সংক্ষিপ্ত
দীপাবলির অমাবস্যায় বয়রা কালীমাতার পুজোকে ঘিরে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে কালিয়াগঞ্জ শহরে। টিনের চালার আর বাঁশের বেড়ার মন্দির থেকে আজ বিশালাকার মন্দির তৈরি হয়েছে।
দীপাবলির(Dipabali) অমাবস্যায় বয়রা কালীমাতার (Bayra Kalipuja) পুজোকে ঘিরে হাজার হাজার ভক্তের (Devotees) সমাগম ঘটে কালিয়াগঞ্জ (Kaliaganj) শহরে। টিনের চালার আর বাঁশের বেড়ার মন্দির থেকে আজ বিশালাকার মন্দির (Temple) তৈরি হয়েছে। মৃন্ময়ীর মূর্তির বদলে মায়ের অষ্টধাতুর মূর্তি বসেছে। দীপাবলির রাতে দেবীর সারা অঙ্গ জুড়ে থাকে সোনার অলঙ্কার। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে মন্দির কর্তৃপক্ষ কিংবা ভক্তরা জানিয়েছেন, এখানে মা বয়রা কালীমাতার কাছে মানত করলে তা ফলে যায়। এরফলে মানত পূরণ করতেই হাজার হাজার ভক্ত আসেন পূজো দিতে।
কথিত রয়েছে কালিয়াগঞ্জের শ্রীমতী নদীর ধারে জঙ্গলাকীর্ণ এক বয়রা গাছের নীচে স্থানীয় জেলেরা ভোরবেলা প্রথম দেখতে পায় এক বেদীতে ফুল বেলপাতা পড়ে রয়েছে। চারিদিকে ধুপ ধূনোর গন্ধ। তাঁরা বুঝতে পারে কেউ বা কারা এখানে মা কালীর আরাধনা করেছে। এরপর জেলেরা গিয়ে গ্রামবাসীদের ঘটনার কথা বলে। গ্রামের বাসিন্দারা সেই বয়রা গাছের নীচে শুরু করেন কালীপূজা। সেই থেকে কালিয়াগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এই কালীপুজোর নাম হয় বয়রা কালীর পুজো।
কালিয়াগঞ্জের রাজনন্দিনী পূজোতে শোল, বোয়াল সহ পাঁচ রকমের মাছ ও পাঁচ রকমের সবজি দিয়ে মায়ের ভোগ হয়। কথিত আছে শ্রীমতি নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা আর বজরা নিয়ে দূর দূরান্ত থেকে বানিজ্য করতে আসতেন বনিকেরা। নৌকা নোঙর করে বিশ্রাম নিতেন নদীর ধারে জঙ্গলাকীর্ণ অরন্যে। সেখানেই বয়রা গাছের নীচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এক বনিক। দেবীর স্বপ্নাদেশ পান ওখানেই মূর্তি দিয়ে কালীপুজো করার। সেই বয়রা গাছের তলায় প্রথম পুজো শুরু হয়।সেই পুজোই আজকের উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কালীমন্দির " বয়রা কালীবাড়ি " র পুজো। পরবর্তীতে কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দারা সেই জঙ্গল পরিষ্কার করে তৈরি করে বাঁশ ও মাটির মন্দির।
Weather forecast- কলকাতায় শীতের আমেজ, বইতে শুরু করেছে উত্তুরে হাওয়া
Local Train Fare-তিনগুণ বেড়ে গেল লোকাল ট্রেনের ভাড়া, হতবাক নিত্যযাত্রীরা
এরপর ১৯৬২ সালে তৈরি হয় দেবীর নতুন মন্দির যা আজ বয়রা কালীমন্দির নামে বিখ্যাত। মায়ের মূর্তিও হয়েছে অষ্টধাতুর। দীপাবলির রাতের বয়রা কালীবাড়ির পুজোকে ঘিরে কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট সহ উত্তরবঙ্গের মানুষের আলাদা উন্মাদনা থাকে। কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে দীপাবলির রাতে। দুই-তিন হাজার পাঠাবলি হয়ে থাকে।
কিন্তু করোনা অতিমারি কারনে সরকারি বিধি মেনে সম্পূর্ণ রুপে বলি প্রথা বন্ধ আছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সাধারন মানুষ দাবি করে এসেছে বলি প্রথা বন্ধ করতে। কারোও নিজের মনস্কামনা পুরনোর জন্য নিরীহ প্রাণীকে হত্যা করা ঠিক নয়। করোনা অতিমারি কারনে দীর্ঘদিন ধরে বলি প্রথা বন্ধ থাকায় সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সকলের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে মন্দির কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলিদান প্রথা বন্ধ করার। ফলে গত দুবছর ধরে এই মন্দিরে আর পশুবলি হয় না। এই সিদ্ধান্তে খুশি সকলেই।