সংক্ষিপ্ত
মৌলি অর্থাৎ শিরোভাগ দর্শন পাওয়া যায়, তাই তিনি মা মৌলিক্ষা। জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে হাঁসুলি বাঁকের মত ছোট্ট পাহাড়ি ঝরণা। তার পশ্চিমে উচ্চ ভূমিতে মায়ের মন্দির।
সারা বছর অন্ধকারে ডুবে থাকলেও কাল পুজোয় আলোয় সেজে ওঠে এরাজ্যের বীরভূম (Birbhum) সীমান্তে ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) মলুটি গ্রাম (Maluti Village)। লোক মুখে শোনা যায় মলুটির মা তারা (Maa Tara) মায়ের বড় বোন(Elder Sister)। সচরাচর হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি পশ্চিম মুখে অধিষ্ঠিত হয় না। কিন্তু রামপুরহাট সীমান্তবর্তী দুমকা জেলার বর্ধিষ্ণু গ্রাম মলুটিতে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। করোনা অতিমারির কারণে এবার গ্রামে আতশবাজি পোড়ান হবে না। বসবে না মেলা।
মৌলি অর্থাৎ শিরোভাগ দর্শন পাওয়া যায়, তাই তিনি মা মৌলিক্ষা। জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে হাঁসুলি বাঁকের মত ছোট্ট পাহাড়ি ঝরণা। তার পশ্চিমে উচ্চ ভূমিতে মায়ের মন্দির। এক সময় জঙ্গল ঘেরা ছিল এই গ্রাম। মলুটির বাসিন্দা প্রয়াত গোপাল দাস মুখোপাধ্যয়ের বইয়ের পাতা থেকে জানা যায়, এই মূর্তি খ্রীষ্টিয় অষ্টম শতাব্দীর বৌদ্ধ তান্ত্রিক শৈলীর। আগে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের শাসিত ছিল এই অঞ্চল। তার থেকেই উৎপত্তি মলুটি নামের। তারও আগে মলুটি অঞ্চল ছিল সুবে বাংলার অন্তর্গত। তখন দিল্লীতে সম্রাট শাহজাহান।
মলুটি তখন রাজত্ব করতেন নানকরের তিন রাজ বংশধর- রাজ চন্দ্র, রাম চন্দ্র ও মহাদেব চন্দ্র রায়। পরে মল্লারপুরের শাসক কামাল খাঁর অতর্কিত আক্রমণে রাজ চন্দ্র নিহত হওয়ার পর তাঁর বড় ছেলে রাখড় চন্দ্র রায় রাজপরিবারের পুরোহিত দণ্ডিস্বামীর সঙ্গে মলুটির জঙ্গলে প্রবেশ করেন। সেখানেই তিনি ভগ্নপ্রায় এক প্রাচীন মন্দিরে পাথরের এক মূর্তি আবিষ্কার করেন। তারপর সেখানেই নগর পত্তন করেন। পরবর্তীকালে তিনি ১০৮ টি শিব মন্দির গড়ে তোলেন।
রাজ বাড়ির বংশধরেরা আজও পুজো চালিয়ে আসছেন। এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ। মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার অভূতপূর্ব নিপুন শিল্পকর্ম দেখা মিলবে।
মন্দিরের সেবাইত পুলক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বর্তমানে রাজ বাড়ির ৮ শরিকে বিভক্ত। প্রত্যেকের নিজ নিজ বাড়িতে কালী পুজো হয়। সেগুলি হল ছয় তরফ, রাজার বাড়ি, মধ্যম বাড়ি, শিকি বাড়ি, চৌকি বাড়ি। এছাড়াও শশ্মান কালীর পুজোও এখানে হয়। রাজা রাঘড় চন্দ্র বাড়ির মোষ বলি বন্ধ হয়ে গেছে বহুদিন আগে। তবে ছয় তরফে এখনও মোষ বলি হয়। প্রথমে মা মৌলিক্ষার কাছে এয়োজা অর্থাৎ কালীপুজোর অনুমতি নিতে যায় সকলে। তখন দিঘির পাড়ে বাজি পোড়ানো হয়। কিন্তু এবার সেই বাজি পোড়ানর অনুমতি মেলেনি”।
Weather forecast- কলকাতায় শীতের আমেজ, বইতে শুরু করেছে উত্তুরে হাওয়া
Local Train Fare-তিনগুণ বেড়ে গেল লোকাল ট্রেনের ভাড়া, হতবাক নিত্যযাত্রীরা
Kalipuja 2021- ধুপধুনোর গন্ধে মা কালীকে অনুভব, বয়রা গাছের নীচে শুরু হল কালীপুজো
তাঁর আক্ষেপ গ্রামে বিদ্যুতের সংযোগ থাকলেও অধিকাংশ সময় আলো জ্বলে না। তবে পুজো দুদিন আলোয় ঝলমল করে গ্রাম।পুজো শুরু হয় রাত্রি ১১ টা নাগাদ। পরের দিন সকলকে মায়ের ভোগ খাওয়ানো হয়। বিকেলে এক সঙ্গে ৮ টি কালীকে নাচাতে নাচাতে মা মৌলিক্ষাকে প্রদক্ষিণ করানো হয়। তারপর সব কালীকে একজায়গায় রাখা হয়। তারপর প্রত্যেক শরিকের নিজস্ব পুকুরে নিরঞ্জন হয়। মধ্যম বাড়ির কালী বিসর্জন হয় বুড়োর পুকুরে। ছয় তরফের মানিক চাঁদ পুকুরে এবং রাজ বাড়ির দিঘিতে।
গ্রামের লোকেরা যারা বিদেশে কর্মরত তারা ছাড়াও বহু বহিরাগত এই পুজো উপলক্ষে মলুটি গ্রামে আসেন। দুর্গা পুজোয় এখানে কোন জাঁকজমক নেই। যা জৌলুস আছে এই কালী পুজোয়”। কথিত আছে মা মৌলিক্ষার মন্দিরে একসময় বামাখ্যাপা দুই বছর যাবৎ মায়ের ফুল তোলার কাজ করেছেন। বামাখ্যাপার ত্রিশূল এখনও গ্রামে বর্তমান। মা মৌলিক্ষার সঙ্গে বামাখ্যাপাও নিত্য পুজো পান।