সংক্ষিপ্ত

  • মমতার রাজ্য়ে এবার আজব নিদান
  • টিভি দেখলে, গান শুনলে জরিমানা
  • ফতোয়া জারি মুর্শিদাবাদের একাধিক গ্রামে
  • ফতোয়া জারির কমিটিতে তৃণমূলের তিননেতা 

মমতার রাজ্য়ে আজব নিদান। এবার থেকে টিভি দেখলে, গান শুনলে দিতে হবে জরিমানা। এমনই ফতোয়া জারি হয়েছে মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি গ্রামে। সব থেকে চিন্তারবিষয়, 'সমাজ সংস্কার কমিটি' নামের যে সংগঠন এই ফতোয়া জারি  করেছে,তার মধ্য়ে রয়েছেন তৃণমূলের তিন স্থানীয় নেতা। 

এ যেন একেবারে তালিবানি রাজ। খোদ মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের শাসনে মানুষের চিন্তাভাবনার ওপর জারি হচ্ছে ফতোয়া। মানুষ যখন চাঁদে পাড়ি জমাচ্ছে তখন পিছিয়ে পড়ছে  রাজ্য়েরই বেশ কয়েকটি গ্রাম। যেখানে টিভি দেখলে ,গান শুনলে দিতে হবে জরিমানা। গ্রামের মুরব্বিরা মিলে তৈরি করেছেন জরিমানার অঙ্ক। স্থির হয়েছে, গ্রামের কোনও দোকানে কাউকে টিভি চালাতে দেখলে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। একই জরিমানার অঙ্ক ধার্য করা হবে গান শোনার ক্ষেত্রেও। মোবাইলে কাউকে গান শুনতে দেখলেই ডেকে এনে বসানো হবে সালিশি সভায়।  

এখানেই শেষ নয়, ক্য়ারম খেলার ক্ষেত্রেও জারি হয়েছে এই ফতোয়া। কেউ লটারি বিক্রি বা কিনলেও ছাড় পাবে  না কমিটির নিদান থেকে। এ ক্ষেত্রে লটারি বিক্রেতাকে জরিমানা স্বরূপ নেওয়া হবে সাত হাজার টাকা। পাশাপাশি লটারি কিনলে দিতে হবে ২ হাজার টাকা জরিমানা। কোনও গাল গল্প নয়, খোদ পশ্চিমবঙ্গের বুকে সমাজ সংস্কারের নামে চলছে এক প্রকার 'তোলা আদায়ের মস্তানি'।

প্রশ্ন উঠেছে,প্রশাসনের সামনে এসব হতে দেখেও কেন কোনও  ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। অন্য় সময় যখন নিজেই মামলা দায়ের করতে দেরি করে না থানার লোকজন, সেখানে এইসব গ্রামের ক্ষেত্রে পুলিশের গড়িমসি কেন? স্থানীয় সচেতন মানুষজন জানিয়েছেন, এই বিষয়ে মুর্শিদাবাদের প্রত্য়ন্ত গ্রামের ভৌগলিক অবস্থান একটা বড় বিষয়। প্রকৃতির মানচিত্র বলছে,রঘুনাথগঞ্জ সাব ডিভিশনের অদ্বৈতনগর আসলে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গ্রাম।  বর্ষা শুরু হতেই বনসালাই নদী মূল শহুরে ভূখণ্ড থেকে এই গ্রামকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। প্রবল বানভাসী অবস্থায় পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি একপ্রকার বাইরেই চলে যায় এই গ্রামগুলি। যার সুযোগ নেয় স্থানীয় মুরব্বিরা। 

যদিও এই ঘটনা প্রকাশ্য়ে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ-প্রশাসন।  তারা  জানিয়েছে, কেউ এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নেবেন তারা। যা একপ্রকার জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার সমান।  তাই অভিযোগ দায়ের হয় না, পুলিশও কোনও ব্যবস্থা নেয় না। জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে অদ্বৈতনগরের মতো তিনটি গ্রামে প্রায় ১২ হাজার বাসিন্দা রয়েছেন। যাদের ওপর কর্তৃত্ব ফলায় সমাজ সংস্কার কমিটি।

কমিটির ফতোয়া অনুযায়ী কি কি বিষয় করা যাবে না গ্রামে ? দোকানে টিভি চালানোয় জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। লটারির টিকিট,মদ খাওয়ার মতে ঘটনা ঘটলেই ব্যবস্থা নেবে কমিটি। এমনকী মোবাইল ,কম্পিউটারে শোনা যাবে না গান। যারা এইসব কাজের সঙ্গে  যুক্ত থাকবে,তাদের  ৫০০ থেকে ৭০০০ টাকা জরিমানা করা হবে। এখানেই শেষ নয়, যারা অভিযুক্তদের ধরিয়ে দেবে তাদের জন্য়ও 'সাম্মনিকের'  ব্যবস্থা করেছে সমাজ সংস্কার কমিটি। সব মিলিয়ে মমতার বাংলায় তালি বানি শাসনের সাক্ষী থাকছে রাজ্য়বাসী।