খুব দ্রুত বড় রাঘব বোয়ালরা ধরা পড়তে চলেছে বলেই মনে করছে জেলা পুলিশ। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মূলত ছোটদের হাতে নোট পাচার করা হয়। তারাই সীমান্ত পেরিয়ে এসে চক্রের লোকেদের হাতে টাকা পৌঁছে দেয়। পরে ‘ক্যারিয়ার’-দের মাধ্যমে সেই জাল টাকা ছড়িয়ে পড়ে বর্ধমান, কলকাতা সহ আরও নানান দিকে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বাংলাদেশ থেকে জালনোট নিয়ে এসে মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম চৌরিঅনন্তপুর থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয় পাচারকারীরা। কালিয়াচকও জালনোট পাচারের বড় ঘাঁটি। পরে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান ঘাট হয়ে পাকুড় হয়েও জাল নোট পাচার হয়। কেরালা, মুম্বই, কলকাতায় রাজমিস্ত্রির কাজে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে জালনোট নিয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট এজেন্টের কাছে তা পৌঁছে দেয়। একদিকে অশিক্ষা আর বাড়তি টাকার লোভ এই দুয়ের চক্রব্যূহের মধ্যে বেকার যুবকদের হাত ধরে সীমান্তে ছড়াচ্ছে জাল নোটের নেটওয়ার্ক।