সংক্ষিপ্ত

ত্যাগ ও প্রেমের কথা বলে গিয়েছেন ভগবান ঋসভ। সকলের সঙ্গে ধর্মীয় মেল বন্ধন যেমন গড়ে ওঠে, তেমনই তৈরী হয় মনের মেল বন্ধন।

ঐতিহ্যপূর্ণ জৈন সম্প্রদায়ের (Jain community) 'দশ লক্ষ্ণ পরব (Dash Lakshna Parab)'-এর  জুলুসে মেতে উঠেছে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad)। ধর্মীয় রীতি মেনে পূর্ণ ঐতিহ্যের সাথে জৈন সমাজ পালন করছে দশ লক্ষ্ণ পরব। এই উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভ নাথ অর্থাৎ আদিনাথ ভগবানের মূর্তি নিয়ে জুলুস পরিক্রমা হয় শহর জুড়ে। সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে এই জুলুস পরিণত হয় সম্প্রীতির উৎসবে।

আরও পড়ুন- শাঁখ কেন তিনবার বাজানো হয় জানেন, রয়েছে অদ্ভুত কারণ

সম্বৎ অর্থাৎ জৈন ধর্মের ক্যালেন্ডার মোতাবেক এই মাসটি তারা ভাদ্র মাস হিসেবে গণনা করেন। এই ভাদ্র মাস জৈন ধর্মের দিগম্বর সমাজের কাছে অত্যন্ত পবিত্র মাস। এই মাসের পঞ্চমী তিথিতে ওই সম্প্রদায়ের মানুষ কঠোর অনুশাসনের মধ্য দিয়ে দশটি ব্রত পালন করেন। তার মধ্যে অন্যতম সংযম, ক্ষমা, দান, ত্যাগ, তপ, সত্য। দিনে নির্দিষ্ট সময়ে একবার মাত্র জল পান করে ১০ দিন, ১৬ দিন এবং ৩২ দিন ২৪ ঘন্টার জন্য উপবাস করা হয়। আর বছরভর মানুষে মানুষে ভুল ভ্রান্তি এবং মালিন্য দূর করতে পালন করা হয় ক্ষমা বানী পর্ব। 

এর ফলে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সঙ্গে মন মালিন্য দূর করে ফের গড়ে ওঠে সৌহার্দ ও ভালোবার সম্পর্ক। এই ব্যাপারে স্থানীয় দিগম্বর সমাজের অন্যতম স্বপন জৈন বলেন, “ত্যাগ ও প্রেমের কথা বলে গিয়েছেন ভগবান ঋসভ। সকলের সঙ্গে ধর্মীয় মেল বন্ধন যেমন গড়ে ওঠে, তেমনই তৈরী হয় মনের মেল বন্ধন।”  নবাবী আমলে বানিজ্যে বসতি গড়তে রাজস্থান থেকে মুর্শিদাবাদে ঘাঁটি গাড়েন জগৎ শেঠ। মূলত ওই বণিকের হাত ধরে জৈন সম্প্রদায়ের মানুষ জিয়াগঞ্জ শহরের ব্যবসা বানিজ্য গড়ে তোলেন ।

আরও পড়ুন-  Indian Railway Job -ভারতীয় রেলে চাকরির দারুণ সুযোগ, দিতে হবে না কোনও লিখিত পরীক্ষা

ওই সময় পদ্মা নদীর জল পথকে ব্যবহার করে মালদহ, রাজশাহী এবং ঢাকাতে বস্ত্র ব্যবসার রমরমা করেন জৈন সম্প্রদায়। সেই সুত্রে এলাকায় ১৯১৬ সালে জৈন মন্দির গড়ে ওঠে লালগোলাতে। এই মন্দিরকে ঘিরেই স্থানীয় জৈন ধর্মের দিগম্বর ষরা সারা মাস জুড়ে ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠেন। এই ব্যাপারে মন্দির কমিটির সম্পাদক মনোজ জৈন বলেন, “এলাকার মানুষ এই মন্দিরকে অত্যন্ত সম্মানের শ্রদ্ধা করেন। ফলে জৈনদের যে কোনও আচার অনুষ্ঠানে সবার সমাগম আমাদের সমৃদ্ধ করে।” 

এদিকে এলাকার তুফান সাহা, অনিমেষ দাস, বিক্রম হালদার সকলে বলেন, “বছর ভর আমরা জুলুসের জন্য অপেক্ষা করি। জুলুস নিয়ে নগর পরিক্রমা শুরু হলে অসংখ্য মানুষ তা উপভোগ করেন সেই সঙ্গে নত মস্তকে ভগবান ঋষভকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।”